নজরুলসাহিত্য নিয়ে নাটক ও সিনেমার সুযোগ আছে

>জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের গান বাঙালির প্রাণের সম্পদ। তাঁর গল্প থেকে হয়েছে নাটক ও চলচ্চিত্র। কিন্তু বিনোদনের সর্বস্তরে তাঁর সৃষ্টিকর্মের চর্চা কেমন হচ্ছে?

আরও সিনেমা হওয়া উচিত

মতিন রহমান, চলচ্চিত্র পরিচালক
মতিন রহমান, চলচ্চিত্র পরিচালক

আমাদের দেশের চলচ্চিত্রে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামকে নিয়ে সেই অর্থে কোনো কাজই হচ্ছে না। কোন গল্পটি চলচ্চিত্রের জন্য উপযোগী, সেটা নিয়ে কারও কোনো ভাবনা নেই। তাঁর সাহিত্য নিয়ে অনেক কাজ করার সুযোগ আছে। নজরুলসাহিত্য নিয়ে আরও সিনেমা হওয়া উচিত। জাতীয় কবির কাজের মূল্য যদি তারা বুঝত, হয়তো তাঁকে নিয়েও কাজ করত। বাঙালি নারীর ভালোবাসা নিয়ে প্রচুর সিনেমা হয়েছে। শাবানা, ববিতা অনেক সিনেমায় অভিনয় করেছেন। ‘রাক্ষুসী’র গল্পে দেখলাম একটু ভিন্ন রকম ভাবনা। অন্য রকম ক্লাইমেক্স ছিল, সাধারণ বাংলাদেশের অন্য কোনো সিনেমায় এ রকম দেখিনি। তাই গল্পটা আমাকে আকৃষ্ট করেছিল।

ভালো শিল্পী বের হয়ে আসবে

খায়রুল আনাম শাকিল, সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ নজরুলসংগীত সংস্থা
খায়রুল আনাম শাকিল, সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ নজরুলসংগীত সংস্থা

সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সহায়তায় ঢাকার বাইরে নজরুলসংগীতের কর্মশালা করাচ্ছে নজরুলসংগীত সংস্থা। সেখানকার আগ্রহী তরুণদের শুদ্ধ সুর–বাণীসহ প্রয়োজনীয় বই দিচ্ছি আমরা। এ কাজে ব্যাপক সাড়া পাচ্ছি। সবচেয়ে বেশি অংশগ্রহণ ছিল রংপুরে। সেখানে বিভিন্ন বয়সের শতাধিক ছেলেমেয়ে অংশ নিয়েছিল। তাঁদের ভেতরে নজরুলের গানের ব্যাপারে দারুণ আগ্রহ লক্ষ করেছি। ঢাকার বাইরে যে জেলাগুলোতে প্রশিক্ষণ দিতে গিয়েছিলাম, সেসব জায়গার সংগীতের শিক্ষকদের সঙ্গে ভাবনার আদান-প্রদান করেছি। নজরুলের গানের আদি রেকর্ডগুলো উপস্থাপন করছি। আশা করছি, ভবিষ্যতে তরুণদের ভেতর থেকে ভালো ভালো শিল্পী বের হয়ে আসবে।

বছরজুড়ে অনুষ্ঠান হওয়া দরকার

ফাতেমা তুজ জোহরা, নজরুলসংগীতশিল্পী
ফাতেমা তুজ জোহরা, নজরুলসংগীতশিল্পী

নজরুলসংগীতের চর্চা হচ্ছে না, এমন কথা আমাদের সময়ের শুরুর দিকে প্রায়ই শুনতাম। এখন দৃশ্যপট পাল্টেছে। তরুণেরা নজরুলের চর্চায় আমাদের সময়ের চেয়ে অনেক মনোযোগী, শুধু দরকার বাড়তি পৃষ্ঠপোষকতা। নজরুলের গান তুলতে অনেক সময় লাগে, যা অন্য গানের ক্ষেত্রে হয় না। আমাদের দেশে নজরুলের জন্ম ও মৃত্যুবার্ষিকীতেই বড় পরিসরে কিছু অনুষ্ঠান হয়। বছরজুড়ে নানাভাবে অনুষ্ঠান হওয়া দরকার। একটি চ্যানেলে আমি নজরুলসংগীত নিয়ে সাড়ে তিন বছর অনুষ্ঠান করেছিলাম। সেই অনুষ্ঠানে নজরুলের ৭০০ গান নতুনভাবে গেয়েছেন শিল্পীরা। পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে সেই অনুষ্ঠান হঠাৎ বন্ধ হয়ে যায়। এই ধরনের অনুষ্ঠানের নাকি দর্শক নেই। সব অনুষ্ঠানের তো সমানভাবে দর্শক থাকবে না।

নাটকের জন্য সহায়তা দিতে চেষ্টা করি

মো. আব্দুর রাজ্জাক ভূঞা, নির্বাহী পরিচালক, কবি কাজী নজরুল ইনস্টিটিউট
মো. আব্দুর রাজ্জাক ভূঞা, নির্বাহী পরিচালক, কবি কাজী নজরুল ইনস্টিটিউট

জাতীয় কবির গান, নাচ, কবিতার আবৃত্তির ওপর আমরা প্রশিক্ষণ দিই। নজরুলের গানগুলো রাগনির্ভর। কবির গানের শুদ্ধ বাণী ও সুরের আদি রেডর্ক থেকে ১ হাজার ৩০০ গান আমরা শিগগির বাজারে ছাড়ছি। নজরুলের নাটকের ক্ষেত্রে আমরা এখনো কোনো উদ্যোগ নিতে পারিনি। কেউ যদি কবির গল্প নিয়ে নাটক করে, আমরা তাদের সহায়তা দিতে চেষ্টা করি। মহাকাল নাট্য সম্প্রদায়, ঢাকা আর্ট থিয়েটার ও জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সংগীত ও নাট্যকলা বিভাগ করেছিল। আমরা সহায়তা করেছি।

আরও বেশি চর্চা হওয়া দরকার

অনন্ত হিরা, নির্দেশক
অনন্ত হিরা, নির্দেশক

নজরুলসাহিত্যের ভান্ডার বিশাল। অথচ মঞ্চে মাত্র কয়েকটি প্রযোজনা। তাঁর নাটক, গল্প, উপন্যাস, গীতিনাট্য, গান কত কী। যেকোনো কিছু থেকেই নাটক হতে পারে। কিন্তু যতটা আলো ফেলে নজরুলকে দেখা দরকার, সেটা হয়নি এখানে। অবস্থাটা কাটিয়ে ওঠা দরকার। মঞ্চে নজরুলকে নিয়ে আরও বেশি চর্চা হওয়া দরকার। মঞ্চে নজরুল একরকম অনাবিষ্কৃতই রয়ে গেছেন। নিশ্চয়ই ভবিষ্যতে মঞ্চ নাটকের নির্দেশকেরা তাঁর সাহিত্য নিয়ে কাজ করবেন। যথেষ্ট উপকরণ আছে। তাঁর গল্প, উপন্যাস, এমনকি তাঁর কবিতা ও গান নিয়েও কাজ হতে পারে।

আর কোনো সিনেমার প্রস্তাব পাইনি

পূর্ণিমা, চিত্রনায়িকা
পূর্ণিমা, চিত্রনায়িকা

নজরুলসাহিত্যের গল্প নিয়ে রাক্ষুসী সিনেমায় অভিনয় করেছিলাম। আমার চরিত্রটি ছিল নেতিবাচক। চরিত্রটির জন্য বেশ প্রশংসা পেয়েছিলাম। এরপর নজরুলসাহিত্য নিয়ে আর কোনো সিনেমার প্রস্তাব পাইনি। তবে ছোটবেলা থেকেই নজরুলসংগীতচর্চা করেছি। ঢাকার শিশু একাডেমিতে আমি গান শিখেছি, বিষয় নজরুলসংগীত। সেই চর্চা আমার মধ্যে এখনো আছে। সুযোগ এলে, নজরুলসংগীত রেকর্ড করে প্রকাশ করব।