'আমার প্রাপ্তি বেশি, বিসর্জন কম'

সুবীর নন্দী। ছবি: প্রথম আলো
সুবীর নন্দী। ছবি: প্রথম আলো
>

গত বছর ২১ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় আনুষ্ঠানিকভাবে দেওয়া হয় ‘১৩তম চ্যানেল আই সংগীত পুরস্কার’। এই পুরস্কারে আজীবন সম্মাননা পান গুণী শিল্পী সুবীর নন্দী। এ প্রসঙ্গ ধরেই সেদিন তাঁর সঙ্গে কথা বলেছিলেন কবির বকুল। সাক্ষাৎকারটি প্রত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছিল। আজ মঙ্গলবার সকালে মারা গেছেন সুবীর নন্দী। তাঁর স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে সাক্ষাৎকারটি আবার দেওয়া হলো।

জীবনে অনেক পুরস্কার পেয়েছেন। তবে ‘চ্যানেল আই সংগীত পুরস্কার’ থেকে জীবনের প্রথম ‘আজীবন সম্মাননা’ পাচ্ছেন। কেমন লাগছে?
পুরস্কার সব সময় চলার গতি বাড়িয়ে দেয়। তবে এই সম্মাননা, আমি বলব আজীবন গান গাওয়ার, বেঁচে থাকার অনুপ্রেরণা। যদিও আমার কাছে মনে হয়েছে, আমি কি এর যোগ্য? আমার চেয়ে অনেক বড় বড় গুণী মানুষ রয়েছেন। তবে এই মুহূর্তে যে বিষয়টি আমার কাছে সবচেয়ে আনন্দের, সেটি হলো এই পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠান হবে আমার জন্মস্থান হবিগঞ্জে। কাকতালীয় হলেও নিজের জন্মস্থানে নিজের মানুষদের সামনে এ রকম একটি সম্মান গ্রহণ আমার জন্য বিশাল প্রাপ্তি।

শিল্পী সুবীর নন্দীর প্রাপ্তির সেই জায়গা থেকে যদি কিছু বলেন।
আমার জীবনে প্রাপ্তি বেশি, বিসর্জন কম। মানুষের অনেক ভালোবাসা পেয়েছি। পাশাপাশি পেয়েছি অসংখ্য স্বীকৃতি। শ্রেষ্ঠ কণ্ঠশিল্পী হিসেবে পাঁচবার পেয়েছি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার (মহানায়ক, ১৯৮৪; শুভদা, ১৯৮৬; শ্রাবণ মেঘের দিন, ১৯৯৯; মেঘের পরে মেঘ, ২০০৪; মহুয়া সুন্দরী, ২০১৫), পাঁচবার পেয়েছি বাচসাস পুরস্কার। এ ছাড়া লন্ডনের ‘হাউস অব কমন্স’-এ ২০০৪ সালে সব সাংসদের উপস্থিতিতে গান করার সৌভাগ্য হয়েছিল। যেখানে প্রথম সেতার বাজিয়েছিলেন পণ্ডিত রবিশঙ্কর। এটাও একটা বড় প্রাপ্তি।

সংগীতপথে আপনার দীর্ঘ চলা। শুরু থেকে যদি একটু জানতে চাই, বলবেন?
আমার শুরুটা হয়েছিল ১৯৬৩ সালে। তখন আমি তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ি। তবে তালিকাভুক্ত হয়ে সিলেট বেতারে আমার প্রথম গান গাওয়া ১৯৬৭ সালে। আমার গানের গুরু ওস্তাদ বাবর আলী খান। লোকগানে বিদিত লাল দাস। ১৯৭২ সাল থেকে ঢাকায় আসা-যাওয়া শুরু করি। আমাকে বাংলাদেশ বেতারে প্রথম গান করার সুযোগ করে দেন মীর কাশেম। তাঁর সুরে মোহাম্মদ মোজাক্কেরের লেখা বেতারে আমার গাওয়া প্রথম গান ‘যদি কেউ ধূপ জ্বেলে দেয়’। চলচ্চিত্রে ১৯৭৩ সালের সূর্যগ্রহণ চলচ্চিত্রে রাজা-শ্যামের সুরে প্রথম গাই ‘দোষী হইলাম আমি দয়াল রে’ গানটি।

ওই সময় রেডিওর শ্রোতাদের কাছে আপনার গাওয়া কোন গান দিয়ে পরিচিতি পায়?
দুটি গান। প্রথমটি নজরুল ইসলাম বাবুর লেখা, শেখ সাদী খানের সুরে ‘হাজার মনের কাছে প্রশ্ন করে’। দ্বিতীয় গানটি মোহাম্মদ রফিকুজ্জামানের লেখা, সত্য সাহার সুরে ‘বন্ধু হতে চেয়ে তোমার শত্রু বলে গণ্য হলাম’।

যে গানটি গত দুদিন ধরে গুনগুন করছেন।
গতকাল রাতে (বুধবার) মান্না দের গাওয়া ‘আমি যে জলসাঘরে বেলোয়াড়ি’ তানপুরা বাজিয়ে গাইলাম। তবে বেশ কদিন ধরে খন্দকার নূরুল আলমের সুরে, মোহাম্মদ রফিকুজ্জামানের লেখা ‘পাহাড়ের কান্না’ গানটি কেন যেন গুনগুন করছি।

দ্বৈত গানের প্রসঙ্গ এলে কোন শিল্পীর নাম বলবেন?
প্রথমেই সাবিনা ইয়াসমীন। তাঁর সঙ্গে অনেক গান গেয়েছি। প্রথম প্লেব্যাক ছিল অশিক্ষিত ছবিতে, সত্য সাহার সুরে, গাজী মাজহারুল আনোয়ারের লেখা, ‘মাস্টার সাব, আমি নাম-দস্তখত শিখতে চাই’। এরপর রুনা লায়লা। তাঁর সঙ্গে আমার গাওয়া প্রথম কীর্তন ঢঙের গান ‘বলো কে-বা শুনেছে এমন পিরিতের কথা’।

আপনার গাওয়া কবি জাহিদুল হকের লেখা, শেখ সাদী খানের সুরে ‘আমার এ দুটি চোখ পাথর তো নয়’ গানটি এই সময়ের কোন শিল্পী গাইলে ভালো গাইবেন?
প্রথমে বলব অপুর নাম। তারপর মুহিন। দুজনই ভালো গাইবে।