কেমন সিনেমা টানে দর্শকদের

আয়নাবাজি, ঢাকা অ্যাটাক ও দেবী সিনেমার পোস্টার
আয়নাবাজি, ঢাকা অ্যাটাক ও দেবী সিনেমার পোস্টার

অ্যাভেঞ্জার্স: এন্ডগেম ছবির টিকিট কিনতে হবে। ভোর থেকে দীর্ঘ সারিতে দাঁড়িয়ে ছিলেন ঢাকার তরুণেরা। অথচ একই সময়ে বাংলাদেশি সিনেমার টিকিটঘরগুলো ছিল শূন্য। তবে দেশের কোনো কোনো সিনেমার ক্ষেত্রে উপচে পড়া ভিড়ের খবর পাওয়া যায় মাঝেমধ্যে। একটি ছবির জন্য উপচে পড়া ভিড়ের পর আরেকটির ভিড়ের জন্য প্রেক্ষাগৃহের মালিকদের অপেক্ষা করতে হয় মাসের পর মাস। কখনো বছরও।

অনেকে মনে করেন, বাংলাদেশে এখন আর আগের মতো সিনেমা তৈরি হচ্ছে না, তাই দর্শকেরাও ভিড় করছেন না প্রেক্ষাগৃহে। এমনটা চলতে থাকলে নিকট ভবিষ্যতে বাংলা সিনেমার অবস্থা হবে আরও করুণ। চলচ্চিত্রসংশ্লিষ্ট কেউ কেউ মনে করছেন, কপি–পেস্ট আর ফর্মুলা ছবির ভাবনা থেকে বের হয়ে নিজস্বতা আনতে পারলে দেশের সিনেমাও দর্শক টানতে পারবে। সম্প্রতি বাংলাদেশের কয়েকটি সিনেমা নিয়ে দর্শকের আগ্রহ ছিল তুঙ্গে। বহুদিন পর দেশের মানুষ সপরিবারে প্রেক্ষাগৃহে ছুটেছেন আয়নাবাজি, ঢাকা অ্যাটাক বা দেবী দেখতে।

আয়নাবাজি সিনেমার পরিচালক অমিতাভ রেজা চৌধুরী মনে করেন, ছবি ভালো হলে প্রেক্ষাগৃহে দর্শক যাবে। না হলে যাবে না। তিনি বলেন, ‘আমরা নিজেরা কোনো সিনেমা কি আগ্রহ নিয়ে দেখেছি? আমরাই যখন আগ্রহ নিয়ে ছবি দেখি না, দর্শক কেন আসবেন? দর্শক তো আমাদের মতোই মানুষ। সুতরাং যে সিনেমা আমি দেখতে যাচ্ছি না বা যেটা আমাকে টানছে না, মানে সেটা ভালো সিনেমা হয় না।’

কেমন সিনেমা দর্শক টানতে পারে? এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘সিনেমায় একটা গল্প ঠিকমতো বলতে হবে। যে গল্পটা আধুনিক সমাজ, আমাদের চারপাশের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হবে। বিশ্বাসযোগ্য হতে হবে। ছবির মধ্যে এমন কিছু একটা থাকতে হবে, যেটা দর্শককে আনন্দিত করে, বিনোদিত করে। ভালো ছবি তৈরি হয়েছে, কিন্তু প্রেক্ষাগৃহে সেটা চলেনি, সে রকম রেকর্ড আমাদের নেই।’

বিনোদনের জায়গাটাকে একটা বড়সড় দোকান মনে করেন বরেণ্য অভিনেত্রী কবরী। সেখানে যেমন ভালো সিনেমা থাকবে, তেমনি কম ভালো সিনেমাও থাকবে। তিনি বলেন, ‘দেশে এখন অনেক টেলিভিশন চ্যানেল। বিনোদনের অনেক মাধ্যম। তাই সিনেমার গুণগত মান বাড়ানো দরকার। ছবির গল্পের দিকটায় জোর দিতে হবে। ছবির গান যেন অর্থবহ হয়, মানুষের মুখে মুখে ফেরে। জনগণকে ‘ভালো সিনেমা বানিয়েছি, আসুন, দেখুন’—এসব বলে টেনে আনা যাবে না। আমাদের দেশের বেশির ভাগ সিনেমাই দক্ষিণি কিছু ছবির কপি–পেস্টের সংকলন। দর্শকেরা মূল ছবিগুলো দেখে। কপি–পেস্ট কেন দেখবে?’

দেবী ছবির পরিচালক অনম বিশ্বাস বলেন, ‘আমরা এখন অস্থির সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। এখন চ্যালেঞ্জ অনেক বেশি। এ সময়ে দর্শকদের মনোযোগ পাওয়া সহজ না। পেলে ধরে রাখাও কঠিন। তাই গল্পের মধ্যে “হুক” থাকতে হবে, গল্পটা তাঁকে যেন ভাবায়। আমাদের এখানে চিত্রনাট্য শক্তিশালী হয় না, তাই দর্শক আগ্রহভরে পরের দৃশ্যের জন্য অপেক্ষা করে না। এ ছাড়া চলচ্চিত্রের বিপণন কৌশলকেও গুরুত্ব দিতে হবে, যেন দর্শকেরা ছবিটি দেখতে আগ্রহী হয়।’

ঢাকা অ্যাটাক সিনেমা দিয়ে বাজিমাত করেছেন দীপঙ্কর দীপন। তিনি বলেন, ‘সিনেমায় চিত্রনাট্যের অভাব। এখন কিন্তু ছবির ধরন বদলে গেছে। গল্প বলার আধুনিক কৌশল জানা জরুরি। এই কৌশল লেখার মতো লেখক আমাদের দেশে কম। টেলিভিশনে ভালো কিছু লেখক পাওয়া যায়। কিন্তু দেড় বা দুই ঘণ্টার গল্প বলতে গিয়ে আর এগোতে পারেন না।’

সাংস্কৃতিক বিশ্লেষক সুমন রহমান মনে করেন, ‘ভালো ছবিই দর্শক টানার প্রধান শর্ত। ভালো ছবির ক্ষেত্রে সমসাময়িক সময়ের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করতে পারাটা জরুরি। আয়নাবাজি তা পেরেছে কৌশলে, গল্প বলার ধরনে এবং কাস্ট দিয়েও পেরেছে। শহুরে গল্পের কথা বাদ দিলে মনপুরার কথা বলতে পারি, সুন্দর নির্মাণ ছিল, যার সঙ্গে মানুষ রিলেইটও করতে পারে।’