সেরা ৫ মডেল যাচ্ছেন সিউলে
ফ্যাশন সচেতন হয়ে উঠছেন তরুণ-তরুণীরা। পেশা হিসেবে তাঁদের অনেকেই বেছে নিতে শুরু করেছেন মডেলিং। বাংলাদেশ এই ক্ষেত্রে এগিয়ে গেল আরও একধাপ। দক্ষিণ কোরিয়ার সিউলে ‘এশিয়া মডেল ফেস্টিভ্যাল’–এ যোগ দেবেন বাংলাদেশের তরুণ মডেলরা।
এ জন্য ‘ফেস অব বাংলাদেশ’ প্রতিযোগিতার মাধ্যমে দেশ থেকে নির্বাচিত করা হয়েছে পাঁচ তরুণ–তরুণীকে। তাঁরা হলেন-চ্যাম্পিয়ন মারুফ রহমান ও শিরিন শীলা এবং রানার আপ মেহেদি হাসান পলাশ ও সাহেলা মজুমদার নিধি। এ ছাড়া পঞ্চম স্থান অর্জনকারী মানসি কান্তা সরকার।
প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে ভালো পারফরম্যান্স করে বিশেষ পুরস্কার পেয়েছেন নাঈমা খন্দকার, মজুমদার নিধি, শাহরিয়ার তানভীর, শিরিন শীলা, মারুফ রহমান। তাঁরা প্রত্যেকেই পাবেন তাঁরা প্রত্যেকে পাবেন ৪৪০ ডলার।
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ঢাকার উত্তরার লা মেরিডিয়ান হোটেলের বলরুমে ‘ফেস অব বাংলাদেশ ২০১৯’-এর গালা রাউন্ড অনুষ্ঠিত হয়েছে। এক মাস দেশের নামকরা মডেলদের কাছে প্রশিক্ষণ ও হাড়ভাঙা গ্রুমিংয়ের পর চূড়ান্ত প্রতিযোগিতায় অংশ নেন বিশ জন তরুণ-তরুণী। গালা রাউন্ডের শুরুতেই কালো টি শার্ট ও ডেনিম পরে র্যাম্পে আসেন প্রতিযোগীরা। পরে তাঁরা র্যাম্পে আসেন ফ্যাশন ডিজাইনার শাহরুখ আমিনের নকশা করা পোশাকে। মেয়েদের পোশাকের মধ্যে ছিল অভিজাত রঙের শর্টটপ-লংস্কার্ট, গাউন ও শাড়ি। আর ছেলেদের ছিল পাঞ্জাবি, শেরওয়ানী, চাদর ইত্যাদি।
অনুষ্ঠানের শুরুতে শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন নাগরিক টেলিভিশনের প্রধান নির্বাহী আবদুন নূর তুষার। তিনি বলেন, ‘সামনের দিনগুলোতে বাংলাদেশ তাঁর অর্জনের সীমানাকে ছাড়িয়ে যাবে। সেটা কেবল অর্থনৈতিক দিক থেকে না, সব দিক থেকে। এই প্রতিযোগিতার মাধ্যমে যারা সিউল যাবে, তারা সেখানে বাংলাদেশের ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রিকে তুলে ধরবে। সব দেশের সঙ্গে নিজেদের ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিকে তুলে ধরবে। আশা করি এই প্রতিযোগিতা বাংলাদেশের ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রিকে এক অন্য উচ্চতায় নিয়ে যাবে।’
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমান বলেন, তরুণদের মধ্যে মডেলিংকে পেশা হিসেবে নেওয়ার প্রবণতা বাড়ছে। এদের দিকে তাকালে বিস্মিত হতে হয়। বাংলাদেশ নানা ক্ষেত্রে জয়ী হয়েছে। এই অর্জনকে অব্যাহত রাখতে তরুণদের সামনে রাখতে হবে। ভবিষ্যতের পথে আলোর দিকে আমাদের যাত্রা। তাই আমরা যা কিছু করি, তরুণদের নিয়ে করার চেষ্টা করি। আমাদের তরুণদের জন্য এ রকম প্রতিযোগিতা একটি বড় সুযোগ।
গালা রাউন্ডে উপস্থিত ছিলেন এশিয়া মডেল ফেস্টিভ্যাল অব কোরিয়ার চেয়ারম্যান ই শি ইয়াং। প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন নাগরিক টেলিভিশনের চেয়ারম্যান রুবানা হক। বক্তব্যে রানাপ্লাজা দুর্ঘটনায় নিহতদের স্মরণ করেন তিনি। ফেস অব বাংলাদেশের উদ্যোগ প্রসঙ্গে রুবানা হক বলেন, বিশ্বের দরবারে বাংলাদেশের ব্রান্ডিংয়ের জন্য যে কোনো উদ্যোগকে স্বাগত জানাব আমরা। সৌন্দর্য শুধু মেক-আপের মাধ্যেমে তৈরি সুন্দর ত্বক থেকে আসে না, সৌন্দর্য মানুষের অন্তর্গত বিষয়।
অনুষ্ঠানে গান করেন সভ্যতা ও তাঁর দল। নাচ করেন পূজা সেনগুপ্ত। গিটার ও স্যাক্সোফোনে ‘সি স’ গানটি বাজিয়ে শোনান রাহিন ও জিশনু। এই প্রতিবেদন লেখার সময় পরিবেশনের অপেক্ষায় ছিলেন জেফার ও আরও অনেকে। ছিল আরও বেশ কয়েকটি ফ্যাশন কিউ।
ফ্যাশন ও মডেলিংয়ের বিশ্বমঞ্চে বাংলাদেশি মডেলদের ঝলমলে উপস্থিতি নিশ্চিত করতে আয়োজন করা হয়েছে ‘ফেস অব বাংলাদেশ ২০১৯’। প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার প্রতিযোগীর মধ্য থেকে এ প্রতিযোগিতার জন্য বেছে নেওয়া হয় এই ২০ জন প্রতিযোগিকে। নানা ধাপ পেরিয়ে গালা রাউন্ডে নির্ধারণ করা হয় দেশের সেরা চার মডেলকে। নিজেদের মেধা, সৌন্দর্য ও ফ্যাশন সচেতনতার পরীক্ষা দিয়ে দেশি ও বিদেশি বিচারকদের কাছ থেকে নম্বর ছিনিয়ে নেন এই প্রতিযোগীরা। নির্বাচিত চার প্রতিযোগী যাবেন দক্ষিণ কোরিয়ায়। হাঁটবেন সেখানে অনুষ্ঠেয় ‘এশিয়া মডেল ফেস্টিভ্যাল’-এর ১৪তম আসরের মূল পর্বের র্যাম্পে। এতে যোগ দেবেন এশিয়ার ২৭টি দেশের শতাধিক প্রতিযোগী।
বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্মকে বিশ্ব ফ্যাশন ও মডেলিং জগতে তুলে ধরার জন্য বাংলাদেশের প্রথম বৈশ্বিক প্ল্যাটফর্ম ‘ফেস অব বাংলাদেশ’। অনুষ্ঠানটির আয়োজনে রয়েছে বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠান ক্রসওয়াক কমিউনিকেশন, নাগরিক টেলিভিশন এবং কোরিয়ার প্রতিষ্ঠান কোরবান কোম্পানি লিমিটেড।
এই আসরে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বিচারক ছিলেন কবি ও কথাসাহিত্যিক আনিসুল হক, রূপসজ্জা বিশেষজ্ঞ কানিজ আলমাস খান, নাগরিক টেলিভিশনের প্রধান নির্বাহী আবদুন নূর তুষার এবং কোরিয়ার পক্ষ থেকে বিচারক হিসেবে থাকছেন জি ইয়াং ইউ, দে জিন মুন ও সিউং কি অন। অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন প্রথম আলোর বিদেশ সংস্করণের সম্পাদক সেলিম খান।
‘ফেস অব বাংলাদেশ ২০১৯’ আয়োজনের সহযোগিতায় রয়েছে প্রথম আলো ডটকম, পারসোনা, ক্যানভাস, মেরিডিয়ান ও এবিসি রেডিও।