মেয়াদ শেষ, চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নির্বাচন কবে?

বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির গত আসরের নির্বাচন পরিণত হয়েছিল উৎসবে। গত ২৪ মে এই সমিতির মেয়াদ শেষ হয়েছে।
বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির গত আসরের নির্বাচন পরিণত হয়েছিল উৎসবে। গত ২৪ মে এই সমিতির মেয়াদ শেষ হয়েছে।

বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির বর্তমান কমিটির মেয়াদ শেষ হয়েছে গত ২৪ মে। নির্বাচন হওয়ার কথা আগামী আগস্ট মাসে। কিন্তু এখনো তফসিলই ঘোষণা হয়নি। শিল্পী সমিতির সাধারণ সম্পাদকের বক্তব্য, নির্বাচন হতে পারে সেপ্টেম্বরে আর আগস্টের শেষ দিকে ঘোষণা হবে তফসিল।

সমিতির গঠনতন্ত্রের ৮ নম্বর অনুচ্ছেদের (চ)-এ আছে, ‘পূর্ববর্তী কার্যকরী পরিষদের মেয়াদান্তে অতিরিক্ত ৯০ দিনের মধ্যে অবশ্যই নির্বাচন হইতে হইবে।’ সে হিসাবে আগামী ২৪ আগস্টের মধ্যে ২০১৯-২০-এর নির্বাচন হওয়ার কথা। কিন্তু সেই নির্বাচনের তফসিল এখনো ঘোষণা হয়নি। শিল্পী সমিতির বিদায়ী সাধারণ সম্পাদক জায়েদ খান বলেন, ‘গঠনতন্ত্র অনুযায়ী আগামী আগস্টের মধ্যেই নির্বাচন হওয়ার কথা। কিন্তু আগস্ট শোকের মাস। তাই এক মাস পিছিয়ে সেপ্টেম্বর মাসে নির্বাচন হতে পারে। সে ক্ষেত্রে আগস্টের শেষ দিকে হয়তো তফসিল ঘোষণা হবে।’

গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ২৪ আগস্টের মধ্যে নির্বাচন হওয়ার কথা। সেপ্টেম্বরে নির্বাচন হলে গঠনতন্ত্রের বাইরে চলে যাবে কি না—এমন প্রশ্নে সমিতির বিদায়ী সভাপতি মিশা সওদাগর বলেন, ‘না, আমরা তিন মাসের মধ্যেই নির্বাচন দিতে চাই। তিন মাসের বাইরে কোনোভাবেই যাওয়া যাবে না। আমরা নির্বাচন নিয়ে কোনো বিতর্ক হওয়ার সুযোগ দিতে চাই না। এ কারণে আগস্টের শুরুর দিকে আমরা তফসিল ঘোষণা করে দেব।’

তফসিল ঘোষণার ক্ষেত্রে সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও সভাপতির বক্তব্য দুই রকমের। একজন বলেছেন আগস্ট মাসের শেষের দিকের কথা, অন্যজন বললেন প্রথম দিকের কথা।

এই কমিটির সময়ে গঠনতন্ত্রের বাইরে গিয়ে পূর্ণ সদস্য করার অভিযোগ আছে। শিল্পী সমিতির গঠনতন্ত্র ৬ এর (ক)-তে আছে, একজন অভিনয়শিল্পী বিতর্কিত নয় এমন পাঁচটি ছবির গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে অভিনয় করা থাকলে পূর্ণ সদস্যের জন্য আবেদন করতে পারবেন। এরপর কার্যকরী পরিষদের অনুমতিক্রমে সেই ব্যক্তি শিল্পী সমিতির পূর্ণ সদস্য হতে পারবেন। মিশা সওদাগর অবশ্য জানান, কিন্তু বিগত কমিটির সময় গঠনতন্ত্রের বাইরে গিয়ে অনেকেই পূর্ণ সদস্যপদ লাভ করেছেন। বিষয়টি নিয়ে গত ২৮ ফেব্রুয়ারি শিল্পী সমিতির কার্যকরী পরিষদ ও উপদেষ্টামণ্ডলী মিলে যাচাই-বাছাইয়ের জন্য সাক্ষাৎকার নিয়েছে। সমিতির মোট ৬২৪ জন পূর্ণ সদস্য থেকে ২৬০ জন সদস্যের সাক্ষাত্কার নেওয়া হয়েছে। ১৫০ জন পূর্ণ সদস্য থেকে বাদ পড়তে পারেন। বাদ পড়া সদস্যরা সহযোগী সদস্য থাকবেন। কিন্তু সমিতিতে ভোটাধিকার হারাবেন।

মিশা সওদাগর বলেন, ‘তফসিল ঘোষণার আগেই যাচাই-বাছাই করে সবশেষে পূর্ণ সদস্যের তালিকা প্রকাশ করা হবে। তারও একটা আনুষ্ঠানিকতা আছে। এই বিষয়টিসহ নির্বাচনের আগের সব আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে আগস্টের শুরুর দিকে তফসিল ঘোষণার কাজটি করা হবে।’

চলচ্চিত্রপাড়ায় নানা ধরনের গুঞ্জন থাকলেও শেষ পর্যন্ত আগামী নির্বাচনে আবারও মিশা-জায়েদ প্যানেল হচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে মিশা সওদাগর মুখ না খুললেও জায়েদ খান বলেন, ‘সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে আবারও মিশা সওদাগর ও আমি নির্বাচন করব। এটি নিশ্চিত।’

এদিকে আগামী শিল্পী সমিতির নির্বাচনে সভাপতি পদে শাকিব খান ও সাধারণ সম্পাদক পদে ডি এ তায়েব মিলে নতুন প্যানেল দেবেন—প্রায় ছয় মাস আগেই এমন খবরে চলচ্চিত্রপাড়ায় খানিকটা উত্তাপ ছড়িয়েছিল। কিন্তু নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসছে, সেই উত্তাপ অনেকটাই নিস্তেজ হয়ে আসছে। শাকিব খান নাকি নির্বাচন করবেন না। সেই আভাস খানিকটা তিনি নিজেও দিলেন। শাকিব বলেন, ‘শিল্পী সমিতির নির্বাচনে আমার দাঁড়ানোর দরকার আছে বলে আমি মনে করি না। কারণ আমি শাকিব খান শিল্পী সমিতির সভাপতি হলেই কী, না হলেই-বা কী। আমি তো আমার মতো কাজ করে যাচ্ছি। সব চেষ্টা দিয়ে আমি একাই মৃতপ্রায় ইন্ডাস্ট্রিকে বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা করে যাচ্ছি। আমি কাজে বিশ্বাসী।’

ঢাকাই ছবির এই নায়কের প্রশ্ন—যাঁরা নেতা হয়েছেন, তাঁরা চলচ্চিত্র বাঁচাতে গত দুই বছরে কী করছেন? তিনি বলেন, ‘মুখে বড় বড় বুলি ছড়ালে হবে না। নেতার মতো চলচ্চিত্রের জন্যও কাজ করে দেখাতে হবে।’

তবে চলচ্চিত্রপাড়ায় কেউ কেউ বলছেন, শাকিব-তায়েব প্যানেল নয়, মিশা-জায়েদ প্যানেলের বিপরীতে ওমর সানী-অমিত হাসান প্যানেল প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবে। এ ব্যাপারে অমিত হাসানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে মুঠোফোনে প্রথম আলোকে তিনি বলেন, ‘শাকিব খান নির্বাচন করলে তাঁর সঙ্গে সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী হব। তা না হলো আমি নিজেই সভাপতি প্রার্থী। তবে কার সঙ্গে প্যানেল করব, এখনই বলব না। ঈদের পরপরই জানিয়ে দেব।’