ফেস অব বাংলাদেশ ২০১৯

পাঁচ বিজয়ী একসঙ্গে। ছবি: আবদুস সালাম।
পাঁচ বিজয়ী একসঙ্গে। ছবি: আবদুস সালাম।

এপ্রিল শেষের পথে। এ সময় নাকি এপ্রিল ফুল বানানো হয়েছে মানসিকে। দেশসেরা চার মডেলের নাম ঘোষণার পর আকস্মিকভাবে জানানো হলো, কোরীয় বিচারকেরা ভীষণ খুশি। বাদ দেওয়া গেল না মানসি কান্তা সরকারকে। দক্ষিণ কোরিয়ার সিউলে এশিয়া মডেল ফ‍্যাস্টিভ‍্যালে বাংলাদেশের মুখ হিসেবে যোগ দিচ্ছেন পাঁচজন। স‍্যান্ডালিনা প্রেজেন্টস ২০১৯ মডেল ফেস্টিভ্যালের ফেস অব বাংলাদেশ প্রতিযোগিতার মাধ্যমে বেছে নেওয়া হলো তাঁদের।

মঙ্গলবার সন্ধ্যায় রাজধানীর লা মেরিডিয়ান হোটেলের গ্র্যান্ড বলরুমে ছিল ‘ফেস অব বাংলাদেশ ২০১৯’-এর গালা রাউন্ড। এক মাস দেশের নামকরা মডেলদের কাছে প্রশিক্ষণ ও হাড়ভাঙা গ্রুমিংয়ের পর চূড়ান্ত প্রতিযোগিতায় অংশ নেয় ২০ জন তরুণ-তরুণী। প্রায় ৫ হাজার তরুণ-তরুণীর মধ‍্য থেকে বেছে নেওয়া হয় তাঁদের। গালা রাউন্ডের র‍্যাম্পে বিভিন্ন পোশাকে ফ‍্যাশন প‍্যারেডে অংশ নেন তাঁরা। এসব পোশাকের মধ‍্যে ছিল টিশার্ট-ডেনিম, বিভিন্ন ধরনের টপ, স্কার্ট, গাউন, শাড়ি। ছেলেদের পোশাকের মধ‍্যে পাঞ্জাবি, ব্লেজার, শেরওয়ানি, চাদর।

ফেস অব বাংলাদেশ হিসেবে রানার আপ হন মেহেদি হাসান পলাশ ও সাহেলা মজুমদার নিধি। চ‍্যাম্পিয়ন হন মারুফ রহমান ও শিরিন শীলা। পরে পঞ্চম বিজয়ী হিসেবে ঘোষণা করা হয় মানসি কান্তা সরকারের নাম। এ ছাড়া পৃষ্ঠপোষক প্রতিষ্ঠানগুলোর পক্ষে ৪শ ৪০ মার্কিন ডলার পুরস্কার দেওয়া হয় নাঈমা খন্দকার, সাহেলা মজুমদার নিধি, শাহরিয়ার তানভীর, শিরিন শীলা ও মারুফ রহমানকে।

অতিথিদের সঙ্গে বিজয়ীরা। ছবি: আবদুস সালাম।
অতিথিদের সঙ্গে বিজয়ীরা। ছবি: আবদুস সালাম।

অনুষ্ঠানের শুরুতে শুভেচ্ছা বক্তব‍্য দেন নাগরিক টেলিভিশনের প্রধান নির্বাহী আবদুন নূর তুষার। তিনি বলেন, ‘সামনের দিনগুলোতে বাংলাদেশ তার অর্জনের সীমানাকে ছাড়িয়ে যাবে। সেটা কেবল অর্থনৈতিক দিক থেকে না, সব দিক থেকে। এই প্রতিযোগিতার মাধ্যমে যারা সিউল যাবেন, তাঁরা সেখানে বাংলাদেশের ফ‍্যাশন ইন্ডাস্ট্রিকে তুলে ধরবে। সব দেশের সঙ্গে নিজেদের ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিকে তুলে ধরবে। আশা করি এই প্রতিযোগিতা বাংলাদেশের ফ‍্যাশন ইন্ডাস্ট্রিকে এক অন‍্য উচ্চতায় নিয়ে যাবে।’

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমান বলেন, ‘তরুণদের মধ‍্যে মডেলিংকে পেশা হিসেবে নেওয়ার প্রবণতা বাড়ছে। এদের দিকে তাকালে বিস্মিত হতে হয়। বাংলাদেশ নানা ক্ষেত্রে জয়ী হয়েছে। এ অর্জনকে অব‍্যাহত রাখতে তরুণদের সামনে রাখতে হবে। ভবিষ্যতের পথে আলোর দিকে আমাদের যাত্রা। তাই আমরা যা কিছু করি, তরুণদের নিয়ে করার চেষ্টা করি। আমাদের তরুণদের জন‍্য এ রকম প্রতিযোগিতা একটি বড় সুযোগ।’

এশিয়া মডেল ফেস্টিভ্যাল অব কোরিয়ার চেয়ারম্যান ই শি ইয়াং বলেন, ‘এ প্রতিযোগিতার মাধ্যমে বাংলাদেশ থেকে মডেলদের নেওয়ার প্রক্রিয়ায় দুই দেশের সাংস্কৃতিক বিনিময়কে আমি স্বাগত জানাই।

‘ফেস অব বাংলাদেশ ২০১৯’-এর চূড়ান্ত পর্বের পাঁচ বিজয়ী (বাঁ থেকে) মানসী কান্তা সরকার, সাহেলা মজুমদার, শিরিন শীলা (মেয়েদের মধ্যে ১ম), মারুফ রহমান (ছেলেদের মধ্যে ১ম) ও মেহেদী হাসান। গতকাল রাজধানীর লা মেরিডিয়ান হোটেলে।  ছবি: আবদুস সালাম
‘ফেস অব বাংলাদেশ ২০১৯’-এর চূড়ান্ত পর্বের পাঁচ বিজয়ী (বাঁ থেকে) মানসী কান্তা সরকার, সাহেলা মজুমদার, শিরিন শীলা (মেয়েদের মধ্যে ১ম), মারুফ রহমান (ছেলেদের মধ্যে ১ম) ও মেহেদী হাসান। গতকাল রাজধানীর লা মেরিডিয়ান হোটেলে। ছবি: আবদুস সালাম

প্রধান অতিথির বক্তব‍্য দেন নাগরিক টেলিভিশনের চেয়ারম্যান রুবানা হক। বক্তব্যে রানাপ্লাজা দুর্ঘটনায় নিহতদের স্মরণ করেন তিনি। ফেস অব বাংলাদেশের এ উদ‍্যোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বিশ্বের দরবারে বাংলাদেশের ব্র্যান্ডিংয়ের জন‍্য যে কোনো উদ‍্যোগকে স্বাগত জানাব আমরা। তিনি বলেন, সৌন্দর্য শুধু মেকআপের মাধ্যমে তৈরি সুন্দর ত্বক থেকে আসে না, সৌন্দর্য মানুষের অন্তর্গত বিষয়।

অনুষ্ঠানে গান করেন সভ‍্যতা ও তাঁর দল, জেফার, ফাইরুজ। নাচ করেন পূজা সেনগুপ্ত। গিটার ও স‍্যাক্সোফোনে ‘সি স’ গানটি বাজিয়ে শোনান রাহিন ও জিশনু।

ফ্যাশন ও মডেলিংয়ের বিশ্বমঞ্চে বাংলাদেশি মডেলদের ঝলমলে উপস্থিতি নিশ্চিত করতে আয়োজন করা হয়েছে ‘ফেস অব বাংলাদেশ ২০১৯’। নানা ধাপ পেরিয়ে গালা রাউন্ডে নির্ধারণ করা হয় দেশের সেরা পাঁচ মডেলকে। নিজেদের মেধা, সৌন্দর্য ও ফ‍্যাশন সচেতনতার পরীক্ষা দিয়ে দেশী ও বিদেশি বিচারকদের কাছ থেকে নম্বর ছিনিয়ে নেয় এই প্রতিযোগীরা। এ পাঁচ প্রতিযোগী যাবেন দক্ষিণ কোরিয়ায়। হাঁটবেন সেখানে অনুষ্ঠেয় ‘এশিয়া মডেল ফেস্টিভ্যাল’-এর ১৪তম আসরের মূল পর্বের র‍্যাম্পে। এতে যোগ দেবে এশিয়ার ২৭টি দেশের শতাধিক প্রতিযোগী।

ক্যামেরার সামনে ‘ফেস অব বাংলাদেশ ২০১৯‍’-এর বিজয়ীরা। ছবি: আবদুস সালাম।
ক্যামেরার সামনে ‘ফেস অব বাংলাদেশ ২০১৯‍’-এর বিজয়ীরা। ছবি: আবদুস সালাম।

বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্মকে বিশ্ব ফ্যাশন ও মডেলিং জগতে তুলে ধরার জন্য বাংলাদেশের প্রথম বৈশ্বিক প্ল্যাটফর্ম ‘ফেস অব বাংলাদেশ’। অনুষ্ঠানটির আয়োজনে রয়েছে বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠান ক্রসওয়াক কমিউনিকেশন, নাগরিক টেলিভিশন এবং কোরিয়ার প্রতিষ্ঠান কোরবান কোম্পানি লিমিটেড।

এই আসরে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বিচারক ছিলেন কবি ও কথাসাহিত্যিক আনিসুল হক, রূপসজ্জা বিশেষজ্ঞ কানিজ আলমাস খান, নাগরিক টেলিভিশনের প্রধান নির্বাহী আবদুন নূর তুষার ও কোরিয়ার উ জি ইয়ং, মুনদাই জিং ও আনসু কিং। বাংলাদেশে এ প্রতিযোগিতার আয়োজক ক্রসওয়াক কমিউনিকেশন।

‘ফেস অব বাংলাদেশ ২০১৯’ আয়োজনের সহযোগিতায় রয়েছে প্রথম আলো ডটকম, পারসোনা, ক্যানভাস, মেরিডিয়ান ও রেডিও এবিসি।