ডরিস ডে

ডরিস ডে
ডরিস ডে

ডরিস মেরি অ্যান কাপেলহফ বলা হলে কেউ চিনবে না তাঁকে। অথচ ডরিস ডে নামে পরিচিত চলচ্চিত্র অভিনেত্রীর এটাই আসল নাম। জন্ম তাঁর ১৯২২ সালের ৩ এপ্রিল, মারা গেলেন এ বছরের ১৩ মে। আজ তাঁর জীবনের জানা–অজানা ১০ তথ্য নিয়ে এই লেখা

অসাধারণ ছিল তাঁর গানের গলা, অভিনয়ও করতেন দারুণ। গত শতাব্দীর পঞ্চাশ ও ষাটের দশকে হলিউডে জনপ্রিয় ছবিগুলোর মধ্যে ছিল ডরিস ডে অভিনীত ছবিগুলো।

আসলে কণ্ঠশিল্পী হিসেবেই তাঁর উত্থান। ১৯৩৯ সালে একটি ব্যান্ডের সদস্য হিসেবে গানের শুরু। ১৯৪৫ সালে সেন্টিমেন্টাল জার্নি নামে অ্যালবাম বের হওয়ার পর গায়িকা হিসেবে তাঁর সম্মান বাড়তে থাকে।

‍কণ্ঠশিল্পী হিসেবে ডরিস ডে একটা বড় সময়কে নিজের করে নিয়েছিলেন। তিনি হয়ে উঠেছিলেন তাঁর সময়ের প্রতিনিধি। তাঁকে নিয়ে গান করেছে বিটলস, বিলি জোয়েল, জর্জ মাইকেল, এলটন জনসহ অনেকে। বিটলসের ‘ডিগ ইট’ ছিল এমন একটি গান। এই গানের একটি পঙ্‌ক্তি এমন, ‘দ্য বিবিসি, বি.বি. কিং অ্যান্ড ডরিস ডে’। জর্জ মাইকেলের গানে তিনি আছেন এভাবে, ‘ইউ মেক দ্য সানশাইন ব্রাউটার দ্যান ডরিস ডে’।

হলিউডের ধ্রুপদি চলচ্চিত্রের যুগ যখন শেষ হচ্ছে, ঠিক সে রকম একটি সময়ে হলিউডের চলচ্চিত্রে অভিনয় করার জন্য আসেন ডরিস ডে। রোমান্স অন দ্য হাই সি’স ছবিতে অভিনয় করেন ১৯৪৮ সালে। সে ছবিটিই নিশ্চিত করে দেয় হলিউডে তাঁর পোক্ত আসন। তিনি হলিউডে নানা ধরনের ছবিতে অভিনয় করেছেন। সংগীতপ্রধান, কমেডি আর সিরিয়াস ধরনের ছবিতে তাঁকে নেওয়ার জন্য প্রস্তুত ছিলেন প্রযোজকেরা। তিনি অভিনয় করেছেন ক্যালামিটি জেইন (১৯৫৩), দ্য ম্যান হু নিউ টু মাচ (১৯৫৬)–এর মতো চলচ্চিত্রে।

হলিউডের প্রায় সব বিখ্যাত অভিনেতার সঙ্গে জুটি বেঁধে অভিনয় করেছেন তিনি। এদের মধ্যে আছেন জেমস স্টুয়ার্ট, রক হাডসন, জেমস গারনার, ক্লার্ক গেবল, কেরি গ্রান্ট, ডেভিড নিভেন, রড টেইলর প্রমুখ।

প্যারামাউন্ট পিকচার থেকে যে ছবিটি তৈরি করেছিলেন অ্যালফ্রেড হিচকক, ১৯৫৬ সালে, যার নাম দ্য ম্যান হু নিউ টু মাচ, তাতে ডরিস ডে গেয়েছিলেন ‘কে সারা সারা’ গানটি। এটি এখন ভুবনজয়ী গান। কিন্তু মজার ব্যাপার হলো, ডরিস ডেকে যখন বলা হয়েছিল গানটির কথা, তখন তিনি বিরক্ত হয়েছিলেন। গানটি করতে চাননি। বলেছিলেন, এটা তো বাচ্চাদের গান। কিন্তু চাপে পড়ে গানটি করতে হয়েছিল তাঁকে। একবারেই রেকর্ড করা হয়েছিল। এরপর তো গানটি নিয়ে অন্য ইতিহাস গড়ে উঠেছে।

১৯৬৮ সালে তিনি শেষ ছবিতে অভিনয় করেন। সে বছরই টেলিভিশনে শুরু করেন ডরিস ডে শো 

ডরিস ডে ছোট পর্দায় কাজ করার ব্যাপারে খুব একটা উৎসাহী ছিলেন না। ঘটনাচক্রে তিনি টেলিভিশনে অভিনয় করতে আসেন। ব্যাপারটি ছিল এমন, তাঁর তৃতীয় স্বামী মার্টিন মেলচারের মৃত্যুর পর তিনি দেখতে পান, স্বামীবর তাঁকে ঋণের জালে আবদ্ধ করে গেছেন। তাঁর অনুমতি ছাড়াই একটি টেলিভশন শোয়ের জন্য চুক্তিও করে গেছেন। ডরিস এটাকে চ্যালেঞ্জ হিসেবেই নিয়েছিলেন এবং ডরিস ডে শো করেছিলেন ১৯৬৮ থেকে ১৯৭৩ সাল অব্দি। এই শোয়ের টাইটেল সংগীত হিসেবেও বেজেছে ‘কে সারা সারা’ গানটি।


নাচ ভালো লাগত ডরিসের। পেশা হিসেবে নাচকেই বেছে নিতে চেয়েছিলেন। যুক্তরাষ্ট্রের ওহাইয়োর সিনসিনাটিতে তিনি ভর্তি হয়েছিলেন নাচের স্কুলে। তখন তাঁর বয়স ১১ বা ১২। কিন্তু গাড়ি দুর্ঘটনায় তাঁর পা ভেঙে যাওয়ার পর পেশাদার নৃত্যশিল্পী হওয়ার ইচ্ছেয় ছেদ পড়ে। এর পর থেকেই তার গানের সঙ্গে মিতালি। ১৭ বছর বয়স থেকেই দর্শকদের সামনে গাইতে থাকেন গান।

১০

ডরিস ডে বিয়ে করেছিলেন চারবার। তাঁর প্রথম স্বামী এল জর্ডান। জর্ডানের ঔরসেই জন্মেছে তাঁর একমাত্র সন্তান টেরেন্স জর্ডান (১৯৪২–২০০৪)। তাঁদের বিবাহিত জীবন সুখের ছিল না। সব সময়ই মারপিট ছিল তাঁদের ললাট লিখন। এসব কারণে ছেলের জন্মের পরপরই ডরিস বিবাহবিচ্ছেদের আবেদন করেন। দু বছরের সংসার ছিল তাঁদের। ১৯৬৭ সালে এল জর্ডান আত্মহত্যা করেন। দ্বিতীয় স্বামী স্যাক্সোফোন বাজিয়ে জর্জ ওয়াডলার (১৯৪৬–১৯৪৯)। তৃতীয় স্বামী মার্টিন মেলচারের সঙ্গে তিনি কাটিয়েছিলেন ১৯৫১ থেকে ১৯৬৮ সাল পর্যন্ত। তিনি ছিলেন সিনেমার এজেন্ট, প্রযোজক। তাঁদের বিবাহিত জীবন ছিল সুখের। কিন্তু ১৯৬৮ সালে মেলচারের মৃত্যুর পর দেখা গেল ডরিসের আয় করা সব টাকাই খরচ করে ফেলেছেন মেলচার। শুধু তাই নয়, অনেক অনেক ঋণ করেছিলেন তিনি। দীর্ঘ সময় ধরে সে ঋণ শোধ করেছিলেন ডরিস। ডরিসের শেষ স্বামী ছিলেন ব্যারি কোমডেন। ১৯৭৬ থেকে ১৯৮১ সাল পর্যন্ত সে বিয়ে টিকেছিল। ডরিসের পছন্দের একটি রেস্তোরাঁয় কাজ করতেন ব্যারি।

গ্রন্থনা: জাহীদ রেজা নূর