নজরুলের কবরের পাশে যাওয়া হলো না খালিদ হোসেনের

খালিদ হোসেন
খালিদ হোসেন

জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের জন্মদিন আর মৃত্যুদিনে প্রায় নিয়মিত তাঁর কবর জিয়ারত করেছেন খালিদ হোসেন। সেখানে গান গেয়েছেন, নজরুল আর নজরুলের গান নিয়ে কথা বলেছেন। গত চার বছর অসুস্থতার কারণে সেখানে আর যেতে পারেননি। কিন্তু তার জন্য যে কষ্ট পেয়েছেন, তা বলেছেন ছেলের কাছে। পুরো একটা জীবন তিনি কাজী নজরুল ইসলাম আর তাঁর গান নিয়েই ছিলেন। তাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় কাজী নজরুল ইসলামের কবরের কাছে শেষবারের মতো খালিদ হোসেনের মরদেহ নিয়ে যেতে চেয়েছিল তাঁর পরিবার। কিন্তু তা আর সম্ভব হয়নি।

খালিদ হোসেনের ছেলে আসিফ হোসেন বললেন, ‘বাবা তেমন কিছু বলেননি, তবে আমি আর আমার মা চেয়েছিলাম, জাতীয় কবির কবরের পাশে কিছুক্ষণ বাবার মরদেহটা রাখব, এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় মসজিদে বাবার জানাজা হবে। কিন্তু যাদের মাধ্যমে এ–সংক্রান্ত অনুমতি নেওয়ার প্রয়োজন ছিল, শেষ পর্যন্ত তাদের কাছ থেকে কোনো সহযোগিতা পাইনি।’

একুশে পদক পাওয়া নজরুলসংগীতের বরেণ্য শিল্পী, গবেষক, স্বরলিপিকার ও সংগীতগুরু খালিদ হোসেন গতকাল বুধবার রাত ১০টা ১৫ মিনিটে রাজধানীর জাতীয় হৃদ্‌রোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের করোনারি কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) মারা যান। তাঁর বয়স হয়েছিল ৮৪ বছর।

হাসপাতাল থেকে রাতে খালিদ হোসেনের মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় রাজধানীর মোহাম্মদপুরে তাজমহল রোডে তাঁর নিজ বাসায়। আজ বৃহস্পতিবার ফজর নামাজের পর খালিদ হোসেনের প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয় তাঁর বাসার পাশে বায়তুল আমান মিনার মসজিদে। এরপর সকাল ১০টায় নজরুল ইনস্টিটিউটে তাঁর মরদেহ নেওয়া হয়। সেখানে তাঁকে শ্রদ্ধা জানান নজরুলসংগীতের শিল্পী, তাঁর দীর্ঘদিনের সহকর্মী ও ছাত্রছাত্রী আর শুভানুধ্যায়ীরা। খালিদ হোসেনের দ্বিতীয় জানাজা অনুষ্ঠিত হয় সেখানে।

নজরুল ইনস্টিটিউট থেকে খালিদ হোসেনের মরদেহ নিয়ে কুষ্টিয়ার উদ্দেশে রওনা দেওয়া হয়। সেখানে রাতে তারাবির নামাজের পর কোর্টপাড়া সদর কবরস্থানে মায়ের কবরে তাঁকে দাফন করা হবে।

খালিদ হোসেন বেশ কয়েক বছর ধরে হৃদ্‌রোগে ভুগছিলেন। কিছুদিন আগে তাঁর কিডনির জটিলতা বেড়ে যায়। ফুসফুসেও সমস্যা হচ্ছিল। পাশাপাশি বার্ধক্যজনিত বিভিন্ন সমস্যা ছিল।

খালিদ হোসেনের জন্ম ১৯৩৫ সালের ৪ ডিসেম্বর। তখন তাঁরা ছিলেন ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কৃষ্ণনগরে। দেশ বিভাগের পর মা-বাবার সঙ্গে তিনি চলে আসেন কুষ্টিয়ার কোর্টপাড়ায়। ১৯৬৪ সাল থেকে তিনি স্থায়ীভাবে ঢাকায় ছিলেন।

নজরুলসংগীতের শিক্ষকতার সঙ্গে জড়িত ছিলেন দীর্ঘদিন। দেশে ও বিদেশে রয়েছে তাঁর অসংখ্য ছাত্রছাত্রী। তিনি একুশে পদক পেয়েছেন ২০০০ সালে। এ ছাড়া পেয়েছেন নজরুল একাডেমি পদক, শিল্পকলা একাডেমি পদক, কলকাতা থেকে চুরুলিয়া পদকসহ অসংখ্য সম্মাননা।

খালিদ হোসেনের গাওয়া নজরুলসংগীতের ছয়টি অ্যালবাম প্রকাশিত হয়েছে। আরও আছে একটি আধুনিক গানের অ্যালবাম ও ইসলামি গানের ১২টি অ্যালবাম। খালিদ হোসেন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, জাতীয় কবি কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় এবং দেশের সব মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড ও বাংলাদেশ টেক্সট বুক বোর্ডে সংগীত নিয়ে প্রশিক্ষক ও নিরীক্ষকের দায়িত্ব পালন করেছেন। নজরুল ইনস্টিটিউটে নজরুলসংগীতের আদি সুরভিত্তিক নজরুল স্বরলিপি প্রমাণীকরণ পরিষদের সদস্য ছিলেন তিনি।