'বুনোহাঁস' তৈরির সিদ্ধান্ত হয় এক রাতেই: সমরেশ মজুমদার

সমরেশ মজুমদার
সমরেশ মজুমদার

দুই বাংলার জনপ্রিয় ঔপন্যাসিক সমরেশ মজুমদার। তাঁর প্রথম উপন্যাস ‘দৌড়’ প্রকাশিত হয়েছিল ১৯৭৫ সালে। প্রেম-অপ্রেম, রহস্য-থ্রিলার, সামাজিক সব ধরনের লেখায় তাঁর সমান স্বাচ্ছন্দ্য। তাঁর লেখা গল্প নিয়ে অন্তত ২৫টি নাটক এবং আটটি চলচ্চিত্র নির্মিত হয়েছে। জনপ্রিয় এ লেখকের ‘বুনোহাঁস’ উপন্যাস অবলম্বনে একই শিরোনামে একটি চলচ্চিত্র নির্মাণ করছেন কলকাতার নির্মাতা অনিরুদ্ধ রায় চৌধুরী। শুটিংয়ের জন্য সম্প্রতি বাংলাদেশে এসেছিলেন ‘বুনোহাঁস’ ছবির দলের সদস্যরা। তাঁদের সঙ্গে ঢাকায় এসেছিলেন সমরেশ মজুমদারও । ঢাকায় অবস্থানকালে ‘বুনোহাঁস’ ছবিসহ আরও কিছু বিষয় নিয়ে প্রথম আলোর সঙ্গে কথা বলেছেন সমরেশ মজুমদার।

‘বুনোহাঁস’ ছবির শুটিং ঢাকায় কেন?
‘বুনোহাঁস’ উপন্যাসের মূল চরিত্র জন্মগ্রহণ করে ঢাকায়। তাই শুটিংও ঢাকায় করা হয়েছে।

কেমন লাগছে ঢাকা?
সব সময়ই ভালো লাগে। মনে হচ্ছে নিজের বাসাতেই আছি।

‘বুনোহাঁস’ উপন্যাসটি কবে লিখেছিলেন?

২০১২ সালে আমি উপন্যাসটা লিখেছিলাম।

লেখার সময় কি ভেবেছিলেন এ থেকে চলচ্চিত্র হতে পারে?

না, আমি কখনো এমনটা ভাবিনি।

এ উপন্যাস থেকে চলচ্চিত্র তৈরির পেছনের গল্পটা জানতে চাই।

আট মাস আগে পরিচালক অনিরুদ্ধ রায় চৌধুরী আমার অন্য একটি উপন্যাস থেকে ছবি নির্মাণের আগ্রহ প্রকাশ করেন। কিন্তু আমি তাঁকে জানাই, ওই গল্পের চলচ্চিত্র ভালো হবে না। তিনি হতাশ হয়ে চলে যান। সেই রাতেই তিনি ফোন করে আমার কাছে জানতে চাইলেন, আমার কোনো গল্প থেকে তিনি চলচ্চিত্র বানাতে পারেন। আমি তাঁকে ‘বুনোহাঁস’ অবলম্বনে ছবি তৈরির পরামর্শ দিই। সেই রাতে তিনি ‘বুনোহাঁস’ সংগ্রহ করে পড়েন। পরদিন সকালে আমার বাসায় তিনি একটা অ্যাডভান্স চেক নিয়ে আসেন। এভাবে এক রাতের মধ্যে ‘বুনোহাঁস’ ছবি তৈরির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

‘বুনোহাঁস’ চলচ্চিত্রের চরিত্রগুলো নির্বাচন করা হলো কীভাবে?

মূল চরিত্রে কাকে মানাবে সেটা জানার জন্য আমার কাছে পরামর্শ চাইলেন পরিচালক। পত্রিকায় আমি দেবের একটা ছবি দেখেছিলাম। দেবকে দেখে আমার মনে হল ওর মুখের মধ্যে একটা সরল ভাব আছে। তারপর পরিচালককে আমি বলি, ‘তুমি দেবকে দিয়ে কাজটা করাতে পারো। ও গ্রামের ছেলে, সরল চরিত্রের অভিনয়, নাচ, গান, মারপিট—সব ভালোই করতে পারবে বলে মনে হয়। তবে দেব অভিনীত কোনো ছবি আজ অবধি আমি একটিও দেখিনি।’

আপনার দৃষ্টিতে সাহিত্য এবং চলচ্চিত্র...

দুটি আলাদা মিডিয়াম। কাবাব ও কালিয়া একই মাংসের হলেও স্বাদ কিন্তু আলাদা।


‘বুনোহাঁস’ নিয়ে আপনার প্রত্যাশা...

গৌতম ঘোষ আমার ‘কালবেলা’ উপন্যাস থেকে চলচ্চিত্র বানিয়েছিলেন। আমার আরও অনেক গল্প থেকেও চলচ্চিত্র হয়েছে। সেগুলোর বাজেট যদি ২৫ লাখ হয় তাহলে ‘বুনোহাঁস’ ছবির বাজেট অন্তত ১০ কোটি। ছবির বাজেট বেশি থাকলে প্রত্যাশা এমনিই অনেকখানি বেড়ে যায়। আর ভালো পরিচালক, ভালো নায়ক—সব মিলিয়ে প্রত্যাশা তো একটু বেশি হবেই।

আপনার আর কোনো উপন্যাস কি আছে, যা থেকে চলচ্চিত্র হতে পারে?

এটা এখন বলতে পারব না। পরিচালকরাই ভালো বুঝবেন।

আপনার কি কখনো নির্মাতা হওয়ার ইচ্ছে ছিল?

একটা ঘটনা বলি। আমি ৩০টির মতো টিভি নাটক প্রযোজনা করেছি। আমার প্রযোজনায় একটি নাটক করার সময় নির্মাতার জ্বর হলো। জ্বরের কারণে তিনি একদিন নাটকের সেটে আসতে পারলেন না। আমি সেদিন নাটকটির নির্দেশনা দিই। সারা দিন ঠিকঠাকই ছিল। কিন্তু সন্ধ্যায় মনে হলো আমি মারা যাব। একটুও বিশ্রাম নিতে পারিনি। খুব ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলাম। এক দিনেই মনে হলো আমাকে দিয়ে নির্মাতার কাজ হবে না।

আপনার লেখা গল্পের চলচ্চিত্র আপনার কেমন লাগে?

আসলে মেয়ের বিয়ে দেওয়ার পর বাবা যদি চিন্তা করে শ্বশুরবাড়িতে মেয়ে কখন কী দিয়ে ভাত খায়, তাহলে সে বাবা তো মূর্খ।

আপনার লেখা গল্প থেকে এখন আর সিরিয়াল হচ্ছে না কেন?

সিরিয়ালের জন্য আমি এখন আর লেখা দিই না। কারণ দেখা যায়, গল্পের গরু গাছের ওপর উঠে ঘাস খায়। মানে আমার লেখা গল্প চিত্রনাট্যে গিয়ে অনেক পরিবর্তিত হয়ে যায়। কারণ, অনেক সময় অভিনেতা সকালবেলা ঘুম থেকে উঠে পরিচালককে বলেন, ‘আমার পেট ব্যথা, আমি আজ আসব না।’ তখন পরিচালক চিত্রনাট্যকারকে ডেকে জানায় ওই চরিত্র বাদ দিতে। এ রকম প্রায়ই হয়। এর ফলে মূল গল্প হারিয়ে যায়।