আমার সন্তানদের চোখে আমি হিরো নই: আয়ুষ্মান খুড়ানা

আয়ুষ্মান খুড়ানা
আয়ুষ্মান খুড়ানা

একদিকে ক্যারিয়ারের সাফল্যের জয়গান, অন্যদিকে স্ত্রীর জীবন-মরণ সংগ্রাম। সবকিছু সুন্দরভাবে সামলেছেন আয়ুষ্মান খুড়ানা। বলিউডের নায়ক আয়ুষ্মানের সঙ্গে এক নির্ভেজাল আড্ডায় প্রথম আলোর মুম্বাই প্রতিনিধি দেবারতি ভট্টাচার্য। আড্ডা বসেছিল তাঁরই ভ্যানিটি ভ্যানে।

প্রথমেই আন্ধাধুন ছবির সাফল্যের জন্য অভিনন্দন জানাতে চাই। চীনেও এই ছবি ভালো ব্যবসা করেছে—
ধন্যবাদ। সত্যি ভাবিনি চীনে এত ভালো ব্যবসা করবে। এখানে ভালো সাড়া পাব আশা করেছিলাম।

আপনাকে আর্টিকেল ফিফটিন ছবিতে একজন পুলিশ কর্মকর্তার চরিত্রে দেখা গেছে। প্রথমবার এই ধরনের সিরিয়াস চরিত্রে—
একদমই তা–ই। আমি আগে এই ধরনের চরিত্রে অভিনয় করিনি। আর এটা কোনো বলিউডি বা হলিউডি ছবির মতো একজন পুলিশ অফিসারের গল্প নয়। সত্য ঘটনাকে ঘিরে এই ছবি। দিল্লিতে আমার এক বন্ধু সরকারি চাকুরে। এ ব্যাপারে আমি তাঁর সাহায্য নিয়েছি।

বছরটা আপনার জন্য খুবই বিশেষ হতে চলেছে। কারণ অমিতাভ বচ্চনের সঙ্গে প্রথমবার অভিনয় করতে চলেছেন।

প্রায় সব অভিনেতারই স্বপ্ন থাকে বচ্চন স্যারের সঙ্গে অভিনয় করার। আমিও এর ব্যতিক্রম নই। তাই খুবই উত্তেজিত। আবার নার্ভাসও। তাঁর সামনে দাঁড়িয়ে যেন অভিনয় করতে পারি। তার ওপর সুজিত সরকারের সঙ্গে দ্বিতীয়বার কাজ করতে চলেছি। বচ্চন স্যার, সুজিতদা, আমি—সব মিলিয়ে খুবই ইন্টারেস্টিং কিছু একটা হতে চলেছে। তিন মাস আগে সুজিতদা আমাকে চিত্রনাট্য শোনান। জুলাইয়ে ছবির শুটিং শুরু হবে। নভেম্বরে ছবিটি রিলিজ করবে। সবকিছু খুব তাড়াতাড়ি হচ্ছে।

গত বছর একদিকে বাধাই হো, আন্ধাধুন-এর সাফল্য, অন্যদিকে আপনার স্ত্রী তাহিরার ক্যানসারের সঙ্গে যুদ্ধ—এই কঠিন পরিস্থিতিতে কীভাবে ভারসাম্য রেখে চলেছিলেন?

কোনো পরিস্থিতিতেই আমি অতিরিক্ত খুশি বা অতিরিক্ত দুঃখী হই না। আমি দুইয়ের মধ্যে অবস্থান করি। গত বছরটা আমার জন্য খুবই শিক্ষণীয় ছিল। আর আমার স্ত্রী খুবই পজেটিভ। ও ওর জীবনের কঠিনতম পরিস্থিতিতেও শক্ত থেকেছে। এ সবকিছু আমাকে সাহস জুগিয়েছে। আর তখন আমাদের পরিবারের সবাই মুম্বাইতে ছিল। আমরা খুব হালকা মুডে কাটিয়েছি। আর জীবনে কোনো কিছু নিখুঁত হয় না। পেশাগত বা ব্যক্তিগত যেকোনো ক্ষেত্রেই কিছু অভাববোধ আসতে পারে। যেকোনো পরিস্থিতিকে গ্রহণ করাই জীবন।

সম্প্রতি তাহিরা এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন যে বড় পর্দায় আপনাকে কোনো নায়িকাকে চুমু খেতে দেখলে তিনি নিরাপত্তাহীনতায় ভোগেন। এ ব্যাপারে কী বলতে চান?

হা হা হা (সশব্দে হেসে), আসলে সেই সময় আমরা দুজনে অতটা ম্যাচিওর ছিলাম না। মাত্র ২৫ বছর বয়সে আমাদের বিয়ে হয়েছে। আমি ওর প্রথম বয়ফ্রেন্ড। আর এই বলিউড ইন্ডাস্ট্রি ওর জন্য একদম নতুন ছিল। তাই একটু নিরাপত্তাহীনতা তো থাকবেই। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আমরা এখন অনেক পরিপক্ব।

আর্টিকেল ফিফটিন, অান্ধাধুন
আর্টিকেল ফিফটিন, অান্ধাধুন

সেই সময় আপনি কখনো তাহিরাকে নিয়ে নিরাপত্তাহীনতায় ভোগেননি?

না, না। আসলে তাহিরা ছিল আমাদের কোচিংয়ের সবচেয়ে আকর্ষণীয় মেয়ে। আর আমি ওর ভালো বন্ধু ছিলাম। তাই আমার হাত দিয়ে অনেকে তাহিরাকে প্রেমপত্র পাঠাত। ওরা আমাকে শুধু তাহিরার বন্ধুই ভাবত। তবে ওকে নিয়ে কখনো আমি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগিনি।

বন্ধুত্ব, প্রেম, বিয়ে—এই সুন্দর সফরটা কীভাবে দেখেন?

সত্যি দারুণ এক জার্নি। আমরা জীবনের সবকিছু একসঙ্গে মোকাবিলা করেছি। আমার সাফল্যকে ও (তাহিরা) নিজের সাফল্য হিসেবে দেখেছে। আবার আমার সমস্যাকে ও নিজের সমস্যা ভেবে লড়াই করেছে। আমিও তা–ই করেছি। আমরা একে অপরকে সম্মান করে এসেছি। সব পরিস্থিতিতে একে অপরের হাত ধরে থেকেছি।

ড্রিম গার্ল বলে আপনার একটা ছবি আসছে। আপনার জীবনের ‘ড্রিম গার্ল’ কে?

সে রকম কেউ নেই। তবে একসময়ে প্রীতি জিনতার প্রতি ক্রাশ ছিল। আমার বন্ধুর বাড়িতে প্রীতির পোস্টার লাগাতাম। আসলে ওর বাড়ির লোকেরা খুব একটা কঠোর ছিল না। আর আমার বাড়ির দেয়ালে কোনো বলিউডি নায়িকার ছবি লাগালে বাবা মেরে আমার ছাল ছাড়িয়ে দেবে। আমার বাড়ির দেয়ালে শুধু শাহরুখ আর রেসলারের ছবি লাগানোর অনুমতি ছিল।

অভিনয়ের পাশাপাশি মিউজিক নিয়ে আপনার সমান আগ্রহ। মিউজিক নিয়ে কিছু কি করছেন?

সম্প্রতি ‘জ্যাম সেশানস’ শুরু করেছি। ট্যালেন্ট শোগুলোর মাধ্যমে গায়ক-গায়িকা খুঁজে বের করা হয়। আমার এই প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে ভোকালিস্ট ছাড়া গীতিকার, সংগীত পরিচালক, কম্পোজাররা সুযোগ পাবেন। তাঁরা একে অপরের সঙ্গে জ্যাম করতে পারবেন।

আপনার সন্তানেরা আপনার ছবি দেখে?

আমার কোনো ছবি ওদের দেখার মতো নয়। তবে আমার অভিনীত একটা ছবিই আমার ছেলে দেখেছিল। ছবিটা ছিল দম লাগা কে হাইসা। তবে ওর ভালো লাগেনি। কারণ, শিশুরা রিয়েলিটিতে বিশ্বাস করে না। ওরা পর্দাতে আসল হিরোকে দেখতে চায়। ছবিতে সঞ্জয় মিশ্রা আমাকে জুতা ছুড়ে মারছে, তা ওর ভালো লাগেনি। কিন্তু পর্দায় যখন টাইগার শ্রফকে দেখে দশটা লোককে মেরে কুপোকাত করছে, বরুণ ধাওয়ানের নাচ, সিম্বার রণবীরকে ওদের ভালো লাগে। এরাই ওদের হিরো। আমার সন্তানদের চোখে আমি হিরো নই।

সন্তানের চোখে হিরো হতে চান না?

এখন ওদের চোখে হিরো হব বলে আমি আমার সেনসেবিলিটি থেকে সরে গিয়ে কাজ করতে পারব না। আমার মনে হয়, ওরা বড় হলে আমাকেই হিরো হিসেবে দেখবে।

সামনে থেকে কোনো অভিনেতাকে দেখে আপনি কখনো হতবম্ব হয়েছেন?

একবার একটা টিভি শোতে শাহরুখ খানকে সামনে থেকে দেখি। তখন নিজেকে মনে হচ্ছিল অন্য দুনিয়ার বাসিন্দা।