ইতালিতে পুরস্কার পেয়েছে বাঁশ-কাহিনি

বিচারকমণ্ডলীর সভাপতি আলেজ্জান্দ্র তগ্নির কাছ থেকে পুরস্কার নিচ্ছেন চলচ্চিত্র নির্মাতা শাহীন দিল-রিয়াজ। ছবি: সংগৃহীত
বিচারকমণ্ডলীর সভাপতি আলেজ্জান্দ্র তগ্নির কাছ থেকে পুরস্কার নিচ্ছেন চলচ্চিত্র নির্মাতা শাহীন দিল-রিয়াজ। ছবি: সংগৃহীত

বাঁশ আর বাঁশ। পঁচিশ থেকে পঞ্চাশ হাজার বাঁশের ১০০ মিটার লম্বা বিশাল ভেলা। ভেলা হয়ে ভেসে ভেসে এই বাঁশ চলে যায় সারা দেশে। মৌলভীবাজারের শাগরনাল চা বাগানের পেছনের বিশাল বাঁশ বাগানের এই বাঁশ কাটা থেকে বিক্রির জন্য নিয়ে যাওয়া নিয়ে নির্মিত হয়েছে তথ্যচিত্র ‘ব্যাম্বো স্টোরিজ’ বা ‘বাঁশ বৈভব’। সম্প্রতি ইতালির ৬৭ তম ত্রেন্তো চলচ্চিত্র উৎসবে ‘বিআইএম’ পুরস্কারে ভূষিত হয়েছে বাংলাদেশের এই প্রামাণ্যচিত্র।

মৌলভীবাজার জেলার জুড়ি উপজেলার অবস্থান ভারত সীমান্তের খুব কাছে। জুড়ী নদীর উৎপত্তি স্থলে, শাগরনাল চা বাগানের পেছনে লুকিয়ে আছে বিশাল বাঁশ বন। সেই বন থেকে বাঁশ কেটে নদীতে নামানো হয়। তারপর বেঁধে চালি তৈরি হয়। হাজার বাঁশের ভেলাকে স্থানীয় ভাষায় বলে ‘চালি’। এই ভেলা নিয়ে যাওয়া হয় বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে। ‘চালি’ বেয়ে কয়েকশ কিলোমিটার নদী পাড়ি দেন ব্যাপারীরা। নদীপথের এই দীর্ঘযাত্রা শীতকালে শুরু হয় ফেঞ্চুগঞ্জ থেকে, আর বর্ষাকালে হাকালুকি হাওর থেকে। এরপর কুশিয়ারা নদী বেয়ে সুরমায়।

কাটার পর বেঁধে ভাসিয়ে নেওয়া হচ্ছে বাঁশ
কাটার পর বেঁধে ভাসিয়ে নেওয়া হচ্ছে বাঁশ

তারপর ছোট-বড় আরও কয়েকটি নদী পেরিয়ে মেঘনা। চালির সর্বশেষ গন্তব্য ঢাকার পার্শ্ববর্তী নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁর কাছে বৈদ্যের বাজার। প্রায় তিন সপ্তাহের এ যাত্রায় ব্যাপারীরা ভেলার ওপরেই কাটান আর বন্দরে বন্দরে বাঁশ বিক্রি করেন। এ রকম বাঁশ বিক্রেতা দলের কাঠুরে সর্দার লিয়াকত, ব্যাপারী নুরু, শহিদ, সিরাজদের পিছু নিয়েছিলেন নির্মাতা শাহীন দিল-রিয়াজ। তাঁদের এই জীবনযাপন দিন-রাত তিনি ধারণ করেন ক্যামেরায়। নির্মিত হয় ৯৬ মিনিটের তথ্যচিত্র ‘বাঁশ বৈভব’।

বাঁশের চালি
বাঁশের চালি

বাংলাদেশ-জার্মান যৌথ প্রযোজনায় নির্মিত এই তথ্যচিত্রটির উদ্বোধনী প্রদর্শনী হয় জানুয়ারি মাসে ফিনল্যান্ডের হেলসিঙ্কি শহরের ডক পয়েন্ট চলচ্চিত্র উৎসবে। সম্প্রতি ইতালির ৬৭ তম ত্রেন্তো চলচ্চিত্র উৎসবে ‘বিআইএম’ পুরস্কারে ভূষিত হয়েছে তথ্যচিত্রটি। বিচারকেরা প্রশংসা করে ছবিটি প্রসঙ্গে বলেছেন, ‘এ ছবির গল্প বলার আবেদন আর দৃশ্যকল্প অসাধারণ। বাংলাদেশের সঙ্গে ইতালির বিশাল ভৌগোলিক দূরত্বের পরও সেখানকার আল্পস পার্বত্য অঞ্চলের প্রায় শত বছর আগের কাঠুরেদের কঠিন জীবনের কথা মনে করিয়ে দেয় ছবিটি।

ছবির দৃশ্য গ্রহণ ব্যবস্থাপনায় ছিলেন হাসান মাহবুব বাবলু, শব্দগ্রহণে নাহিদ মাসুদ এবং আলমগির হুসাইন।