সুবীর নন্দীর মরদেহ আসছে কাল

সিঙ্গাপুর থেকে সুবীর নন্দীর মরদেহ আগামীকাল বুধবার সকালে ঢাকায় আনা হচ্ছে। দেশের বরেণ্য এই সংগীতশিল্পীর পরিবারের পক্ষ থেকে জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের জাতীয় সমন্বয়ক সামন্ত লাল সেন প্রথম আলোকে জানান, আগামীকাল সকাল ৬টা ১০ মিনিটে রিজেন্ট এয়ারওয়েজের একটি উড়োজাহাজে সুবীর নন্দীর মরদেহ ঢাকায় এসে পৌঁছাবে। বিমানবন্দর থেকে তাঁর মরদেহ আনা হবে ২৫সি গ্রিন রোডের গ্রিন ভিউ অ্যাপার্টমেন্টে। সেখান থেকে বেলা ১১টায় সর্বসাধারণের শ্রদ্ধা জানানোর জন্য সুবীর নন্দীর মরদেহ নেওয়া হবে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে। এরপর মরদেহ নেওয়া হবে রামকৃষ্ণ মিশনে। দুপুরে সবুজবাগে বরদেশ্বরী কালীমন্দির ও শ্মশানে একুশে পদক পাওয়া সংগীতশিল্পী সুবীর নন্দীর শেষকৃত্য অনুষ্ঠিত হবে।

সুবীর নন্দী আজ মঙ্গলবার ভোররাত সাড়ে চারটায় সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালে মারা যান। গত ৩০ এপ্রিল থেকে তিনি সেখানেই চিকিৎসাধীন ছিলেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে সুবীর নন্দীকে সেখানে নেওয়া হয়।

সুবীর নন্দীর মৃত্যুর খবর শুনে আজ সকালে সংগীতজগতের লোকজন তাঁর গ্রিন রোডের বাসায় ছুটে যান। সেখানে তাঁরা সুবীর নন্দীর প্রতি শেষ শ্রদ্ধা জানানো ব্যাপারে আলোচনা করেন। এই আলোচনায় অংশ নেন সামন্ত লাল সেন, সংগীতশিল্পী রফিকুল আলম ও খুরশীদ আলম, গীতিকার কবির বকুল প্রমুখ।

সুবীর নন্দী। ছবি: সংগৃহীত
সুবীর নন্দী। ছবি: সংগৃহীত

গত ১২ এপ্রিল সুবীর নন্দী পরিবারের সবাইকে নিয়ে মৌলভীবাজারে আত্মীয়ের বাড়িতে যান। সেখানে একটি অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছিলেন তিনি। ১৪ এপ্রিল ঢাকায় ফেরার ট্রেনে ওঠার জন্য বিকেলে মৌলভীবাজার থেকে পরিবারসহ শ্রীমঙ্গলে আসেন। পরে তিনি ট্রেনে অসুস্থ হয়ে পড়লে একজন চিকিৎসকের পরামর্শে সুবীর নন্দীকে নিয়ে পরিবারের সদস্যরা ঢাকার বিমানবন্দর স্টেশনে নেমে যান। ওই দিনই রাত ১১টার দিকে তাঁকে রাজধানীর সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) নিয়ে যাওয়া হয়। পরে তাঁর শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) রাখা হয়। সেখানে তিনি লাইফ সাপোর্টে ছিলেন। সুবীর নন্দী দীর্ঘদিন ধরে কিডনি ও হার্টের অসুখে ভুগছিলেন।

১৮ দিন সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) চিকিৎসাধীন থাকার পর গত ৩০ এপ্রিল সিঙ্গাপুরে নেওয়া হয় সুবীর নন্দীকে। সেদিন বিকেলেই সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালে তাঁর চিকিৎসা শুরু হয়। সিঙ্গাপুর নেওয়ার দুই দিন পর সুবীর নন্দীর শারীরিক অবস্থা কিছুটা উন্নতি হলেও এরপর অবনতি হতে থাকে। সিঙ্গাপুরে চিকিৎসা চলাকালে পরপর তিনবার তিনি হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হন। ঢাকায় চিকিৎসাধীন অবস্থায়ও একবার হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন।

সুবীর নন্দীর জন্ম ১৯৫৩ সালের ৩০ নভেম্বর। তিনি দীর্ঘদিন ব্যাংকে চাকরি করেছেন। ৪০ বছরের সংগীতজীবনে গেয়েছেন আড়াই হাজারেরও বেশি গান। বেতার থেকে টেলিভিশন, তারপর চলচ্চিত্রেও উপহার দিয়েছেন অসংখ্য জনপ্রিয় গান। ১৯৮১ সালে তাঁর প্রথম একক অ্যালবাম ‘সুবীর নন্দীর গান’ বাজারে আসে ডিসকো রেকর্ডিংয়ের ব্যানারে। সুবীর নন্দী প্রথম গান করেন ১৯৭৬ সালে আবদুস সামাদ পরিচালিত ‘সূর্যগ্রহণ’ চলচ্চিত্রে। চলচ্চিত্রে প্লেব্যাক করে চারবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেছেন তিনি। আর চলতি বছরে সংগীতে অবদানের জন্য বাংলাদেশ সরকার দেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা একুশে পদকে ভূষিত করেছে কণ্ঠশিল্পী সুবীর নন্দীকে।