নাটক দেখার আগ্রহ এখন শূন্যের কোঠায়

বিপাশা হায়াত
বিপাশা হায়াত
>

যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের ট্রান্সফর্ম গ্যালারিতে শুরু হয়েছে বাংলাদেশের অভিনয়শিল্পী ও চিত্রকর বিপাশা হায়াতের চিত্র প্রদর্শনী। সেখান থেকে ঈদের আগেই ফেরেন তিনি। চিত্রকলা, এখনকার টেলিভিশন নাটক, নিজের লেখালেখি ও পরিচালনা নিয়ে প্রথম আলোর সঙ্গে কথা বলেন তিনি।

কেমন কাটল এবারের ঈদ?
বেশ ভালোই কেটেছে। বাসায় ছিলাম। আত্মীয়-পরিজন ও বন্ধুরা এসেছিল। তাদের সঙ্গে সুন্দর সময় পার করেছি।

এই ঈদে কোন নাটক এবং কার অভিনয় আপনাকে মুগ্ধ করেছে?
ঈদের প্রথম দিন টেলিভিশন দেখা হয়নি। দ্বিতীয় দিন তৌকীর টেলিভিশন চালু করলে কিছুক্ষণ নাটক দেখার চেষ্টা করি। কিন্তু শেষ করতে পারিনি। হতাশাজনক। চ্যানেল ঘুরিয়ে আরও দেখার চেষ্টা করলাম, ঘুরেফিরে কয়েকজনকে দেখলাম। মনে হলো, অভিনয় জানা অভিনয়শিল্পীর খুব অভাব। শুনেছি, একেকজন ১০ থেকে ২০টি নাটকেও অভিনয় করছেন! একেক নাটকে চরিত্র তো ভিন্ন। তাহলে তার লুকও তো ভিন্ন হতে হবে, তাই না? দর্শক হিসেবে নাটকগুলো আমার মনের খোরাক মেটাতে পারছে না। তা ছাড়া টেলিভিশন দেখার জন্য যে ভালোবাসা ও শ্রদ্ধাবোধ থাকার দরকার, তা আমার মধ্যে এখন আর নেই।

কেন, কবে থেকে আপনার আগ্রহ কমেছে?
বছর সাত-আট হবে। নাটক দেখার আগ্রহ এখন শূন্যের কোঠায়। ঈদের পরদিন তৌকীর টেলিভিশন চালানোর পর নাটকটা চলছিল ভালোই, হঠাৎ দেখি কী বলতে চাচ্ছে কিছুই বুঝতে পারছি না। সংলাপগুলো অন্তঃসারশূন্য, দর্শনশূন্য। প্রেম-ভালোবাসা, তাও আবার এত প্রশ্নবিদ্ধ, যুক্তির অভাব সবখানে। শুধু সুন্দর আলো আর চমৎকার কিছু শট নেওয়াই তো নাটক নয়।

ঈদের আগে যুক্তরাষ্ট্রের চিত্র প্রদর্শনী থেকে এলেন। কেমন বোধ করছেন?
এটি আমার একক প্রদর্শনী। শুরু হয় ১৬ মে। ১১ মে আমি গিয়েছিলাম। সেখানে আমার ৪৬টি চিত্রকর্ম প্রদর্শিত হয়েছে। দেশের বাইরে এমন একক প্রদর্শনী অনেক উৎসাহ ও অনুপ্রেরণার।

অভিনয়ে আপনাকে আর দেখাই যাচ্ছে না। এখন কি আঁকাআঁকিই সব?
এখন পুরোপুরি আঁকায় মনোযোগ দিয়েছি। তবে অভিনয়কেও ভালোবাসি। অভিনয়ে আমি যখন একজন মানুষের বঞ্চনা বা আনন্দের কথা বলি, ছবি আঁকার সময় সেটাই আবার অন্য ধরনের অনুভূতি দেয়। অনেক সময় ছবির বিষয়বস্তু থেকে নাটক লেখার অনুপ্রেরণাও পাই।

অভিনয়শিল্পীর পরিচিতির কারণে চিত্রশিল্পী বিপাশা হায়াতের ওপর কি বাড়তি আলো পড়ে?
বিদেশে দেখেছি, লেখালেখি ও অভিনয় করি বলে সবাই আমাকে বাড়তি সম্মান করেন। শিল্পী হিসেবে আমার ভ্রমণকে তাঁরা মোটেও হালকা চোখে দেখেন না। ২০ বছর ধরে লিখছি। বাংলাদেশের কিছু মানুষের কাছে এ-ও শুনেছি, কী দরকার ছিল পেইন্টিংয়ে আসার। মাস্টার্স যখন পেইন্টিংয়ে করেছি, তখনই ভেবেছি, পেইন্টিংকে অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজ হিসেবে দেখব। এটি আমার মনোজগৎকে প্রকাশ করবে। পেইন্টিংয়ের মধ্য দিয়ে জীবনের অর্থ খোঁজার চেষ্টা করি।

অভিনয় থেকে দূরে সরে আছেন কেন?

যতটা অনুপ্রাণিত হওয়া দরকার, কোনো চরিত্র বা গল্পে সেটা না পেলে আমি সেসবে অভিনয় করি না। আমি সব সময় খুঁজি একটা সুন্দর গল্প, ভালো পরিচালক, ভালো সহশিল্পীদের, যাঁরা নাটক ভালোবাসেন। নাটক হতে হবে দেশ ও মানুষের জন্য প্রয়োজনীয়। সমাজের পরিবর্তনের জন্য।

নিজের লেখার ভেতরে সেই বিষয়গুলো তো তুলে আনতে পারেন?
এবারের ঈদে একটাও লিখিনি। কোনো চ্যানেল থেকে আমাদের বলা হয়নি। আমরা তো নিজেরা গিয়ে বলি না, আমাদের নাটক লিখতে দেন। আমরা মনে করি, যেদিন প্রয়োজন মনে করে সম্মান দিয়ে ডেকে নিয়ে যাবে, সেদিন লিখব।

ভালো নাটক তাহলে হচ্ছে না?
ব্যাকরণগতভাবে নাটক বলতে যা বোঝায়, আমি সেটাই দেখতে চাই। শুধু সংলাপ নয়, নাটক আরও বড় কিছু। নাট্যকারদের কি আমরা ব্যবহার করতে পারছি? এখন পরিচালকদের বলে দেওয়া হয়, কোন শিল্পীকে নিতে হবে, ফেসবুকে তাঁর অনেক ফ্যান-ফলোয়ার আছে। অভিনয় নিয়ে কিন্তু কথা হচ্ছে না। চিকিৎসককে যদি বলা হয়, বিমান চালাবেন কিংবা পাইলটকে যদি বলা হয় অস্ত্রোপচার করবেন, তাহলে যা হওয়ার, এখন তা-ই হচ্ছে।