ক্রিকেট-কন্যারা

বিশ্বকাপ ক্রিকেটের উন্মাদনা এখন তুঙ্গে। খেলার মাঠের ২২ গজ, স্টেডিয়াম, গ্যালারির উত্তেজনাকে ছাপিয়ে এখন ঘরে ঘরে, চায়ের দোকানে, অফিসে, মিটিংয়ে ছড়িয়ে গেছে আলোচনা–সমালোচনা। এসব আলোচনা আর তর্ক–বিতর্ককে উসকে দেয় প্রতিটি ম্যাচের শুরুতে, বিরতিতে ও শেষে সম্প্রচারিত ম্যাচের বিশ্লেষণধর্মী অনুষ্ঠানগুলো। এগুলোর জনপ্রিয়তাও কিন্তু কম নয়। মাছরাঙা টেলিভিশনে বিশ্বকাপ ক্রিকেট ঘিরে সরাসরি সম্প্রচারিত হয় ‘এক্সপার্ট প্রেডিকশন’ আর ‘পাওয়ার প্লে’ নামের দুটি অনুষ্ঠান। এর একটির সঞ্চালক মারিয়া নূর, অন্যটির শ্রাবণ্য তৌহিদা। আজ আমরা জানব তাঁদের গল্প, শুনব ক্রিকেট নিয়ে তাঁদের ভালো লাগার কথা।
মারিয়া নূর। ছবি: কবির হোসেন
মারিয়া নূর। ছবি: কবির হোসেন

সময় মেলানো খুব কঠিন এখন। একদম ঘড়ি ধরে চলতে হয়। তবে ইংল্যান্ডে বৃষ্টি শুরু হলে, বাংলাদেশে থাকা মারিয়া আর শ্রাবণ্যর শিডিউল একটু এদিক–সেদিক হয়ে যায়। বাংলাদেশের সময়ের চেয়েও এখন তাঁদের কাছে ইংল্যান্ডের সময় মেনে চলা জরুরি হয়ে উঠেছে। সেই সময় ধরেই ‘লাইভ’ হতে হয় তাঁদের, সেই সময় মেনেই হয় ‘প্যাক–আপ’। এমনকি ঈদ, ছুটির দিন, ঘোরাফেরা, পরিবারকে সময় দেওয়া—সব এখন ইংল্যান্ডের আবহাওয়া আর দিন–রাতের ওপর নির্ভর করছে। কারণ, সেখানে অনুষ্ঠিত ক্রিকেট বিশ্বকাপের সঙ্গে এই তিন ক্রিকেট–কন্যা জড়িয়ে আছেন ওতপ্রোতভাবে।

 শুরু করি মারিয়া নূরকে দিয়ে। চলতি বিশ্বকাপ ক্রিকেটের মৌসুমে তিনি মাছরাঙা টেলিভিশনে ‘ক্রিকেট প্রেডিকশন’ নামের একটি অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করছেন। এই অনুষ্ঠানে মারিয়া কথা বলেন বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়কদের সঙ্গে। তবে শুরু থেকেই কিন্তু মারিয়াকে এই ধরনের অনুষ্ঠানে দেখা যেত না। ক্যারিয়ারের প্রথম দিকে রেডিওতে কথাবন্ধু বা আরজে হিসেবে পরিচিতি পান তিনি। এরপর ভ্রমণবিষয়ক অনুষ্ঠান উপস্থাপনায় মোড় ঘোরান। এরপর আসে ক্রিকেট নিয়ে বিশ্লেষণধর্মী অনুষ্ঠানগুলোতে অংশগ্রহণ। কয়েক বছর ধরে এই ক্রিকেটবিষয়ক অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করেই মারিয়াকে এখন অনেকে ‘ক্রিকেট–কন্যা’ বলে ডাকেন। আরজে, ভ্রমণবিষয়ক অনুষ্ঠানের উপস্থাপনা ছেড়ে কেন ক্রিকেট নিয়ে মেতে উঠলেন? মারিয়া এর ব্যাখ্যা দেন এভাবে, ক্রিকেট ও ক্রিকেটারদের জনপ্রিয়তা বাংলাদেশে অন্য সব খেলা ও খেলোয়াড়ের চেয়ে একটু বেশিই। তা ছাড়া বিশ্ব ক্রিকেট আসরেও আস্তে আস্তে বাংলাদেশ দাপুটে হয়ে উঠছে। সে কারণে এই খেলাকে কেন্দ্র করে যে যা–ই করুক, সেটাই স্পটলাইটে থাকে বেশি। টেলিভিশন দর্শকের কাছে খুব দ্রুত জনপ্রিয়তা পেয়ে যায়। তাই এই মাধ্যম ঘিরে আকর্ষণটা সবার একটু বেশিই।’

শ্রাবণ্য তৌহিদা
শ্রাবণ্য তৌহিদা

ক্রিকেট–বিষয়ক অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করতে গিয়ে মজার সব অভিজ্ঞতা হচ্ছে মারিয়া নূরের। একটা ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে মারিয়া বলেন, ‘বাসা থেকে বের হয়েই দেখি রাস্তায় তীব্র যানজট। পৌনে পাঁচটায় যে করেই হোক অনুষ্ঠান ধরতে হবে। কারণ ক্রিকেট–বিষয়ক অনুষ্ঠানগুলো সাধারণত “লাইভ” হয়, তাই দেরি করার কোনো সুযোগই থাকে না। আমাকে ধানমন্ডি থেকে যেতে হবে মিরপুর স্টেডিয়ামে। কিন্তু কোনো গাড়িই তো আগায় না। কোনো উপায় না পেয়ে গাড়ি থেকে নেমে শুরু করি হাঁটা। হাই হিল পরে বেশি দূর যাওয়া যায় না। বাধ্য হয়ে জুতা খুলে হাতে নিয়ে গাউনটা ধরে দিলাম দৌড়। রাস্তায় লোকজন তাকাচ্ছে আর বলছে, মারিয়া না? কী হয়েছে? এভাবে দৌড়াচ্ছে কেন? মাঠে যাওয়ার পর জানতে পারি বিলম্বিত ম্যাচ, তাই শো শুরু হতেও আরও এক ঘণ্টা দেরি হবে। কেমন লাগে বলেন!’

এবার বলি শ্রাবণ্য তৌহিদার কথা। চিকিৎসাশাস্ত্রে পড়াশোনা করেছেন। বর্তমানে তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজে মেডিসিন বিভাগে এফসিপিএস–এর ফাইনাল পার্টে পড়ছেন। পাশাপাশি একই জায়গায় ফরেনসিক মেডিসিনের প্রভাষক তিনি। কিন্তু ছোটবেলা থেকে খেলার প্রতি তাঁর তুমুল আগ্রহ। ফুটবল ও ক্রিকেট উপভোগ করেন। পাঁচ বছর আগে লাইফস্টাইল–বিষয়ক অনুষ্ঠান উপস্থাপনার মধ্য দিয়ে টেলিভিশনে কাজ শুরু করেন। অল্প কিছুদিন কাজ করার পর গাজী টিভিতে ক্রিকেট–বিষয়ক অনুষ্ঠান উপস্থাপনার বিজ্ঞাপন চোখে পড়ে। আবেদন করেন। টিকেও যান। সেই থেকে শুরু। ২০১৫ সালের প্রথমবার স্টুডিওতে বসে বিশ্বকাপ ক্রিকেট নিয়ে প্রচারিত অনুষ্ঠানের উপস্থাপনা করেন। এরপর স্টুডিও থেকে বেরিয়ে একসময় মাঠে গিয়েও মাইক্রোফোন হাতে সঞ্চালক হিসেবে পরিচিত পান শ্রাবণ্য। এবার মাছরাঙা টেলিভিশনে শ্রাবণ্য খেলার বিরতিতে ‘পাওয়ার প্লে’ আর খেলার শেষে ‘ম্যাচ রিভিউ’ নামের দুটি অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেছেন।

ক্রিকেট নিয়ে শ্রাবণ্যর অনেক ভালো লাগার অর্জন যেমন আছে, তেমন মন খারাপ করা অনেক অভিজ্ঞতাও রয়েছে। জানালেন, দেশের মাঠে যখন কোনো খেলোয়াড়ের সঙ্গে কথা বলি, মাঝেমধ্যে তখন কানে ভেসে আসে ‘ভুয়া ভুয়া’ আওয়াজ। খুব মন খারাপ হতো একসময়। গত বিপিএল করার সময় থেকে অবশ্য পরিস্থিতি বদলেছে। এখন আর তেমনটা শোনা যায় না। চার বছর আগে যখন শুরু করেছিলাম, তখন তো অনেকে এও বলতেন, মেয়েরা আবার ক্রিকেটের অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করে কীভাবে? তাঁদের অনেকেই অবশ্য এবার আমাদের প্রশংসা করছেন। এই জয়টা ঠিক ম্যাচ জেতার মতো আনন্দ দেয় আমাকে।’