সুবীর নন্দীর ছবিতে মালা, জ্বলছে প্রদীপ

বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় সংগীত ও নৃত্যকলা কেন্দ্রের মিলনায়তনে সুবীর নন্দীকে স্মরণ। ছবি: প্রথম আলো
বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় সংগীত ও নৃত্যকলা কেন্দ্রের মিলনায়তনে সুবীর নন্দীকে স্মরণ। ছবি: প্রথম আলো

ছবির গলায় মালা। সামনে প্রদীপ জ্বলছে। কারও ছবির সামনে এমন দৃশ্য থাকলে বুঝে নিতে হয় মানুষটা নেই। এই ‘নেই’-এর কঠিন বাস্তবতাকে মেনে নিয়ে আজ শুক্রবার বিকেলে বহুজনের কণ্ঠে সচকিত হলো বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় সংগীত ও নৃত্যকলা কেন্দ্রের পরিবেশ। এখানে কাছের মানুষেরা কথায়, গানে স্মরণ করলেন সুবীর নন্দীকে।

কত মানুষের উপস্থিতি দেখা গেল এ স্মরণসভায়! গানের মানুষ, নাটকের মানুষ, চিকিৎসক—নানা পেশার। মিলনায়তনের দর্শক সারির বেশির ভাগ আসন ছিল পূর্ণ। তাঁরা গাইলেন, বললেন, কাঁদলেন সুবীর নন্দীর জন্য। জ্যৈষ্ঠ মাসের তৃতীয় বিকেলে নানা শ্রেণি–পেশার মানুষের এই উপস্থিতি একটি কথাই বারবার মনে করিয়ে দেয়, তিনি বলেছিলেন, ‘এই দেশের মানুষ ভালোবাসতে জানে, সম্মান করতে জানে। এখানে গুণের কদর আছে।’

আয়োজক বাংলাদেশ সংগীত সংগঠন সমন্বয় পরিষদ। বেলা সাড়ে তিনটায় ‘জীবন মরণের সীমানা ছাড়ায়ে, বন্ধু হে আমার, রয়েছ দাঁড়ায়ে’ হারমোনিয়ামের সুরে তপন মাহমুদের গাওয়া রবীন্দ্রসংগীত পরিবেশনার মধ্য দিয়ে শুরু হয় অনুষ্ঠান। এরপর শোকগাথা পাঠ করেন গীতিকার রফিকুজ্জামান। স্বাগত বক্তব্য দেন আয়োজক সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক বিশ্বজিৎ রায়। তিনি প্রয়াত শিল্পীদের স্মরণে একটি স্মৃতিকর্নার চালুর আহ্বান জানান। শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করে বক্তব্য দেন মাহমুদ সেলিম। হারমোনিয়ামের সুরেই সুবীর নন্দীর ‘পাহাড়ের কান্না দেখে তোমরা তাকে ঝরনা বল’ গানটি গেয়ে শোনান ডালিয়া নওশীন। শেখ জসীম শোনালেন ‘বন্ধু হতে চেয়ে তোমার শত্রু বলে গণ্য হলাম’। অন্তু খন্দকার শোনালেন ‘কত যে তোমাকে বেসেছি ভালো’। বক্তব্য দিতে এসে সুবীর নন্দীকে নিয়ে গান শোনালেন ফকির আলমগীর।

একে একে অনুষ্ঠানে স্মৃতিচারণা করেন বাংলাদেশ বেতারের মহাপরিচালক নারায়ণ চন্দ্র শীল, সংগীতব্যক্তিত্ব সুজেয় শ্যাম, অনুপ ভট্টাচার্য, মো. খুরশীদ আলম, শেখ সাদী খান, ফেরদৌস হোসেন ভূঞা, রফিকুল আলম, আকরামুল ইসলাম, আবিদা সুলতানা, ফোয়াদ নাসের বাবু, রথীন্দ্রনাথ রায়, দেবু চৌধুরী, মাহমুদ সেলিম, মকসুদ জামিল মিন্টু, সাংবাদিক আবেদ খান, সাদিয়া আফরিন মল্লিক, কবি নাসির আহমেদ, চিকিৎসক সামন্তলাল সেন, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদার এবং শিল্পীর ছোট ভাই সুবিনয় নন্দী ও কন্যা ফাল্গুনী নন্দী।

নানাভাবে প্রয়াতকে স্মরণ করেন তাঁরা। বললেন, ‘সুবীর নন্দী কণ্ঠ দিয়ে নয়, হৃদয় দিয়ে গান করতেন। তাঁর গায়কি, পরিমিতিবোধ এত বেশি ছিল, যা কারও সঙ্গে তুলনা করা যায় না। তার তুলনা তিনি নিজেই। অসাধারণ কণ্ঠ দিয়ে জয় করে নিয়েছেন সংগীতপ্রেমী মানুষের হৃদয়।’

বক্তারা আরও বলেন, তিনি শুধু একজন সংগীতশিল্পী ছিলেন না, একজন ভালো মনের মানুষও ছিলেন। খুব সাধারণ জীবন যাপন করতেন। দেশের প্রতি, দেশের মানুষের প্রতি তাঁর অগাধ ভালোবাসা ছিল। যখন আধুনিকতার নামে সংগীতাঙ্গনে যাচ্ছেতাই অবস্থা চলছে, সুবীর নন্দী তখন তীক্ষ্ণ হয়ে কাজ শুরু করেন। এ জন্য জাতি তাঁকে চিরদিন মনে রাখবে।