নাটকে দুই মৃত নারীর গল্পকথন

‘সুতায় সুতায় হ্যানা ও শাপলা’ নাটকের দৃশ্য
‘সুতায় সুতায় হ্যানা ও শাপলা’ নাটকের দৃশ্য

ঢাকার মঞ্চে গতকাল শুক্রবার যুক্ত হলো আরেকটি নতুন নাটক। থিয়েটার আর্ট ইউনিট মঞ্চে এনেছে নাটক ‘সুতায় সুতায় হ্যানা ও শাপলা’। নাটকটি মূলত পৃথিবীর দুই প্রান্তের দুই নারীর উপাখ্যান। হ্যানা বিংশ শতাব্দীর দ্বারপ্রান্তে জন্ম নেওয়া সুইডেনের এক সূচিশিল্পী। অন্যদিকে, শাপলা বাংলাদেশের এক গার্মেন্টসের শ্রমিক। নাটকটি এই দুই মৃত নারীর পরস্পরের গল্পকথন।

গতকাল সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় রাজধানীর নাটক সরণির (বেইলি রোড) মহিলা সমিতি মিলনায়তনে নাটকটির প্রথম মঞ্চায়ন হয়। আনিকা মাহিনের লেখা নাটকটি নির্দেশনা দিয়েছেন রোকেয়া রফিক বেবী।

‘সুতায় সুতায় হ্যানা ও শাপলা’ নাটক শুরু হয় পালা দিয়ে। গায়েন বর্ণনা শুরু করে হ্যানার জীবনগাথা। পাহাড়, হ্রদ আর তুলার মেঘের বর্ণনায় উচ্ছল কিশোরী হ্যানা। কিন্তু হঠাৎ পালার ছন্দপতন ঘটাতে আবির্ভাব হয় শাপলার। শাপলা বলতে শুরু করে তার নিজের গল্প। এবার পালা এগিয়ে চলে দুজনের গল্প নিয়ে।

হ্যানার গল্পটা তার দেশের গল্প। মায়ের গল্প, সূচিকর্মের গল্প, প্রেমের গল্প, শিল্পের জন্য ত্যাগের গল্প। গল্পের একপর্যায়ে হ্যানার প্রেমিকের সঙ্গে বিয়ের কথা পাকাপাকি, বিয়ে নিয়ে সব তোড়জোড়। কিন্তু যখন শুনতে পায় প্রেমিকের মুখে, বিয়ের পর ছেড়ে দিতে হবে তার শিল্পকর্ম, তখন এক কঠিন সিদ্ধান্তের সম্মুখীন হয় হ্যানা। সে সিদ্ধান্ত নেয়, গতানুগতিক জীবন তার জন্য নয়, তার বেঁচে থাকা মায়ের দিয়ে যাওয়া ঐতিহ্য নিয়ে, সূচিকর্ম নিয়ে। শিল্পের প্রতি তার প্রগাঢ় প্রেম তাকে স্থির করে শিল্পের নির্যাস নিয়ে বেঁচে থাকতে।

অন্যদিকে, শাপলার গল্পটা স্থানীয় দর্শকের পরিচিত গল্প। সব হারানোর গল্প, চিরায়ত লোকজ শিল্পের গল্প, ঐতিহ্য হারানোর গল্প, তার শিল্পী পরিচয় হারানোর গল্প। বাবার মৃত্যুর পর অভাবের তাড়নায় সে চলে আসে গ্রাম ছেড়ে শহরে, পেছনে ফেলে আসে তার গ্রাম, তার মা, আর নকশিকাঁথা। ফেলে আসা সুঁই-সুতার বদলে তার আর হাতে উঠে আসে কলের যন্ত্র। শাপলা শিল্পী থেকে হয়ে ওঠে শ্রমিক। নিজ সত্তাকে হারিয়ে শাপলা রূপান্তরিত হয় যন্ত্রে। গল্পের একপর্যায়ে শাপলার জীবনে নেমে আসে ঘোর অমানিশা, অন্ধকার—হঠাৎ মায়ের মৃত্যুসংবাদ বয়ে নিয়ে আসে এক সাদা খাম। এর কিছুদিন পর শাপলা তার শরীরের ভেতর নতুন প্রাণের আভাস টের পায়। বিবাহহীন সম্পর্কের ভেতরে মাতৃত্ব? এই কঠিন প্রশ্ন তাকে ঠেলে নিয়ে যায় আত্মহত্যার পথে। পর মুহূর্তে শাপলা সিদ্ধান্ত নেয় বেঁচে থাকার। তার নিজের জন্য, অনাগত জীবনের জন্য। কিন্তু শেষ রক্ষা হয় না। কারখানার অগ্নিকাণ্ডে শাপলার জীবন শেষ হয়, শেষ হলো শাপলার গল্প।

‘সুতায় সুতায় হ্যানা ও শাপলা’ নাটকটিতে অভিনয় করছেন সুজন রেজাউল, সংগীতা চৌধুরী, মিতালী দাস, মেহমুদ সিদ্দিকী, নূরুজ্জামান বাবু, এস আর সম্পদ, সজল চৌধুরী, আবীর সায়েম, অপ্সরা মৌ। নাটকটির মূল গায়েন সেলিম মাহবুব, গায়েন দলে ছিলেন চন্দন রেজা, কামরুজ্জামান মিল্লাত, আনিকা মাহিন একা, মাহফুজ সুমন। নাটকের মঞ্চ পরিকল্পনা করেছেন আবীর সায়েম। সংগীত পরিকল্পনা করেছেন সেলিম মাহবুব। কোরিওগ্রাফি করেছেন সঙ্গীতা চৌধুরী ও মেহমুদ সিদ্দিকী এবং আলোক পরিকল্পনায় আছেন নাসিরুল হক।