ফিরতে চান রোমান পোলনস্কি

যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জেলেসের সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করেছেন রোমান পোলনস্কি
যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জেলেসের সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করেছেন রোমান পোলনস্কি

রোমান পোলনস্কি। একজন অস্কারজয়ী ফরাসি-পোলিশ পরিচালকের নাম। ‘দ্য পিয়ানিস্ট’ কিংবা ‘চায়নাটাউন’ ছবি নির্মাণ করে যিনি নিজেকে কিংবদন্তির পর্যায়ে নিয়ে গেছেন। কিন্তু কিংবদন্তির জীবনেও থাকে কালো অধ্যায়। ২০১৮ সালের একাডেমি অব মোশন পিকচার আর্টস অ্যান্ড সায়েন্সেস থেকে বহিষ্কার করা হয় অস্কারজয়ী চলচ্চিত্র নির্মাতা রোমান পোলনস্কিকে। ওই সময় যুক্তরাষ্ট্রের জনপ্রিয় অভিনেতা বিল কসবিকেও বহিষ্কার করা হয়। একাডেমির পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক বিবৃতিতে তখন বলা হয়েছিল, ‘বোর্ড মানবাধিকারের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। একাডেমির মূল্যবোধকে সমর্থন করে, এমন নৈতিক আদর্শকে উৎসাহিত করতে বোর্ড এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে।’

একাডেমি অব মোশন পিকচার আর্টস অ্যান্ড সায়েন্সেস বরাবর আবেদন করেছেন রোমান পোলনস্কি। সদস্যপদ ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন। ৮৫ বছর বয়সী পরিচালক ও অভিনেতা রোমান পোলনস্কির পক্ষে আপিল করেছেন তাঁর আইনজীবী। যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জেলেসের সুপ্রিম কোর্টে এই আবেদনে বলা হয়েছে, সুপ্রিম কোর্ট যেন মোশন পিকচারকে আদেশ করেন, রোমান পোলনস্কিকে আবার তাদের সদস্য করে নেওয়ার জন্য।

এছাড়া রোমান পোলনস্কির জীবনে ঘটে গেছে একাধিক দুঃখজনক ঘটনা। ১৯৬৯ সালে তাঁর অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী অভিনেত্রী শ্যারন টেইটকে হত্যা করে চার্লস ম্যানসনের অনুসারীরা।

রোমান পোলনস্কি ১৯৭৭ সালে সামান্থা গাইমার নামে ১৩ বছর বয়সী এক শিশুকে ধর্ষণ করেছিলেন। যুক্তরাষ্ট্রের আদালত সেই ঘটনায় তাঁকে কারাদণ্ড দেন। কিন্তু তখন তিনি পালিয়ে অন্য দেশে চলে যাওয়ায় এই রায় কার্যকর করা সম্ভব হয়নি। এরপর তিনি ইউরোপে থেকে চলচ্চিত্র নির্মাণ অব্যাহত রাখেন। ২০০৩ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ওপর নির্মিত ‘দ্য পিয়ানিস্ট’ ছবির জন্য তিনি সেরা পরিচালকের অস্কার পান। কিন্তু পার পননি। পুলিশের হাতে ধরা পড়েন। জেলও খেটেছেন। প্রায় চার দশক ধরে চলছিল এই মামলার কার্যক্রম। মামলা থেকে অব্যাহতি চান পোলনস্কি। শেষ পর্যন্ত ৮৩ বছর বয়সী পোলনস্কি তাঁর অপরাধ স্বীকার করে অনুতাপ করেন। আর তাই সামান্থা তাঁকে ক্ষমা করে দিয়েছেন।

সামান্থা বলেন, ‘তিনি ক্ষমা চেয়েছেন। আমি ক্ষমা করে দিয়েছি। আমি জানি তিনি সত্যিই অনুতপ্ত এবং তিনি আমার কোনো ক্ষতি করতে চাননি। তিনি যা করেছেন, তা তিনি স্বীকার করেছেন।’

সামান্থা তাঁর কষ্ট ভুলে জীবনে সামনে এগিয়েছেন। তিনি চেয়েছিলেন মানুষ শুধু সত্যটা জানুক। নিজের জীবন নিয়ে ২০১৩ সালে ‘দ্য গার্ল: আ লাইফ ইন দ্য শ্যাডো অব রোমান পোলনস্কি’ নামে একটি বই তিনি লিখেছেন। রোমান পোলনস্কি এবার ক্ষমা নিয়ে নতুন করে সামনে এগোতে চান। আর তাই তো একাডেমি অব মোশন পিকচার আর্টস অ্যান্ড সায়েন্সেসের সদস্যপদ ফিরে পেতে চান।

এই আবেদনপত্রে আরও বলা হয়েছে, পোলনস্কির বহিষ্কারাদেশে যথেষ্ট কারণ দেখানো হয়নি। রোমান পোলনস্কির ক্ষেত্রে এই একাডেমি তাঁর নিজের নিয়ম, নীতি আর নিয়মকানুন মানতে ব্যর্থ হয়েছে।

একাডেমিও এই আপিলের বিপরীতে নিজেদের অবস্থান পরিষ্কার করেছে। তাঁরা বলেছে, ‘মি পোলনস্কিকে বহিষ্কার করার প্রক্রিয়া স্বচ্ছ এবং যৌক্তিক। একাডেমি তার যৌক্তিক সিদ্ধান্তে অটল থাকবে।’