ভূতের বানানো ছবি 'দ্য ডিরেক্টর'

কামরুজ্জামান কামু
কামরুজ্জামান কামু

প্রথমবারের মতো বাংলাদেশের একটা পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র সিনেমা হল বা টেলিভিশনের বদলে ইউটিউব চ্যানেলে মুক্তি পেয়েছে। ৫ জুন ঈদের দিন রাত ১০টায় সান বিডিটিউব চ্যানেল থেকে বহুল আলোচিত দ্য ডিরেক্টর ছবিটি সরাসরি সম্প্রচার করা হয়। এখন যেকোনো বিনোদনপ্রিয় মানুষ টিকিট না কেটেই বিনা পয়সায় ঘরে বসে দুই ঘণ্টার ছবিটা আরামসে দেখে নিতে পারেন।

এক যুগে নানা চড়াই-উতরাই পার হয়ে অবশেষে ছবিটাকে পৃথিবীর দর্শকের দোরগোড়ায় আনতে পেরে প্রযোজক ও পরিচালক হিসেবে আমি মহা আনন্দিত। অন্য কোনো মাধ্যমে বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বে ছড়িয়ে থাকা বাংলা ভাষাভাষীদের মধ্যে এত দ্রুত ছবিটিকে নিয়ে যাওয়া সম্ভব ছিল না।

ইউটিউবে ছাড়ার পর থেকেই দর্শকের আগ্রহ ক্রমে বাড়ছে। অনলাইনের ভাষায় বলতে গেলে, একধরনের ভাইরাল স্বভাব আছে এই ছবির মধ্যে। আমি নিজে এই ছবির বৈশিষ্ট্যগুলোকে এভাবে চিহ্নিত করি, এটা অস্থির, উড়াধুড়া, হঠকারী, উড়নচণ্ডী, এলোপাতাড়ি, লাফাঙ্গা ও টালমাটাল ভঙ্গির একটা ছবি। এ ছবির চরিত্রেরা বাস্তবের না রূপকথার, আপনি ধাঁধায় পড়ে যাবেন। গল্পের মধ্যে ঢুকতে ঢুকতে দর্শক গল্পের খেই হারিয়ে এক মহাহুলুস্থুলের ভেতর ঢুকে পড়েন। এটা কোনো একরৈখিক গল্পের ছবি নয়। মারজুক-পপির এক গল্প। মোশাররফ-সুইটি-নাফিজার আরেক গল্প। পাশাপাশি কোনো এক দৈবনির্দেশনায় গল্প বানাতে বানাতে কামুও হয়ে গেছেন এই গল্পের একটা প্রধান চরিত্র।

দ্য ডিরেক্টর ছবিতে মারজুক রাসেল ও পপি
দ্য ডিরেক্টর ছবিতে মারজুক রাসেল ও পপি

ছবিটার কাজ শুরু করি সম্ভবত ২০০৮ সালে। প্রথম মোশাররফ করিম, তানভিন সুইটি আর নাফিজার গল্পটার শুটিং করে ফেলি। একটা দাম্পত্যের গল্প। তখন ইচ্ছা ছিল ২০০৬ সালে বানানো আমার স্ক্রিপ্টরাইটার–এর মতো ৪৫ মিনিটের আরেকটা শর্ট ফিল্ম বানাব। কিন্তু সম্পাদনার টেবিলে বসার পর ফুটেজ দেখতে দেখতে আমার মাথায় ভূত চাপল—স্বল্প নয়, আমি পূর্ণদৈর্ঘ্য ছবি বানিয়ে ফেলি না কেন! এরপর ভূতের নির্দেশে ছবির জন্য গান বানালাম। মারজুক আর মমতাজ আপা দ্বৈতকণ্ঠে গান গাইলেন। গল্প আরও বড় করলাম। শুটিং করলাম মারজুক আর চিত্রনায়িকা পপিকে নিয়ে। বোটানিক্যাল গার্ডেনে তাঁদের নাচের দৃশ্য ধারণ করলাম। কিন্তু গল্প জোড়া দিয়ে দেখি গল্প তো দাঁড়াল না। এদিকে টাকা নেই, ছবি শেষ করি কীভাবে! পাত্রপাত্রীকে পারিশ্রমিক দিই কেমনে! ডুবতে ডুবতে এবার আমি নিজেকেই আঁকড়ে ধরলাম। আবার সমান্তরাল গল্প বুনে নিজেই হয়ে গেলাম ছবির পোর্টাগনিস্ট। কিন্তু ছবি আটকে গেল সেন্সর বোর্ডে। ছবির গল্প আর আমার গল্প একাকার হয়ে গেল! জীবনও নাছোড়, আমিও নাছোড়! তারপর যে দীর্ঘ আন্দোলনের গল্প সেটা অনেকেই জানেন। একটা অযুক্তি আর আলেয়ার জগতে হারিয়ে যাওয়া চরিত্রের দিগ্‌ভ্রান্তির নাম দ্য ডিরেক্টর। এটা আমার নয়, ভূতের বানানো ছবি! এখন ‘দ্য ডিরেক্টর’ লিখে ইউটিউবে সার্চ দিলেই ছবিটা সামনে চলে আসে। দেখার পরে বিনোদিত হয়ে কেউ যদি এই পরিচালকের পরবর্তী ছবির ফান্ডে ডোনেট করতে চান, তো তাঁর জন্য ছবির ওপরে ডান কোনায় লিঙ্ক দেওয়া আছে। ‘উই আওয়ার্স ক্রাউড ফান্ডিং’-এর মাধ্যমে ডিরেক্টরের পরের ছবির জন্য ডোনেট করা যাবে। সব দর্শকের প্রতি ভালোবাসা।