অনেক ভালোবাসি আম্মু তোমায়

২০১৬ সালের মা দিবসে ‘গরবিনী মা’ সম্মাননা গ্রহণ করছেন অপূর্বর মা ফিরোজা বেগম । ছবিতে (বাঁ থেকে) অপূর্ব, তাঁর মা, প্রয়াত মেয়র আনিসুল হক ও ডা. আশীষ কুমার চক্রবর্তী। ছবি: সংগৃহীত
২০১৬ সালের মা দিবসে ‘গরবিনী মা’ সম্মাননা গ্রহণ করছেন অপূর্বর মা ফিরোজা বেগম । ছবিতে (বাঁ থেকে) অপূর্ব, তাঁর মা, প্রয়াত মেয়র আনিসুল হক ও ডা. আশীষ কুমার চক্রবর্তী। ছবি: সংগৃহীত
মায়ের প্রতি সন্তানের ভালোবাসা প্রতিদিনের, প্রতিক্ষণের। তবু মে মাসের দ্বিতীয় রোববার বিশ্বজুড়েই পালন করা হয় মা দিবস। ১২ মে এবারের মা দিবস। এর আগে মায়ের উদ্দেশে চিঠি লিখেছেন অভিনেতা অপূর্ব
অপূর্ব
অপূর্ব

আম্মু,
আমার সালাম নিয়ো। নিশ্চয়ই আল্লাহর অশেষ রহমতে তুমি ভালো আছ। এই চিঠি যখন তুমি পড়বে, তখন হয়তো আমি তোমার পাশেই আছি, নয়তো আমি তোমার থেকে অনেক দূরে। বুকের ভেতরে জমানো অনেক কথাই আসলে তোমাকে বলার সময়–সুযোগ হয়ে ওঠে না। কারণ, তোমার সেই ছোট্ট অপু যে আর ছোট্ট নেই। বড় হয়ে গেছে, তার কর্মের পৃথিবীতে সে অনেক ব্যস্ত হয়ে গেছে। তাই এখন প্রাণ খুলে সময় নিয়ে তোমার সঙ্গে গল্প করা হয় না, আড্ডাও দেওয়া হয় না। কিন্তু আমি জানি, তুমি আমার এই না–বলা কথাগুলো নিজে থেকেই বুঝে নিয়ে আমারই কল্যাণের জন্য, আমার সাফল্যের জন্য তুমি মন থেকে দোয়া কোরো। কারণ, আমি বুঝি তোমার অপুকে তুমি কতটা ভালোবাসো।

ভালোবাসো বলেই এখনো ঘর থেকে বের হওয়ার আগে প্রতিদিন সকালের চা তুমি নিজ হাতে তৈরি করে দাও। আমি সেই চা তৃপ্তি নিয়ে পান করে বের হই কাজে। চা পান করতে করতেই যে সময়টুকু তোমার পাশে বসে থেকে গল্প করি, তার মধ্যে প্রয়োজনীয় কথাই বেশি থাকে। আমি কেমন আছি কিংবা তুমি কেমন আছ মা, সেসব কথার আশপাশেও যাওয়া হয়ে ওঠে না।

আজ বড্ড জানতে ইচ্ছা করছে, তুমি কেমন আছ, আম্মু? আমাকে নিয়ে কোনো রকম কষ্ট নেই তো তোমার? হয়তো আমি বড় হয়ে গেছি, কিন্তু আমি তোমার কাছে এখনো সেই ছোট্ট অপুটিই আছি। আমার কাছে আমার সন্তান আয়াশ যেমন, তোমার কাছে সারা জীবন আমি তেমনই থাকতে চাই। তোমার ভালোবাসা, আদরের মধ্যেই থাকতে চাই। আমি জানি, তুমি তোমার আশীর্বাদের ছায়াতলে আমাকে রেখেছ। আমি এটাও জানি, আমি যদি কোনো ভুল করে ফেলি, তাহলে তুমি তা তোমার সন্তান ভেবেই আমাকে ক্ষমা করে দেবে। কারণ, তুমি যে আমার মা।

আম্মু, তোমার মনে আছে, মিরপুরে যখন আমি বশির উদ্দিন স্কুলে অষ্টম শ্রেণিতে পড়তাম, তখন ক্লাস থ্রি আর ক্লাস ফোরের দুটি ছেলেমেয়েকে আমি ছবি আঁকা শেখাতাম। তাদের আর্ট শেখানোর কারণে পাওয়া প্রথম বেতনের টাকা দিয়ে তোমাকে ইমিটেশনের গয়না কিনে দিয়েছিলাম। তোমার সেই আনন্দিত, উচ্ছ্বসিত মুখখানি এখনো আমার চোখে ভাসে।

আম্মু, তোমার শতভাগ উৎসাহে, অনুপ্রেরণায় আমি আজ এ দেশের দর্শকের ভালোবাসার একজন অভিনেতায় নিজেকে পরিণত করেছি। তোমার সর্বাত্মক সহযোগিতা না থাকলে এটা কখনোই সম্ভব হতো না। তোমার ব্যস্ততার পরও আমার অভিনীত প্রতিটি নাটক দেখে দেখে আমাকে এখনো যেভাবে অনুপ্রাণিত করো, সেটাই আমার জন্য অনেক আশীর্বাদ। আমি এই সৌভাগ্যবান ছেলে, যে ছেলে মায়ের পছন্দের স্ক্রিপ্টে কাজ করতে ভালোবাসে। আমি সব সময়ই চেষ্টা করি বাসাতে আসা তোমার পড়া, তোমার পছন্দের স্ক্রিপ্টে কাজ করতে।

আম্মু, আমি বয়সে বড় হয়েছি, আমার ব্যস্ততা বেড়েছে। আমার পৃথিবীটা বড় হচ্ছে, আর কেন জানি হঠাৎ হঠাৎ মনে হয় তোমার কাছ থেকে দূরে সরে যাচ্ছি। আমার প্রতিটি দিনের শুরুটা হয় আয়াশের মুখের দিকে তাকিয়ে। তোমার জীবনেরও এমন দিন গেছে, আমার মুখের দিকে তাকিয়েই তোমার দিন শুরু হতো। ঘুমোতে যাওয়ার আগে আমারই মুখখানা দেখতে, যেমনটা আমার এখন হয় আয়াশের ক্ষেত্রে। আয়াশও একদিন বড় হবে, সে তার আপন পৃথিবী গড়ে নেবে। বাপ-বেটার দেখা হবে কম, কথা হবে কম। কিন্তু এ যে রক্তের সম্পর্ক। এই সম্পর্ক কোনো দিনও ছিন্ন হওয়ার নয়, দূরে সরে যাওয়ার নয়। ঠিক তেমনি, আম্মু, একই ঘরে বসবাস করে তোমার সঙ্গে হয়তো আমার কথা হচ্ছে কম, দেখা হচ্ছে কম। কিন্তু ভালোবাসা তোমার জন্য বুকের গভীরেই আছে, সেই ভালোবাসার কোনো তুলনা হয় না। সেই ভালোবাসার সব সময় বহিঃপ্রকাশ হয় না।

অনেক ভালোবাসি আম্মু তোমায়। তুমি শুধু তোমার অপুর জন্য দোয়া কোরো, যেন আমি আমৃত্যু তোমার সেবা করে যেতে পারি। ভালো থেকো, আম্মু।

ইতি

তোমারই অপু (অপূর্ব)