'আমি শুভমিতাদিকে চিনি না'

শুভমিতা ও সাহানা বাজপেয়ী
শুভমিতা ও সাহানা বাজপেয়ী

‘আমি শুভমিতাদিকে চিনি না।’ বললেন সাহানা বাজপেয়ী। বাংলা ভাষাভাষী নতুন প্রজন্মের কাছে রবীন্দ্রসংগীত আর লোকগানকে জনপ্রিয় করার পেছনে তাঁর রয়েছে অনন্য ভূমিকা। সম্প্রতি আকাশ আট চ্যানেলে ‘রবি মাস সিজন ফোর’ অনুষ্ঠানে অতিথি ছিলেন ভারতের বাংলা গানের অন্যতম জনপ্রিয় শিল্পী শুভমিতা। অনুষ্ঠানে তিনি গেয়ে শোনান রবীন্দ্রসংগীত—

‘মহারাজ, একি সাজে এলে হৃদয়পুরমাঝে!
চরণতলে কোটি শশী সূর্য মরে লাজে॥
গর্ব সব টুটিয়া মূর্ছি পড়ে লুটিয়া,
সকল মম দেহ মন বীণাসম বাজে॥’

কথাপ্রসঙ্গে অনুষ্ঠানের সঞ্চালক পণ্ডিত তন্ময় বোস বললেন, সম্প্রতি গানটি সাহানা বাজপেয়ী সৃজিত মুখার্জির ‘এক যে ছিল রাজা’ ছবিতে গেয়েছেন। কেমন লেগেছে? শুভমিতা স্পষ্ট জানালেন, সাহানার গায়কি তাঁর ভালো লাগেনি। সাহানা বাজপেয়ীর কণ্ঠে গানটি দারুণ জনপ্রিয় হলেও তিনি বললেন, ‘একবারই শুনেছি। খুব বেশি মনে নেই।’ সঞ্চালক বললেন, ‘তখন ভালো লাগেনি, না লেগেছিল?’ শুভমিতা বললেন, ‘খারাপ লাগেনি।’ পণ্ডিত তন্ময় বোস বললেন, ‘তার মানে ভালোও লাগেনি?’ শুভমিতা বললেন, ‘ভালো লাগেনি।’

এই লাইভ অনুষ্ঠানে সাহানা বাজপেয়ীকে উদ্দেশ করে শুভমিতা আরও বললেন, ‘অবাঙালি হলে তো বাংলা সাহিত্য না বুঝে গাইলে গানের ভাবটাই আসে না।’ এ সময় পণ্ডিত তন্ময় বোস তাঁর বক্তব্যকে সংশোধন করে দেওয়ার জন্য বলেন, ‘ও বাঙালি মেয়ে, বাংলাদেশের মেয়ে, বাঙালির ঘরের বউ ছিল!’ শুভমিতা বললেন, ‘তাই নাকি!’

রবীন্দ্রজয়ন্তী উপলক্ষে ৬ মে ইউটিউবে শুভমিতার গাওয়া রবীন্দ্রসংগীত ‘দাঁড়িয়ে আছ তুমি আমার’-এর মিউজিক ভিডিও এসেছে। প্রত্যুষ বন্দ্যোপাধ্যায় গানটি সংগীত আয়োজন করেছেন। অভিজ্ঞদের মতে, আধুনিক গানের শিল্পী শুভমিতার কণ্ঠে রবীন্দ্রনাথের গানকে তাঁর মতো করে ভালো লাগবে। কিন্তু সাহানা বাজপেয়ীর গানে খুঁজে পাওয়া যায় শান্তিনিকেতনের লাল মাটি, মুক্ত অক্সিজেন, এক বাঁধন ছাড়া প্রকাশ। আর এ কারণেই তাঁর গান নতুন প্রজন্মের কাছে এতটা জনপ্রিয়।

এদিকে সাহানা বাজপেয়ীকে নিয়ে শুভমিতার এই আপত্তিকর মন্তব্য নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে খুব সমালোচনা হয়। তবে এ ব্যাপারে তখন সাহানা বাজপেয়ী কোনো মন্তব্য করেননি। তিনি লন্ডনে থাকেন। লন্ডন ইউনিভার্সিটিতে স্কুল অব ওরিয়েন্টাল অ্যান্ড আফ্রিকান স্টাডিজ বিভাগে অধ্যাপনা করছেন।

সাহানা বাজপেয়ীর ছোটবেলা কেটেছে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের শান্তিনিকেতনে। মা-বাবা দুজনই অধ্যাপনা করেছেন উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে। ১৯৮২ থেকে ২০০২ সাল পর্যন্ত শান্তিনিকেতনে থাকাকালে সাহানার সংগীতের হাতেখড়ি বাবা বিমল বাজপেয়ীর কাছ থেকে। মাত্র তিন বছর বয়সেই প্রথম গান শেখেন। পরবর্তী সময়ে তিনি বিজয় সিনহা, স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায়, দিলীপ কর্মকার, চিত্রা রায়, শ্যামলী বন্দ্যোপাধ্যায়, চন্দন মুনশি এবং মিতা হকের অধীনে ভারতীয় শাস্ত্রীয় সংগীত ও রবীন্দ্রসংগীতের তালিম নেন। ছোটবেলা থেকে গিটার বাজিয়ে, পিয়ানো বাজিয়ে আর এসরাজের সঙ্গে গান করেন সাহানা। দুই বাংলার অন্যতম জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী সাহানা বাজপেয়ীকে দ্য বেঙ্গল’স প্রাইড সম্মাননা দেওয়া হয় গত বছর। সম্প্রতি ভারতে মুক্তি পেয়েছে শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় ও নন্দিতা রায়ের ‘কণ্ঠ’ ছবিটি। এই ছবিতে সাহানা বাজপেয়ীর গাওয়া একটি গান রয়েছে।

সাহানা বাজপেয়ী এখন কলকাতায়। মাস ছয়েক আগে তাঁর মা প্রয়াত হয়েছেন। শোনা যায়, শুভমিতার ওই মন্তব্যের পর তাঁরা একজন আরেকজনকে ফেসবুকে ব্লক করে দিয়েছেন। এ ব্যাপারে কলকাতার একটি সংবাদমাধ্যমকে সাহানা বাজপেয়ী বলেন, ‘আমি শুভমিতাদিকে চিনি না। ফেসবুকে ওর সঙ্গে কোনো সম্পর্ক নেই। কাজেই ব্লক করার প্রশ্নই নেই।’ আর শুভমিতার বক্তব্য নিয়ে বললেন, ‘আমার এই ব্যাপারে কোনো মন্তব্য নেই। আমার ফ্যান পেজে আমাকে ট্যাগ করা হয়েছে। আমি কন্ট্রোভার্সি পছন্দ করি না। এর আগেও আমার পার্সোনাল লাইফ নিয়ে অনেক কথা হয়েছে। আমি এই সব গায়ে মাখি না। আমি শুধু একটা কথাই বলব, আমার পদবি বাজপেয়ী হলেও শুভমিতাদি জানেন না, আমি কিন্তু বাঙালি।’