দেশের বাইরে শুটিং, কারণ কী?

ইন্দোনেশিয়ার জার্কাতায় আয়ার নাটকের শুটিংয়ে নিলয় ও সারিকা। ফাইল ছবি
ইন্দোনেশিয়ার জার্কাতায় আয়ার নাটকের শুটিংয়ে নিলয় ও সারিকা। ফাইল ছবি

আটটি নাটকের শুটিংয়ে দেশের বাইরে যাচ্ছেন এক পরিচালক। ৫২ পর্বের ধারাবাহিকের শুটিং করতে যাচ্ছেন আরেক পরিচালক। নাটকের শুটিং নিয়ে এমন কথা হরমাহেশা শোনা যায়। নতুন প্রযোজক ও পরিচালকদের ইউনিট প্রায়ই দেশের বাইরে শুটিংয়ে দলবল নিয়ে যাচ্ছেন, আসছেন কয়েকটি নাটকের শুটিং শেষ করে। দেশের বাইরে শুটিংয়ে এমন কীই–বা সুবিধা আছে, তা–ই বলেছেন প্রযোজক পরিচালক ও অভিনয়শিল্পী।

১৯৯৪ সালের ডিসেম্বর মাসে প্রাচীর পেরিয়ে নাটকের মধ্য দিয়ে এ দেশে প্যাকেজ নাটকের প্রচলন হয়। এই নাটকে অভিনয় করেন নোবেল ও বিপাশা হায়াত। প্যাকেজ যুগের শুরুতে যুক্তরাজ্যে একসঙ্গে পাঁচটি নাটকের শুটিংয়ের উদ্যোগ নেন আহমেদ ইউসুফ সাবের, আনোয়ার হোসেন বুলু ও দেওয়ান হাবিব। এসব নাটকের অভিনয়শিল্পীরা ছিলেন জাহিদ হাসান, শমী কায়সার, মৌ ও তমালিকা। এরপরই দেশের নাটকের শুটিং করতে দেশের বাইরে যায় প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান টেলিহোম। এবারের ঈদের জন্য ধারাবাহিক নাটকের শুটিং করে মালয়েশিয়াতে। প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী আলী বশীর প্রথম আলোকে বলেন, ‘দেশের বাইরে আমাদের শুটিং শুরু ২৩ বছর আগে। শুরুর দিকে শিল্পীদের শিডিউলের ঝামেলা থেকে বাঁচার বিষয়টি মাথায় কাজ করত। দেশের বাইরের শুটিংয়ে সব শিল্পীকে একসঙ্গে পাওয়া যায়। দর্শকদেরও নিত্য–নতুন জায়গার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার ব্যাপার ছিল।’

প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান ১৯৫২ এন্টারটেইনমেন্টও ব্যাংককে শুটিং করছে। প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার সাজু মুনতাসির সেখানে অফিস চালু করেছেন। শুটিংয়ের সব টেকনিক্যাল সুযোগ–সুবিধা আছে। এই প্রযোজক বলেন, ‘প্রথমত গল্পের চাহিদা, দ্বিতীয়ত অভিনয়শিল্পীদের শিডিউল সুন্দরভাবে সমন্বয় করা যায়। দেশে যে শিল্পীর কলটাইম সকাল ১০টায়, তিনি আসেন দুপুর ১২টা কিংবা বেলা ১টায়। দুপুরের জন আসেন বিকেলে। দেশের বাইরে এসব করার সুযোগ নেই।’

একটা সময় নতুন দেশ দেখার উদ্দেশ্যে দেশের বাইরে শুটিংয়ে যাওয়া হতো বলে জানালেন অভিনয়শিল্পী, পরিচালক ও প্রযোজক জাহিদ হাসান। এই অভিনয়শিল্পী যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, ব্যাংকক, নেপাল, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়াসহ অনেক দেশে শুটিং করেছেন। তিনি বললেন, ‘দেশে শিল্পীদের শিডিউল মেলাতে হিমশিম খেতে হয় পরিচালকের। দেশের বাইরে একসঙ্গে শিল্পীরা সময়মতো সেটে থাকেন। তবে আমি দেখেছি, দেশের বাইরের শুটিংয়ে চিত্রগ্রাহকের ওপর চাপ পড়ে বেশি। শিল্পীরাও চাপে থাকেন।’

কয়েক বছর ধরে ইন্দোনেশিয়ায় নাটকের শুটিং করছেন পরিচালক সাখওয়াত মানিক। শুটিংয়ের ক্ষেত্রে এই দেশ তাঁর ভীষণ প্রিয়। জানালেন, ‘শিল্পীরা হাতের মুঠোয় থাকেন। ঢাকায় শুটিংয়ের ক্ষেত্রে শিল্পীরা প্রায়ই জ্যামের দোহাই দেন। অনেক ক্ষেত্রে ফোন না ধরার বাতিকও রয়েছে। অথচ দেশের বাইরে সে ধরনের কোনো সুযোগ নেই। সবাই একই হোটেল কিংবা মোটেলে থাকেন। পরিচালক ও প্রযোজকের আওতায় থাকেন। আরেকটি কারণে আমার দেশের বাইরের শুটিংয়ে আরাম লাগে। আমাদের দেশের কোনো পাঁচ তারকা হোটেল কিংবা ভালো মানের রিসোর্টে শুটিং করতে চাইলে অনুমতি নিয়ে বেগ পেতে হয়। এমনকি শুটিংয়ের সময় বাড়তি অনেক টাকাও লাগে। দেশের বাইরে এসবের কোনো ঝামেলাই নেই। নতুন জায়গায় সঙ্গে দর্শকদের পরিচয় করিয়ে দেওয়া যায়। বৈচিত্র্য পায় দর্শক।’