যে পরিচালকদের প্রতি আগ্রহ তারকাদের

গিয়াস উদ্দিন সেলিম, মোস্তফা সরয়ার ফারুকী, অমিতাভ রেজা, আরিফিন শুভ, বিদ্যা সিনহা মিম, সিয়াম আহমেদ
গিয়াস উদ্দিন সেলিম, মোস্তফা সরয়ার ফারুকী, অমিতাভ রেজা, আরিফিন শুভ, বিদ্যা সিনহা মিম, সিয়াম আহমেদ

নানা কারণে এফডিসিকেন্দ্রিক মূলধারার পরিচালকদের সঙ্গে কাজের আগ্রহ হারাচ্ছেন চলচ্চিত্রের অনেক তারকা। তাঁদের কাজ করার আগ্রহ এখন এফডিসি ঘরানার বাইরের, যাঁরা একটু ভিন্ন ধরনের ছবি নির্মাণ করছেন, পরিচালকের সঙ্গে। বিশেষ করে টেলিভিশন নাটক নির্মাণ করে যাঁরা হাত পাকিয়েছেন, তাঁদের সঙ্গে কাজ করতে চাইছেন তারকারা।

অনেক তারকার অভিযোগ, ১০-১৫ বছর আগেও এফডিসি থেকে নির্মিত বাণিজ্যিক ছবির যেসব পরিচালকের ছবি দেখতে দর্শকেরা হলে হুমড়ি খেয়ে পড়তেন, এখন তাঁদের ছবি সেভাবে দেখছেন না দর্শক। তাঁদের মধ্যে কোনো কোনো পরিচালকের ছবি নির্মাণের ধরন যুগের সঙ্গে পাল্টায়নি। এফডিসি ঘরানা থেকে একটু বাইরের পরিচালকদের ছবিই এখন মূলত আলোচনায় আসছে। তাঁদের ছবির গল্প, নির্মাণশৈলী এ যুগের। ছবি মুক্তির আগে থেকে প্রচার–প্রচারণায়ও এগিয়ে তাঁরা।

ঢাকাই ছবির নায়িকা বিদ্যা সিনহা মিম বলেন, ‘বর্তমান এফডিসিকেন্দ্রিক পরিচালকদের অসম্মান করছি না। তবে তাঁরা অনেকেই যুগের সঙ্গে নেই। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের সিনেমার সঙ্গে তাল মিলিয়ে তাঁদের সিনেমা হচ্ছে না। তাঁদের ছবির গল্পগুলো বাস্তবসম্মত হচ্ছে না। এতে করে এখনকার তারকারা তাঁদের সঙ্গে কাজের আগ্রহ হারাচ্ছেন।’

এফডিসির বাইরে আলোচিত পরিচালকদের সঙ্গে কাজের ব্যাপারে সাবেক এই লাক্স তারকা বলেন, ‘তাদের ছবির গল্প ভালো, দর্শক উপযোগী। নির্মাণ এ যুগের। শুটিং শুরু হওয়ার আগেই তাঁদের ছবি নিয়ে আলোচনা হয়। মুক্তির আগে প্রচারণার ভিন্ন কৌশল ছবিকে অনেকখানি এগিয়ে দেয়।’

এফডিসিকেন্দ্রিক অনেক পরিচালকের সঙ্গে তারকাদের কাজের অনীহা, সরাসরি এমনটি বলতে চান না আরিফিন শুভ। তিনি বলেন, ‘এফডিসি ঘরানার পরিচালকেরা একসময় ভালো কাজ উপহার দিয়েছেন। সবাই না, কিছু পরিচালকের কাজ এখন হয়তো সময়োপযোগী নয়। গল্প, নির্মাণসহ পুরো ছবির কাজ সময়কে ধরে না করতে পারলে তাঁদের সঙ্গে তো কাজের আগ্রহ হারানোই স্বাভাবিক।’

চলচ্চিত্রপাড়ার অনেকের ধারণা, কয়েক বছরের মধ্যে ঢাকা অ্যাটাক, ডুব, আয়নাবাজি, স্বপ্নজাল, হালদা, ফাগুন হাওয়ায়, দেবী, দহন, পোড়ামন ২, যদি একদিন প্রভৃতি ছবি আলোচনায় আসার পর তারকারা এভাবে ভাবছেন। এই ঘরানার পরিচালকের ছবি সাপলুডু, বিউটি সার্কাস এখনো মুক্তি পায়নি, তার আগেই আলোচনায় এসেছে। এসব কারণে গিয়াস উদ্দিন সেলিম, মোস্তফা সরয়ার ফারুকী, অমিতাভ রেজা, গোলাম সোহরব দোদুল, দীপংকর দীপন, রায়হান রাফি, মুহাম্মদ মোস্তফা কামাল রাজ, রেদোয়ান রনিদের ছবিতে কাজ করতে আগ্রহী হয়ে উঠছেন চলচ্চিত্রের অনেক নায়ক-নায়িকা।

এদিকে এই ঘরানার বাইরের কোনো কোনো পরিচালকের কাজের প্রস্তাব ফিরিয়ে দিতে ভিন্ন ধরনের কৌশলও অবলম্বন করছেন কোনো কোনো তারকা। কয়েকজন অভিনয়শিল্পীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সরাসরি মুখের ওপর প্রস্তাব ফিরিয়ে না দিয়ে ওই সব পরিচালকের কাছে দ্বিগুণ-তিনগুণ সম্মানী চাইছেন তাঁরা। অর্থাৎ ৫ লাখের জায়গায় ১৫ লাখ চাইছেন, যাতে পরিচালকেরা ওই সব তারকাকে নিয়ে ছবি নির্মাণের আগ্রহ হারান।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন নায়িকা বলেন, ‘এক ছবিতে আমি ৩০ লাখ টাকা পারিশ্রমিক চেয়েছি। যাতে আমাকে নিয়ে কাজটি না করেন।’

নায়ক সিয়াম আহমেদ বলেন, ‘বর্তমান সময়ে দর্শক কী ধরনের ছবি চাইছেন, সেই বিষয়টি মাথায় রেখেই যাঁরা ছবি বানাচ্ছেন, তাঁদের সঙ্গে কাজের আগ্রহটা বেশি থাকে।’

পরীমনিকে নিয়ে সবশেষ পুড়ে যায় মন নির্মাণ করেছিলেন এফডিসি ঘরানার পরিচালক অপূর্ব রানা। ছবিটি দর্শক গ্রহণ করেনি। তবে তারকাদের কাজের আগ্রহের বিষয়টির সঙ্গে অনেকটাই একমত হয়ে এই পরিচালক বলেন, ‘এখন দর্শকের রুচির পরিবর্তন হয়েছে। তথাকথিত বাণিজ্যিক ছবি এখন আর চলছে না। এখন সময়োপযোগী ভালো গল্প, ভালো নির্মাণের ছবিতে দর্শক ঝুঁকছেন।’

তারকাদের আগ্রহ প্রসঙ্গে গিয়াস উদ্দিন সেলিম বলেন, ‘তারকাদের এ ধরনের মতমতের কারণও আছে। এফডিসির বাইরে থেকে যাঁরা ছবি নির্মাণ করছেন, তাঁরা লোকাল ও আন্তর্জাতিক মানের ছবির বানানোর চেষ্টা করছেন। তাঁরা আধুনিক সিনেমার সঙ্গে একটু বেশি আপডেটেড। ইন্ডাস্ট্রি যেভাবে চলছে, সেভাবেই চলবে। তবে সেখানকার মানুষের একটু সময়োপযোগী হতে হবে। বিশেষ করে গল্পের দিকে মন দিতে হবে। গল্পে সেই চেয়ারম্যান কিংবা চৌধুরী পরিবার থেকে বের হতে হবে।’

বছর চারেক আগে বদিউল আলম খোকনের রাজা বাবু ছবিটি ব্যবসা করেছিল। তিনি বলেন, যেসব পরিচালকের ছবিতে তারকাদের আগ্রহের কথা বলা হচ্ছে, তাঁদের ছবির প্রচারের বিষয়টি অনেক এগিয়ে। এফডিসিকেন্দ্রিক কিছু পরিচালকের ছবি না চলার দায়ভার আমরা নিতে পারব না। তবে ব্যক্তিগতভাবে আমি গল্প, নির্মাণের ক্ষেত্রে ছাড় দিই না।’