সফলতার পরও নতুন বিনিয়োগ কম

আয়নাবাজি, ঢাকা অ্যাটাক, দেবী ছবির পোস্টার
আয়নাবাজি, ঢাকা অ্যাটাক, দেবী ছবির পোস্টার

অনেক দিন ধরেই ঢাকার চলচ্চিত্রে মন্দা যাচ্ছে। অনেক ছবিই মুক্তির পর প্রেক্ষাগৃহে মুখ থুবড়ে পড়ছে। তারপরও গত তিন-চার বছরে ঢাকার চলচ্চিত্রে যৌথ প্রযোজনার নবাব, বাদশা, দেশি ছবি পোড়ামন ২, আয়নাবাজি, ঢাকা অ্যাটাক, সবশেষ দেবী ছবিটি ব্যবসাসফল হয়েছে। ছবিগুলো দেখতে প্রেক্ষাগৃহে হুমড়ি খেয়ে পড়েছেন দর্শক। এসব ছবির প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে কোনো কোনো প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান নিয়মিত বিনিয়োগে থাকলেও কিছু প্রতিষ্ঠান বিনিয়োগে আসেনি।

প্রথম প্রযোজিত ছবি ঢাকা অ্যাটাক নির্মাণ করেই সফলতার মুখ দেখে প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান স্প্ল্যাশ মাল্টিমিডিয়া। ছবিটি মুক্তি পায় ২০১৭ সালের ৬ অক্টোবর। যৌথভাবে গাউসুল আলম শাওন ও জিয়াদ্দিন আদিলেরও প্রথম প্রযোজিত ছবি আয়নাবাজি ২০১৬ সালের ৩০ অক্টোবর মুক্তির পর ঢাকার চলচ্চিত্রে আলোড়ন তোলে।

প্রথম প্রযোজিত ছবি দারুণ আলোচনা তৈরি করলেও এই প্রযোজকেরা পরবর্তী সময়ে নতুন চলচ্চিত্র নির্মাণ করেননি। কারণ কী?

প্রযোজকদের অভিযোগ, ছবিগুলো ব্যবসায়িকভাবে সফল হলেও চলচ্চিত্রাঙ্গনের নানা অব্যবস্থাপনা, বিশেষ করে ছবি মুক্তির সময় প্রযোজকের ঘর থকে হল পর্যন্ত পথে পথে অস্বচ্ছ প্রক্রিয়ার কারণে বিনিয়োগের টাকাই ফেরত আসেনি। ফলে শুরুতেই নিরুৎসাহিত হয়ে চলচ্চিত্রে বিনিয়োগ থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন তাঁরা।

ঢাকা অ্যাটাক ছবির প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান স্প্ল্যাশ মাল্টিমিডিয়া থেকে বলা হচ্ছে, ১ কোটি ৯২ লাখ টাকা বিনিয়োগ করা হয়েছিল, কিন্তু মূল টাকাই ফেরত আসেনি।

নতুন বিনিয়োগে না আসা প্রসঙ্গে ছবির প্রযোজক নাজমুল হাসান চৌধুরী বলেন, ‘ছবিটির সফলতার কথা দর্শকের মুখে মুখে। অথচ বিনিয়োগের টাকা ফেরত পাইনি। এ কারণে হতাশ হয়ে নতুন বিনিয়োগ করিনি। ছবিটি মুক্তির পর থেকে বুকিং এজেন্ট, হলে হলে প্রতিনিধি পাঠানো, নানা জায়গায় অব্যবস্থাপনার কারণে বিশাল লোকসান গুনতে হয়েছে। এ ছাড়া কিছু হলের কাছে আট-দশ লাখ টাকা পাওনা আছে। হয়তো এ টাকা আর ফেরত আসবে না।’

কিন্তু ছবিটির পরিবেশনা প্রতিষ্ঠান টাইগার মিডিয়া সূত্র বলছে, মুক্তির পর থেকে পর্যায়ক্রমে প্রায় চার মাস ধরে দুই শতাধিক প্রেক্ষাগৃহে চলেছে ছবিটি। বিভিন্ন হল থেকে টিকিটের কমিশন বাবদ ১ কোটি ৮৪ লাখ টাকা প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানের ঘরে গেছে। দেশের বাইরে ১৩টি দেশে ছবিটি চলেছে। সেখান থেকে বড় অঙ্কের টাকা এসেছে।

তাহলে বিনিয়োগ উঠে এল না কেন? ঢাকা অ্যাটাক ছবির প্রযোজকের কাছে পুনরায় জানতে চাইলে তিনি মুখ খুলতে চাইলেন না। শুধু বলেন, ‘এসব নিয়ে আর কিছুই বলতে চাই না।’

এদিকে প্রযোজক সূত্রে জানা গেছে, আয়নাবাজি ছবির প্রচারণা খরচসহ মোট নির্মাণ বাজেট ছিল ১ কোটি ৭০ লাখ টাকা। ব্যবসা হয়েছে প্রায় ৩ কোটি ৫০ লাখ টাকার।

এখান পর্যন্ত হলমালিকের কাছে বাকি পড়ে আছে ৫০ থেকে ৬০ লাখ। কিন্তু ছবিটির প্রযোজকেরা নতুন করে বিনিয়োগ করেননি।

এ প্রসঙ্গে ছবিটির দুজন প্রযোজকের একজন গাউসুল আলম শাওন বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে বহু চেষ্টা করেও অনেক হলের কাছ থেকে বকেয়া টাকা ওঠানো যাচ্ছে না। বুকিং এজেন্টদের অসততাও একটা কারণ। এক বুকিং এজেন্টের কাছেই প্রায় ১০ লাখ টাকা পড়ে আছে। তা ছাড়া হলে যে টিকিট বিক্রি হচ্ছে, সেখানেও শুভংকরের ফাঁকি আছে। মোট কথা, পুরো ইন্ডাস্ট্রি যে প্রক্রিয়ায় চলছে, সেটা ঠিক প্রক্রিয়া না।’

এই প্রযোজকের কথা, ‘এসব ঠিকঠাক না হলে প্রযোজকদের পক্ষে সিনেমা নির্মাণ করা কঠিন।’

প্রযোজকের বকেয়ার অভিযোগের বিষয়ে হল মালিক ও সমিতির উপদেষ্টা মিয়া আলাউদ্দিন বলেন, ‘কোনো কোনো হলের কাছে বকেয়া থাকতে পারে। তবে বিষয়টি আমার জানা নেই।’

তবে এই হলমালিক নেতার মতামত, ‘যেসব হলের কাছে বকেয়া আছে, হলের নাম উল্লেখ করে প্রযোজক সমিতি ও প্রদর্শক সমিতির কাছে পাওনাদার প্রযোজকেরা অভিযোগ দিলে বিষয়টির অনেক সহজ সমাধান হতে পারে।’

এদিকে ২০১৮ সালের অক্টোবর মাসে মুক্তিপ্রাপ্ত সবশেষ আলোচিত ছবি দেবী। ছবির পরিবেশনা প্রতিষ্ঠান জাজ মাল্টিমিডিয়া বলছে, সবশেষ ব্যবসাসফল ছবি এটি।

সরকারের অনুদানে তৈরি এই ছবির প্রযোজক জয়া আহসান। এটি তাঁর প্রথম প্রযোজিত ছবি। এরই মধ্যে জয়া আহসান সি-তে সিনেমা নামে তাঁর নতুন প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান থেকে ছবি তৈরির ঘোষণা দিয়েছেন। নাম ফুড়ুৎ। এ প্রসঙ্গে জয়া বলেন, ‘আমি প্যাশন থেকে কাজটি করছি। দেবী ছবি থেকেও কিছু টাকা এসেছে। প্যাশন ও এই টাকা মিলিয়েই আমি বিনিয়োগ করতে পারছি। আমাদের চলচ্চিত্রশিল্প এখনো শিল্প হিসেবে দাঁড়াতে পারেনি। আমাদের মতো প্যাশন নিয়ে আরও কেউ এগিয়ে এলে এটা শিল্প হিসেবে দাঁড়াতে পারে। কয়েকটি কাজ করার পরই হয়তো ভালো কিছু হবে। এই শিল্পের ব্যাপারে সরকার খুবই ইতিবাচক। এ ব্যাপারে দুটি কথা বলি, কী পরিমাণ টিকিট বিক্রি হচ্ছে, সেটা জানার প্রক্রিয়াটা যেন স্বচ্ছ হয় আর প্রযোজকেরা যেন দ্রুত টাকা পেয়ে যান।’