থিয়েটার স্কুলগুলো কী করছে

প্রাচ্যনাটের ৩৫তম ব্যাচের শিক্ষার্থীদের প্রযোজনা খোয়াবনামা
প্রাচ্যনাটের ৩৫তম ব্যাচের শিক্ষার্থীদের প্রযোজনা খোয়াবনামা

মঞ্চনাটক চর্চায় ভূমিকা রেখে চলেছে থিয়েটার স্কুলগুলো। হাতে গোনা এই স্কুলগুলো নাটক নিয়ে শুধু প্রশিক্ষণই দিচ্ছে না, মঞ্চে এনেছে বেশ কিছু ভালো নাটকও। বিভিন্ন নাট্যদল নাট্যকর্মীর জোগান দিচ্ছে। তবে স্কুল পরিচালনায় আছে নানা সমস্যা।

থিয়েটার স্কুল থেকে বের হয়ে এখন মঞ্চনাটকে কাজ করছেন সুব্রত মণ্ডল। তিনি বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের চার বছরের পড়ালেখার সুযোগ না পেলেও থিয়েটার স্কুলগুলো থেকে নাট্যশিক্ষার একটা ভালো সুযোগ মেলে।’

নাটকের দল থিয়েটার ১৯৯০ সালে প্রতিষ্ঠা করে ‘থিয়েটার স্কুল’। অধ্যক্ষ রামেন্দু মজুমদার স্মৃতিচারণা করেন, ‘দলের নাট্যকার ও নির্দেশক আবদুল্লাহ আল–মামুন ভারতের দিল্লির ন্যাশনাল স্কুল অব ড্রামা এবং কলকাতার রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের সিলেবাস পর্যালোচনা করে একটা পাঠ্যক্রম তৈরি করেন।’

স্কুলের বর্তমান নাম আবদুল্লাহ আল–মামুন থিয়েটার স্কুল। ছয় মাসের একটি কোর্স এখন চলছে। এখান থেকে বের হয়ে বিভিন্ন থিয়েটারে কাজ করছেন নাট্যকর্মীরা। ৩০ টির মতো প্রযোজনা মঞ্চে এনেছে এটি। এর মধ্যে আছে রক্তাক্ত প্রান্তর, বুড়্ সালিকের ঘাড়ে রোঁ। স্কুলের প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা মিলে তৈরি করেছেন সংগঠন ‘থিয়েটার স্কুল প্রাক্তনী’। এটিও গডোর অপেক্ষায়, প্রথম পার্থ নাটকগুলো মঞ্চে এনেছে।

প্রাচ্যনাটের ‘প্রাচ্যনাট স্কুল অব অ্যাক্টিং অ্যান্ড ডিজাইন’-এ ছয় মাস মেয়াদি কোর্স করানো হয়। গত ১৮ বছরে স্কুলটি এক হাজারের বেশি শিক্ষার্থীকে প্রশিক্ষণ দিয়েছে। প্রতিবছরই এনেছে নিরীক্ষাধর্মী প্রযোজনা। কিনু কাহারের থেটার, লালসালু, দ্য টেম্পেস্ট, বনমানুষ প্রযোজনাগুলো উল্লেখযোগ্য।

নাগরিক নাট্যাঙ্গনের ‘নাগরিক নাট্যাঙ্গন ইনস্টিটিউট অব ড্রামা’য় (এনএনআইডি) প্রতিবছর ছয় মাস মেয়াদের দুটি কোর্স হয়। এখন ২৫ তম ব্যাচে ভর্তি চলছে। স্কুলের চেয়ারপারসন লাকী ইনাম বলেন, ‘চিত্রনাট্য লেখা ও নির্দেশনা ছাড়া স্কুলের প্রযোজনার সব কাজই শিক্ষার্থীরা করে। সব মিলিয়ে স্কুলের কোর্সগুলো খুব উপকারী। অনেকেই আমাদের কাছে নাট্যকর্মী চাইতে আসে।’

বটতলার ‘বটতলা অ্যাক্টরস স্টুডিও’তে ছয় মাসের একটি কোর্সে বিদেশি প্রশিক্ষকেরাও প্রশিক্ষণ দেন। এখান থেকে সময়ের প্রয়োজনে, বন্যথেরিয়াম-এর মতো প্রযোজনা হয়েছে। স্কুলের চিফ ইনস্ট্রাক্টর আলী হায়দার বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যকলা বিভাগের পড়ুয়াদের খুব কমই থিয়েটারে কাজ করে। সে ক্ষেত্রে নতুন অভিনয়শিল্পী তৈরির ক্ষেত্রে স্কুলগুলোর ভূমিকা ব্যাপক।’

‘চারুনীড়ম স্কুল অব অ্যাক্টিং থিয়েটার’ও টেলিভিশন-সিনেমা মাধ্যমের জন্য প্রশিক্ষণ দেয়। তিন মাসব্যাপী একেকটি কোর্স। এখন ৪৩ তম ব্যাচ চলছে। কোর্সের পর চারুনীড়ম থিয়েটারের সদস্য হওয়া যায়। ডেড পিকক, শেষ নবাব এদের উল্লেখযোগ্য প্রযোজনা।

স্কুল পরিচালনার ক্ষেত্রে জায়গা ও অর্থের সংকট বড় সমস্যা। রামেন্দু মজুমদার বলেন, ‘সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে স্কুলগুলোকে যদি সাহায্য করা যায়, তাহলে ভালো হয়। শিক্ষার্থীরা যে টাকা দেয়, তাতে দুই মাসের বেশি চলে না। বাকি টাকা বিভিন্ন জায়গা থেকে সংগ্রহ করতে হয়। ফি বাড়ালে শিক্ষার্থীদের পক্ষে কঠিন হয়ে যায়।’ আর আলী হায়দারের মতে, সরকারি কলেজের সঙ্গে থিয়েটার স্কুলকে সংযুক্ত করা যেতে পারে। অন্তত কলেজের জায়গা যেন থিয়েটার স্কুল ব্যবহার করতে পারে।