ফুটবলে বড় স্বপ্ন দেখতে সমস্যা হবে না: জয়া

জয়া আহসান
জয়া আহসান
>

২২ এপ্রিল পর্দা উঠেছে বঙ্গমাতা অনূর্ধ্ব-১৯ আন্তর্জাতিক নারী ফুটবল টুর্নামেন্টের। বাংলাদেশের জনপ্রিয় অভিনয়শিল্পী জয়া আহসান এই টুর্নামেন্টের শুভেচ্ছাদূত হিসেবে কাজ করছেন। খেলা শুরুর আগে এই আসরের প্রচারণায় সরব ছিলেন তিনি। উদ্বোধনী দিনে হাজির হয়েছিলেন মাঠে। ফুটবল টুর্নামেন্টে দেশের জনপ্রিয় এই অভিনয়শিল্পীর শুভেচ্ছাদূত হওয়ায় প্রচারের আলোটা বেশিই পড়েছে। অন্যদিকে দেশের এই ফুটবলারদের কাছ থেকে নতুন করে অনুপ্রেরণা খুঁজে পাচ্ছেন জয়া আহসান। মঙ্গোলিয়ার বিরুদ্ধে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় সেমিফাইনালে বাংলাদেশ দল লড়বে। ফুটবল শুভেচ্ছাদূত হওয়ার বিষয়ে অনুভূতি এ ফুটবল নিয়ে নিজের ভাবনার কথা জানালেন তিনি।

ফুটবলের শুভেচ্ছাদূত হয়ে কেমন লাগছে?
বাংলাদেশ দল জয় দিয়ে খেলা শুরু করেছে। মঙ্গলবার সেমিফাইনাল খেলবে। আমি খুবই খুশি। এখন দেখি, কত দূর যেতে পারে।

ফুটবলে আপনার মতো একজনের শুভেচ্ছাদূত হওয়াকে অনেকে ইতিবাচকভাবে দেখছেন। প্রচারের আলোটাও নাকি বেশি পড়েছে? 
বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে) ও কে স্পোর্টস আমাকে প্রস্তাব দেয়। এটা শুধু মেয়েদের ফুটবল। ফুটবল খেলাটা আবার ফিরে আসবে, এ ধরনের কোনো ভাবনা কাজ করেনি। আমার মধ্যে কাজ করেছে সামগ্রিকভাবে মেয়েদের এগিয়ে যাওয়ার ব্যাপারটি। আমাদের মেয়ে ফুটবলাররা যদি ভালো করে, এটা হবে সামগ্রিকভাবে বাংলাদেশের নারীদের এগিয়ে যাওয়ার আরেকটা ধাপ। এ ছাড়া আমাদের মেয়েরা যথেষ্ট পারদর্শীও দেখলাম। মেয়েদের উৎসাহ দিতেই আমি শুভেচ্ছাদূত হয়েছি। ভালো লাগছে। খুব ভালো লাগছে।

বর্তমানে ফুটবলের চেয়ে ক্রিকেটই বেশি গ্ল্যামারাস। আপনারও কি তাই মনে হয়? 
এটা ঠিক, বাংলাদেশের ক্রিকেট এখন অনেক বেশি গ্ল্যামারাস। গ্ল্যামার থাকার কারণ হচ্ছে, এই সেক্টরে অনেক পৃষ্ঠপোষক আছে। এই সময়ে আমার কাছে ফুটবলটা অনেক বেশি অর্গানিক মনে হয়। এখানে যারা আসছে, একান্ত ভালোবাসা ও আগ্রহ থেকে। আমার মনে হয়, বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন এবং কে স্পোর্টস ফুটবল প্রসারে দারুণভাবে কাজ করে যাচ্ছে। যারা খেলছে, তারা সবাই কিন্তু গ্রামের। এই ফুটবল খেলাটাকে মেয়েদের এগিয়ে যাওয়ার খেলা কেন মনে করছি; এই খেলার জন্য সরাসরি একটা গ্রাউন্ড দরকার হয়, প্র্যাকটিস দরকার হয়। আমাদের সমাজ তো খেলাবান্ধব না। বিশেষ করে নারীদের খেলাধুলা করার উপযোগী না আমাদের সমাজ। সেই জায়গা থেকে এই মেয়েগুলো কোথায় কোথায় প্র্যাকটিস করে নিজেদের তৈরি করেছে! কত প্রতিকূল পরিস্থিতি মোকাবিলা করেছে! এটা শারীরিক কসরতের খেলা। শুটিং কিংবা ভারোত্তোলন—এসবে আমাদের মেয়েরা ভালো করলেও ওসব তো ইনডোর গেমস। আউটডোর গেমস হিসেবে ফুটবলেও মেয়েরা ভালো করছে।

ফুটবলের শুভেচ্ছাদূত হয়ে নিশ্চয়ই আপনার অন্য রকম অভিজ্ঞতা হচ্ছে? 
আমি যে কাজগুলো করি, এটি একেবারেই তার বাইরের একটা কাজ। আমাদের মেয়েরা ফুটবল খেলছে, গ্রাম কিংবা মফস্বলের মেয়েরা কী যে সুন্দর খেলছে। খুব ভালো লাগছে। একটা সময় ছিল, মা–বাবারা সিনেমায় অভিনয় করতে দিতেন না। শুটিং করতে দিতেন না। বলতেন, তোমরা পড়ালেখা করো, ডাক্তার হও, ইঞ্জিনিয়ার হও। নিরাপদ একটা ক্ষেত্র বেছে নাও। এখন বাংলাদেশের ফুটবলের যে অবস্থা, বিশেষ করে কোচ হিসেবে মেয়েরা থাকছেন। তাঁরা বেতন পাচ্ছেন। পেশা হিসেবেও নিতে পারেন। ফুটবলে আগ্রহ আছে, তাঁরা জীবিকা হিসেবেও নিতে পারেন। আমি খুব চাই, মেয়েদের বিকল্প জায়গাগুলোতে আরও শক্তিশালী হোক।

একটা সময় আবাহনী ও মোহামেডান খেলা নিয়ে মানুষের ব্যাপক আগ্রহ ছিল। এই খেলা নিয়ে আপনার কোনো স্মৃতি আছে? 
আবাহনী–মোহামেডান খেলা দেখতে যেতে বাবার সঙ্গে ঝগড়া করেছিলাম। কিন্তু হয়নি। তাই ওরকম কোনো স্মৃতি নেই।

ফুটবল নিয়ে কোনো স্বপ্ন দেখেন? 
ফুটবল নিয়ে আমার স্বপ্নের চেয়ে বড় কথা বা বাস্তবতা হলো, আমাদের অনেক বেশি ইনস্টিটিউট খুব প্রয়োজন। একটা সময় ফুটবলেও কিন্তু সোনালি সময় ছিল, যা এখন ক্রিকেটে আছে। অনেক তারকা ফুটবলার আমাদের দেশের মানুষের মনে জায়গা করে নিয়েছেন। আজকে ক্রিকেটারদের জন্য সময়, শ্রম ও অর্থ যেভাবে ব্যয় করা হয়, ফুটবলটাকেও সেভাবে যত্ন করতে হবে। মা–বাবাদের এখন বলতে শুনি, আমার ছেলে বড় হয়ে সাকিব আল হাসান, মাশরাফির মতো হবে। আমি নিশ্চিত যে নারী ফুটবলে আমরা যদি আইকনিক কোনো তারকা তৈরি করতে পারি, একসময় আমাদের বাবা–মায়েরা ফুটবলারদের উদাহরণও সামনে টেনে আনবেন।

পৃষ্ঠপোষক প্রতিষ্ঠানকেও তো নিশ্চয়ই এগিয়ে আসতে হবে?
নিশ্চয়ই। বড় বড় পৃষ্ঠপোষক প্রতিষ্ঠান এগিয়ে এলেই হবে। সেটা শুধু যখন বড় বড় টুর্নামেন্ট হবে তখন নয়। দীর্ঘ মেয়াদে পরিকল্পনা করতে হবে। মেয়েরা যাতে তিন–চার মাস কিংবা পুরো বছর ধরে প্রশিক্ষণ নিতে পারে, তেমন পরিকল্পনা করতে হবে। বড় বড় বিপণন প্রতিষ্ঠান এগিয়ে আসুক। মেয়েরাও কিন্তু ভালো করছে। এদের পেছনে বিনিয়োগ করলে একটা সময় তারা ভালো জায়গায় যেতে পারবে। তৈরি হবে আইকন খেলোয়াড়। ক্রিকেটে সালমা খাতুনকে অনেকে চেনেন। ফুটবল বা খেলাধুলা শুধু একটা শখ নয়, এটা দিয়ে জীবিকাও নির্বাহ করা যায়—এই পেশাদারির ব্যাপারটায় আরও শক্ত অবস্থানে যেতে হবে। শুটিং দিয়ে আমরা এখন জীবিকা নির্বাহ করতে পারি, অভিনয় করাটাকে পেশা হিসেবে নিতে পারি। আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশ দলের প্রত্যেক নারী খেলোয়াড়কে ১০ লাখ টাকা দিয়েছেন—এরা যাতে খেলে এগিয়ে যেতে পারে। প্রধানমন্ত্রী যেভাবে বিবেচনা করেছেন, অন্যদেরও ভাবতে হবে।

বাংলাদেশ দল ফুটবলের ফিফা র‍্যাঙ্কিংয়ে অনেক পিছিয়ে। ব্যাপারটা আপনাকে পীড়া দেয়?
সেটা অবশ্যই পীড়া দেয়। তবে আন্তর্জাতিকভাবে এবার যে টুর্নামেন্ট হচ্ছে, আমার বিশ্বাস, এমনটা চলতে থাকলে ফুটবলে একদিন বড় স্বপ্ন দেখতে সমস্যা হবে না।