জোড়া গান, জোড়া বিজয়ী

কনা ও ইমরান। ছবি: কবির হোসেন
কনা ও ইমরান। ছবি: কবির হোসেন

বসগিরিছবির ‘দিল দিল’ গানটি গেয়ে তারকা জরিপ বিভাগে মেরিল–প্রথম আলো ২০১৬ সালের সেরা গায়ক ও গায়িকার পুরস্কার জিতে নেন ইমরান ও কনা। মজার ব্যাপার হচ্ছে এক বছর বিরতি দিয়ে পোড়ামন ২ ছবির ‘ওহে শ্যাম’ গানটির জন্য ২০১৮ সালের পুরস্কারটিও ঘরে তুলেছেন এই দুজন। প্রথম আলোর সঙ্গে আড্ডায় বসে ইমরান ও কনার চোখে–মুখে পুরস্কার জয়ের আনন্দ দেখা গেল। আনন্দ ফুটে উঠল তাঁদের কথাতেও।

এই যে পরপর দুবার জোড়া বেঁধে গান, শ্রোতাদের ভোটে দুবার পুরস্কার ঘরে তোলা—বিষয়টি কেমন উপভোগ করেন? শুরুতেই দুজনের কাছে একসঙ্গে প্রশ্ন করি। গতানুগতিক প্রশ্ন হলেও উচ্ছ্বসিত ইমরান জবাব দেন কনার আগেই। বলেন, ‘আমরা ফিল্মের গানে পুরস্কার পেয়েছি। ফিল্মের গান সারা জীবন বেঁচে থাকে। বেশি সম্মান পাওয়া যায়। ফিল্মের গানে 

দুবার মেরিল–প্রথম আলো পুরস্কার পেয়ে গেলাম। আর কিছু চাওয়ার নেই।’

তবে কনার জবাবটা এল ভিন্নভাবে। তিনি বললেন, ‘প্রায় সাত–আট বছর ধরে চূড়ান্ত মনোনয়ন পাওয়ার পর ২০১৬ সালে প্রথম এই পুরস্কার পাই। এই পুরস্কার আমার কাছে একটি বিশেষ ব্যাপার। ওই বছর “দিল দিল” গানটি হিট হওয়ার পর কেন জানি মন থেকেই ডাক আসছিল হয়তো পুরস্কার পাব। তাই প্রথমবারের মতো বিপুল উত্সাহ–উদ্দীপনা নিয়ে অনুষ্ঠানে গিয়েছিলাম। গত বছর ওহে শ্যাম গানটিও দর্শকের মুখে মুখে ছিল। সেই দর্শকই দ্বিতীয়বার এই পুরস্কার আমাকে এনে দিয়েছেন।’

প্রতিযোগিতার দিনগুলো

মেরিল–প্রথম আলোর পুরস্কারের প্রথম কুপন ছাড়ার পরপরই সব মনোনয়নপ্রত্যাশীর মতো ইমরান ও কনা দুজনই নড়েচড়ে বসেন। কারণও আছে, দুজনই ছয়–সাতবার চূড়ান্ত মনোনয়ন পেয়েছেন। দুজনকে ভোট দেওয়া নিয়ে তাঁদের ভক্তদের একজনের একেক ধরনের কর্মকাণ্ড তাঁদের উত্তেজনাকে প্রতিবারই বাড়িয়ে দেয়। কনা বলেন, ‘চূড়ান্ত পর্যায়ে মনোনয়ন পাওয়ার আগ পর্যন্ত ভেতরে–ভেতরে টেনশন তো থাকেই। তা ছাড়া ভক্তরা দলে দলে যেভাবে কুপন, অনলাইন, এসএমএসে ভোট দিয়ে আমাদের এগিয়ে দেন, তা ভোলার নয়। যখন শুনি কোনো কোনো ভক্ত আমার জন্য নিজের টাকা খরচ করে অনেক পত্রিকা কিনে আমাকে ভোট দিয়েছেন, তখন শ্রদ্ধায় মাথা নুয়ে যায়।’ আর ইমরান বলেন, ‘যেদিন প্রথম কুপন ছাড়া হয়, সকালে দৌড়ে গিয়ে পত্রিকাটায় দেখি কুপনে আমার নাম আছে কি না। চূড়ান্ত মনোনয়ন পর্যন্ত যে যাত্রা, তাতে নিজের মধ্যে সর্বক্ষণ একটা ভয়, শঙ্কা কাজ করে।’

কনার বাইরে ইমরান, ইমরানের বাইরে কনা

ছুঁয়ে দিলে মন ছবির ‘শূন্য থেকে আসে প্রেম’ গানটি দিয়ে ইমরান–কনার জুটিকে নিয়ে আলোচনা শুরু হয়। বসগিরি ছবির ‘দিল দিল’ গানটি এই জুটিকে তুমুল জনপ্রিয়তায় পৌঁছে দেয়। এই দুজনকে দিয়ে প্লেব্যাক করানোর আগ্রহ সিনেমা প্রযোজকদের মধ্যে বাড়তে থাকে। কিন্তু এই জুটির বাইরের অন্য কার সঙ্গে গাইতে বেশি স্বচ্ছন্দ? কনা একটু একটু হিসাব কষে উত্তর দিলেন। বললেন, ‘গানের প্রয়োজনে যার সঙ্গে কাজ হবে, তার সঙ্গেই করতে চাই। এর আগে আসিফ আকবর, এন্ড্রু কিশোর, হাবিব, হৃদয় খান, আরফিন রুমির সঙ্গে গান করেছি। কিন্তু আমার মনে হয় ইমরান আর আমার জুটি শ্রোতা–দর্শকের একটু বেশিই পছন্দ।’

কনার উত্তর একটু কৌশলী হলেও ইমরানের সাফ জবাব। তিনি বলেন, ‘এর আগে পূজা, পড়শি ও ন্যান্‌সির সঙ্গে জুটি বেঁধে গান করেছি। গান জনপ্রিয়তাও পেয়েছে। তবে ফিল্মের গানের জন্য কনার বাইরে ন্যান্‌সিকে বেছে নিতে চাই আমি।’

অডিওতে পিছিয়ে থাকা

চলচ্চিত্রের গানে ইমরান ও কনার জুটির জয়জয়কার। কিন্তু এই দুই সংগীত তারকার একসঙ্গে মৌলিক গানের খবর নেই। চলচ্চিত্রের বাইরে ‘কে কত দূরে’, ‘কথা দাও’সহ বেশ কিছু মৌলিক দ্বৈত গান গেয়েছেন দুজন। কিন্তু কোনো আলোচনায় আসেনি সেগুলো। কারণ কী? ইমরান বলেন, ‘ফিল্মের গানগুলো যে ধরনের সুন্দর পরিকল্পনা করে করেছি, মৌলিক গানগুলো সেভাবে হয়নি। হয়েছে বিচ্ছিন্নভাবে।’ কথার মধ্যে বাদ সাধেন কনা, বলেন, ‘এবার আমরা দুজন কিছু দ্বৈত গান বেশ পরিকল্পনা করে, ভেবেচিন্তে করতে যাচ্ছি।’

যা কিছু নতুন

সিনেমার গান তো আছেই। আলাদা করে নিজ নিজ গান নিয়ে কাজ করছেন কনা ও ইমরান। কনা জানালেন, নিজের ইউটিউব চ্যানেলের জন্য বেশ কিছু কাজ করছেন তিনি। মৌলিক গানের পাশাপাশি কভার গানও করছেন।

অন্যদিকে শাকিব খানের পাসওয়ার্ড ও অনন্ত জলিলের দিন: দ্য ডে ছবির দুটি গানসহ সিনেমার প্লেব্যাক বাদে বেশ কিছু মৌলিক গানের কাজ করছেন ইমরান। তিনি বলেন, ‘দুটি সিনেমার গান শেষ করেছি। গানের রাজা প্রতিযোগিতার সেরা পাঁচজনের জন্য পাঁচটি গান করছি। এ ছাড়া সিএমভি চ্যানেলের জন্য গানের রাজা প্রতিযোগিতা থেকে আসা দুজনের দুটি গান করলাম।’

একে অপরের প্রসঙ্গে

বয়সে ইমরানের চেয়ে বড় কনা। ব্যক্তিগত জীবনে একে অপরকে ভাইবোনের মতোই স্নেহ করেন, ভালোবাসেন। গান নিয়ে প্রতিনিয়ত নিজেদের ভালো–মন্দের কথা বলে থাকেন। আমরা সেই ভালো–মন্দের ব্যাপারে জানতে চাইলে কনা বলেন, ‘একটা নতুন গান তৈরি করলে ইমরান আমাকে শুনতে পাঠিয়ে দেয়। আমিও ওর কাছে গানের বিষয়ে মতামত
নিই। নতুন গান তৈরি করলে ওকে শোনাই।’

কনার কাছে মন্দের চেয়ে ইমরানের ভালো দিকটাই বেশি। কনা বলেন, ‘গান জানা একজন শিল্পী ইমরান। ভালো গান করে। তবে ঠিকঠাক ফোন না ধরার একটা খারাপ অভ্যাস আছে ওর।’

অন্যদিকে গানের জগতে কনাকে অনুপ্রেরণাদায়ী মনে করেন ইমরান। কনা সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘কনা আপা ভালো গান করেন। ভালো মনের মানুষ। তবে কনা আপার আরও বেশি মৌলিক গানের দিকে নজর দেওয়া উচিত।’