নায়িকা মা সংসারে কী করেন?

>

নায়িকাদের নাকি ‘মা’ হতে মানা। না পর্দায়, না বাস্তবে। আর সেই নায়িকা যদি হন বলিউডের, তাহলে তো কথাই নেই। চিত্রজগতের চিরকালীন অলিখিত সূত্র, মা হওয়া মানে ক্যারিয়ার ‘পড়ে’ যাওয়া। কিন্তু সেই সূত্রকে বৃদ্ধাঙ্গুল দেখিয়ে মা হয়েছেন বলিউডের অনেক হার্টথ্রব। নায়িকা হয়ে মা হয়েছেন, মা হয়ে নায়িকা হয়েছেন। আবার মা আর নায়িকা, দুটোই চালিয়েছেন সমান তালে। আজ মা দিবসে বলিউডের কয়েকজন মাকে নিয়ে এই আয়োজন।

কারিনা কাপুর খান এখন তৈমুরের মা
কারিনা কাপুর খান এখন তৈমুরের মা

কারিনা কে? ‘তৈমুরের মা’
কারিনা কাপুর খান। তিনি বলিউডের এ সময়ের অন্যতম জনপ্রিয় তারকা। কিন্তু তা থেকে বড় পরিচয়, তিনি বলিউডের সবচেয়ে জনপ্রিয় বাচ্চা তৈমুর আলী খানের মা। কতটা জনপ্রিয়? যদি মা আর ছেলের ভেতর জনপ্রিয়তার পরীক্ষা হয়, তাহলে চোখ বন্ধ করে বলে দেওয়া যায়, জিতবে তৈমুর। আর এই তথ্যের উৎস? স্বয়ং কারিনা!
তৈমুরকে তাই কারিনার ছেলে না বলে কারিনাকে তৈমুরের মা বলাই অধিক যৌক্তিক। তৈমুরকে কোলে নিয়ে শুটিংয়ে যান এই মা। এমনকি পার্টিতেও মায়ের কোলে বসে জুস খান তৈমুর। কিছুদিন আগে বোন কারিশমা বলেছেন, দুর্দান্ত মা কারিনা। শুধু বোন কেন, বলিউডের শত্রুও এটি মানবেন। অভিনেত্রী হিসেবে কারিনা কেমন, সে বিষয়ে দু-একজন অন্য কথা বললেও মা হিসেবে কারিনা যে দশে দশ, সে বিষয়ে কেউ দ্বিমত করবেন না।
কারিনা যখন তৈমুরকে জন্ম দেন, তখন তিনি খুবই চিন্তিত ছিলেন, তাকে কীভাবে থেকে রক্ষা করবেন, বাঁচিয়ে রাখবেন। মা কারিনার মতে, ‘আমাদের সবাইকে তাঁদের মায়েদের ফোন করা উচিত, তাঁকে জড়িয়ে ধরা উচিত।’ এমনটাই তিনি তাঁর সন্তানের কাছ থেকে আশা করেন। হিউম্যানস অব বোম্বের জন্য মাতৃত্ব নিয়ে কারিনা সম্প্রতি ফেসবুকে পোস্ট করেছেন, ‘আমার সঙ্গে এ পর্যন্ত যা ঘটেছে, এর ভেতর মাতৃত্বই সবচেয়ে সেরা। তৈমুর আমার অংশ। আমি তাকে ছাড়া এক ঘণ্টাও থাকতে পারি না। আমি যেখানেই থাকি না কেন, ও আমার সঙ্গে থাকে। সে প্রতিদিন আমাকে আগের দিনের চেয়ে আরও বেশি পরিশ্রম করতে অনুপ্রাণিত করে।’

আরাধ্যকে নিয়ে নিজস্ব জগৎ গড়ে তোলেন ঐশ্বরিয়া রাই বচ্চন
আরাধ্যকে নিয়ে নিজস্ব জগৎ গড়ে তোলেন ঐশ্বরিয়া রাই বচ্চন

ঐশ্বরিয়ার পৃথিবীর নাম আরাধ্য
সাবেক বিশ্বসুন্দরী ও বলিউডের জনপ্রিয় তারকা ঐশ্বরিয়া রাই বচ্চন মা হয়েছেন ২০১১ সালের নভেম্বরে। এরপরই বলিউড থেকে নিজেকে গুটিয়ে নেন তিনি। একমাত্র মেয়ে আরাধ্যকে নিয়ে নিজস্ব জগৎ গড়ে তোলেন। সব সময় মেয়ের কাছাকাছি থাকার চেষ্টা করেছেন। গত বছর আজকের দিনে অর্থাৎ মা দিবসে কানের লাল গালিচায় হেঁটেছেন এই মা মেয়ে। ২০১২ সাল থেকে আরাধ্যর কানে যাওয়া। ঐশ্বরিয়া এমনিতেই অনুষ্ঠানে যাওয়া একেবারে কমিয়ে দিয়েছেন। এরপরও যেখানেই যান, সঙ্গে থাকে মায়ের এই নেওটা। আরাধ্যকে স্কুলে নিয়ে যাওয়া-আসার কাজও নিজেই করেন। সম্প্রতি গুঞ্জন উঠেছে, আবারও নাকি মা হতে চলেছেন ঐশ্বরিয়া। তবে বচ্চন পরিবার সেই গুজব উড়িয়ে দিয়েছে।

রানী মুখার্জির সব মনোযোগ কেড়ে নেয় আদিরা
রানী মুখার্জির সব মনোযোগ কেড়ে নেয় আদিরা

রানীকে বদলে দিয়েছে আদিরা
২০১৫ সালের ৯ ডিসেম্বর বদলে যান রানী মুখার্জি। কারণ, সেদিন তাঁর কোলজুড়ে আসে আদিরা, যে সাতবার ফিল্মফেয়ার পাওয়া নায়িকাকে দিয়েছে মা হওয়ার স্বাদ। এরপর বলিউড থেকে চোখ ফিরিয়ে সেই মেয়েটি রানীর সব মনোযোগ কেড়ে নেয়। আদিরার জন্মের পর রানী মুখার্জি যতবার শুটিংয়ে এসেছেন, প্রতিবারই সন্তানকে সঙ্গে নিয়ে এসেছেন। নয়তো শুটিং সেটে তাঁর মন থাকত আদিরার কাছে। শুধু মনে হতো, কখন ঘরে ফিরবেন আর দেখবেন সন্তানকে।

রাভিনা ট্যান্ডনের মতে, মায়ের চাকরি নাকি সবার সেরা
রাভিনা ট্যান্ডনের মতে, মায়ের চাকরি নাকি সবার সেরা

মা হওয়া সেরা চাকরি
দুনিয়ার বুকে কত ধরনের চাকরি রয়েছে। বলিউডের সাবেক তারকা রাভিনা ট্যান্ডনের মতে, মায়ের চাকরি নাকি সবার সেরা। একটা নয়, দুটা নয়, চার সন্তানের মা জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পাওয়া এই অভিনেত্রী। তিনি বলেন, ‘আমার মনে হয়, আমি পুরোদস্তুর মা। আমি আমার সন্তানদের সঙ্গে সময় কাটাতে ভালোবাসি। তাদের প্রতিদিন স্কুলে নিয়ে যাই, স্কুল থেকে নিয়ে আসি।’ দুবার ফিল্মফেয়ার পুরস্কারজয়ী রাভিনা ১৯৯৫ সালে দুই কন্যা সন্তানকে দত্তক নেন। আর তা নাকি রাভিনার জীবনের শ্রেষ্ঠ সিদ্ধান্ত।
দত্তক নেওয়ার সময় পূজার বয়স ছিল ১১ আর ছায়ার ৮। রাভিনা যখন তাঁদের দত্তক নেন, তখন ‘একা মা’ (সিঙ্গেল মাদার) সম্বন্ধে কারও পরিষ্কার ধারণা ছিল না। নয় বছর পর ২০০৪ সালে চলচ্চিত্র পরিবেশক অনিল ঠান্ডানিকে বিয়ে করেন রাভিনা।
একবার এক বাড়িওয়ালা কোনো পূর্বঘোষণা ছাড়াই ৩১ জন মেয়েকে বাড়ি থেকে বের করে দেন। তা জানার পরই রাভিনা তাঁদের সবাইকে নিজের বাড়িতে আশ্রয় দেন। তাঁরা এখন বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত। রাভিনাকে নিয়মিত চিঠি লেখেন সেই মেয়েরা। আর রাভিনার কাছে তা নিঃশর্ত ভালোবাসা।

সোহা আলী খানের ভাষায়, ‘ইনায়া যেখানে, আমার মনও থাকে সেখানে।’
সোহা আলী খানের ভাষায়, ‘ইনায়া যেখানে, আমার মনও থাকে সেখানে।’

মা হওয়া ‘ওয়াও’
বলিউডপাড়ার একটা আদুরে বাচ্চার নাম ইনায়া নাওমি খেমু। ২০১৭ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর জন্ম নেওয়া এই পুঁচকে নাকি তাঁর অক্সফোর্ড পড়ুয়া মায়ের দিন, মন-মেজাজ নিয়ন্ত্রণ করছে। সোহা আলী খানের ভাষায়, ‘ইনায়া যেখানে, আমার মনও থাকে সেখানে। সে-ই আমার সবকিছু। মা হওয়া এক অবিশ্বাস্য যাত্রা! এর বাঁকে বাঁকে অবশ্যই বলতে হবে, ওয়াও! ভাবতে কী অদ্ভুত লাগে, আমি একটা জীবন দিয়েছি। এর চেয়ে রোমাঞ্চকর অনুভূতি আর কী হতে পারে!’

জুহি চাওলা বলেন, ‘আমি মায়ের সংজ্ঞা দিতে পারব না। শব্দ দিয়ে মাকে বাঁধতে পারব না।’
জুহি চাওলা বলেন, ‘আমি মায়ের সংজ্ঞা দিতে পারব না। শব্দ দিয়ে মাকে বাঁধতে পারব না।’

‘মা কী’ তা অনুভব করেন জুহি চাওলা
দুই সন্তানের মা জুহি চাওলা যখন প্রাগে শাহরুখ খানের সঙ্গে ‘ডুপ্লিকেট’ (১৯৯৮) ছবির শুটিংয়ে ব্যস্ত, তখন তাঁর মা বাসা থেকে হাঁটতে বের হন। তিনি আর ফিরে আসেননি। চলে যান না ফেরার দেশে। মাকে হারানো আর মা হওয়ার পর জুহি চাওলা বুঝতে পেরেছেন, মা কী। তিনি বললেন, ‘যদি কোনো দিন কোথাও আমার মায়ের সঙ্গে দেখা হয়ে যায়, তাঁকে অনেক জোরে জড়িয়ে ধরব, কাঁদব আর তাঁর কোলে মাথা রেখে বলব আমি তাঁকে কতটা ভালোবাসি।’
জাহ্নবী (জন্ম ২০০১) আর অর্জুনের (জন্ম ২০০৩) মা জুহি চাওলাকে জিজ্ঞেস করা হয়, মা কী? উত্তরে জুহি চাওলা বলেন, ‘আমি মায়ের সংজ্ঞা দিতে পারব না। শব্দ দিয়ে মাকে বাঁধতে পারব না। তবে আপনি যখন মাকে হারাবেন, তখন বুঝতে পারবেন, মা কী। যখন সন্তান জন্ম দেবেন, তখন বুঝবেন, মা কী। এটা একটা অনুভূতি। আর তা সৃষ্টিকর্তাপ্রদত্ত।’

মা হিসেবে কাজল খুব কড়া
মা হিসেবে কাজল খুব কড়া

কাজলের দুই হাত নিসা আর যুগ
ক্যারিয়ারের যখন একেবারে উঠতি সময়, সেই ১৯৯৯ সালে সবার নিষেধ অমান্য করে কাজল বিয়ে করেন অজয় দেবগনকে। সফল ক্যারিয়ার ফেলে ব্যস্ত হয়ে পড়েন মেয়ে নিসা আর ছেলে যুগকে নিয়ে। সবার ধারণা ভুল প্রমাণ করে আবার ফিরে আসেন ফিনিক্স পাখির মতো। ‘ইউ মি অউর হাম’, ‘মাই নেম ইজ খান’, ‘ফানাহ্‌’, ‘উই আর ফ্যামিলি’—এই জনপ্রিয় ও ব্যবসাসফল ছবিগুলো কিন্তু মা কাজলের। কাজল মনে করেন, মাতৃত্ব তাঁর দৃষ্টিভঙ্গি বদলে দিয়েছে। এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘মাতৃত্ব আমাকে সহনশীল করেছে। মা হয়ে আমি আরও বেশি ধৈর্যশীল আর সংবেদনশীল হয়েছি। আমার দুই সন্তান আমার দুই হাত।’
বড় পর্দায় নায়কের জন্য কাজল যত ছাড় দিন না কেন, মা হিসেবে কাজল খুব কড়া। দুই সন্তানের জন্য রীতিমতো সংবিধান তৈরি করেছেন তিনি। এমনকি সন্তানেরা কোন প্রোগ্রাম দেখবে আর কোনটি দেখবে না, সেই তালিকাও টাঙিয়ে রেখেছেন। তাই এক সাক্ষাৎকারে তিনি মজা করে বলেন, ‘আমি গর্ব করে বলতে পারি, আমার সন্তানেরা আমার ৭০% কথা শোনে, বাকি ৩০% আপসের জন্য রাখা।’

সামিরার মতে, মা হওয়া একজন নারীর জীবন-পরিবর্তনকারী সিদ্ধান্ত।
সামিরার মতে, মা হওয়া একজন নারীর জীবন-পরিবর্তনকারী সিদ্ধান্ত।

সামিরার সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি মা হওয়া
চোখের আড়াল মানে মনের আড়াল। সেই যে ২০১৩ সালে কন্নড় ভাষার ছবি ‘ভারাঢানায়াকা’য় সর্বশেষ দেখা গেছে তাঁকে। এরপর হাওয়া। পুরো হাওয়ায় মিলিয়ে গেছেন বললেও ভুল হবে। মাঝে মাঝে ইনস্টাগ্রামে দেখা মেলে এই বলিউড অভিনয়শিল্পীর। সেসব ছবিতে প্রায়ই দেখা যায় আরও একজনকে। সে তাঁর ছেলে।
সামিরার মতে, মা হওয়া একজন নারীর জীবন-পরিবর্তনকারী সিদ্ধান্ত। এটা একটা শারীরিক, মানসিক ও মনস্তাত্ত্বিক অভিজ্ঞতা। যেখানে অনেক আত্মত্যাগ থাকে। কিন্তু দিন শেষে এটি জীবনের সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি। মা হয়ে অনেকে কেন কাজ ছেড়ে দেন? এমন প্রশ্নের উত্তরে সামিরা জানান, ‘এটা একজন মানুষের ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত। এটাকে গুরুত্ব দেওয়ার কিছু নেই। কেউ সেখানে প্রশ্ন তুলতে পারেন না। ঘরের মা ততটাই সম্মানের যোগ্য, যতটা একজন কর্মজীবী মায়ের প্রাপ্য।’

হলিউড, বলিউড বা আপনার পাশের বস্তির জামালের মা, তাঁদের সামাজিক মর্যাদা যা-ই হোক না কেন, মা হিসেবে তাঁরা প্রত্যেকে সমান। তাই তো বলা হয়, পৃথিবীতে হয়তো খারাপ মানুষ থাকতে পারে, কিন্তু একজনও খারাপ মা নেই। তাই মাকে ভালোবাসুন। ভালোবাসি বলতে যদি লজ্জা পান, অন্তত আপনার কাজে বুঝিয়ে দিন যে মাকে আপনি কত ভালোবাসেন। আর যাঁরা দূরে থাকেন, শত ব্যস্ততার মধ্যেও মাকে একবার ফোন করে ‘হ্যালো’ দিতে ভুলবেন না।