কপিরাইটের প্রথম অর্থদণ্ড জি-সিরিজকে

‘নিঝুম অরণ্যে’ ছবিতে সজল ও বাঁধন
‘নিঝুম অরণ্যে’ ছবিতে সজল ও বাঁধন

মূল প্রযোজকের অনুমতি না নিয়ে ইউটিউবে পূর্ণদৈর্ঘ্য বাংলা চলচ্চিত্র ছাড়ার অভিযোগে জি-সিরিজকে জরিমানা করা হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে অভিযোগ, কোনো অনুমতি না নিয়ে ২০১৭ সালে ইমপ্রেস টেলিফিল্মের চলচ্চিত্র ‘নিঝুম অরণ্যে’ জি-সিরিজের কর্তৃপক্ষ নিজেদের ইউটিউব চ্যানেলে তুলেছে। প্রাথমিক তদন্তে অভিযোগ প্রমাণিত হয়। প্রতিষ্ঠানটিকে এক লাখ টাকা জরিমানা করেছে বাংলাদেশ কপিরাইট অফিস। গতকাল বুধবার রাতে প্রথম আলোকে এ তথ্য জানান কপিরাইট অফিসের রেজিস্ট্রার জাফর রাজা চৌধুরী। তিনিই জি-সিরিজের বিরুদ্ধে এই অর্থদণ্ড দিয়েছেন। তিনি জানান, এর আগে সরাসরি এমন অর্থদণ্ড দেওয়ার ঘটনা ঘটেনি। অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় প্রথম এক লাখ টাকা অর্থদণ্ড দেওয়া হয়েছে। সে হিসাবে এটি কপিরাইট অফিসের ইতিহাসে একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা।

কপিরাইট অফিস সূত্রে জানা গেছে, ইমপ্রেস টেলিফিল্ম লিমিটেডের পক্ষে ব্যারিস্টার ওলোরা আফরিন গত ২৪ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ কপিরাইট অফিসে কপিরাইট লঙ্ঘনসংক্রান্ত একটি অভিযোগ দাখিল করেন। যেখানে বলা হয়, ২০১০ সালের ৬ আগস্ট ‘নিঝুম অরণ্যে’ চলচ্চিত্রের অডিও-ভিডিও গানের ভিসিডি ও ডিভিডি বাজারজাতকরণের জন্য জি-সিরিজের স্বত্বাধিকারী নাজমুল হক ভূঁইয়ার সঙ্গে ইমপ্রেস টেলিফিল্ম লিমিটেড চুক্তি করে। কিন্তু জি-সিরিজ চুক্তির শর্ত লঙ্ঘন করে ২০১৭ সালের গত ৯ আগস্ট পুরো চলচ্চিত্রটি প্রতিষ্ঠানটির ইউটিউব চ্যানেলে ছাড়ে। এ ব্যাপারে ইমপ্রেস টেলিফিল্মের কাছ থেকে প্রতিষ্ঠানটি কোনো অনুমতি নেয়নি।

রেজিস্ট্রার অব কপিরাইট জাফর রাজা চৌধুরী জানান, ইমপ্রেস টেলিফিল্ম লিমিটেডের এই অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে শুনানির জন্য উভয় পক্ষকে একাধিকবার নোটিশ করা হয়। গত ১৮ মার্চ উভয় পক্ষের আইনজীবীর উপস্থিতিতে ওই অভিযোগের বিষয়ে শেষ শুনানি গ্রহণ করা হয়। জাফর রাজা চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ‘এ চুক্তিতে মেয়াদের কোনো উল্লেখ ছিল না। ফলে, বাদী কোনো চুক্তি সম্পাদন করে থাকলেও কপিরাইট আইন অনুযায়ী মেয়াদ অতিক্রান্ত হওয়ায় এ চুক্তির এখন আর কোনো বৈধতা নেই। এ ছাড়া বিবাদী এখন চলচ্চিত্রটি যে মাধ্যমে ব্যবহার করছেন, উল্লিখিত চুক্তিতে বিবাদীকে সে অধিকারও দেওয়া হয়নি। বিবাদী ইউটিউব চ্যানেলে চলচ্চিত্রটি প্রদর্শন করে প্রচুর আর্থিক মুনাফা অর্জন করছেন, যা কপিরাইট আইনের লঙ্ঘন এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ। বিষয়টি সুরাহা করার জন্য কপিরাইট অফিসের মধ্যস্থতায় একাধিকবার সমঝোতার উদ্যোগ নেওয়া হয়। কিন্তু বিবাদীর কাছ থেকে আশানুরূপ সাড়া পাওয়া যায়নি।’

গতকাল সন্ধ্যায় জি-সিরিজের স্বত্বাধিকারী নাজমুল হক ভূঁইয়া বলেন, ‘আমরা এখনো আদেশের কপি হাতে পাইনি। পাওয়ার পর আইনজীবীর মাধ্যমে কপিরাইট বোর্ডের কাছে আপিল করব। সেখানে যথাযথ সমাধান না পেলে প্রয়োজনে হাইকোর্টে যাব।’ তিনি জানান, এর আগে নোটিশ পাওয়ার পর ইউটিউব চ্যানেল থেকে ‘নিঝুম অরণ্যে’ ছবিটি সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। এখন আর জি-সিরিজের ইউটিউব চ্যানেলের মাধ্যমে চলচ্চিত্রটি প্রচার করা হচ্ছে না।

কপিরাইট আইন অনুযায়ী কপিরাইটের স্বত্বাধিকারী সম্পূর্ণ বা আংশিক সাধারণভাবে বা শর্ত সাপেক্ষে এবং কপিরাইটের পূর্ণ মেয়াদ বা আংশিক মেয়াদের জন্য স্বত্ব নিয়োগ করতে পারেন। স্বত্ব প্রদানকারী যে পরিমাণ স্বত্ব প্রদান না করেন, ওই স্বত্বের অধিকার তিনি নিজেই সংরক্ষণ করেন। স্বত্ব নিয়োগের ক্ষেত্রে যে স্বত্ব হস্তান্তর করা হয়, হস্তান্তর দলিলে সে স্বত্বের স্পষ্ট উল্লেখ থাকতে হবে। জি-সিরিজের দাখিল করা চুক্তিনামায় ছিল কেবল চলচ্চিত্রটি এবং এর অডিও-ভিডিও গানের ভিসিডি ও ডিভিডি রাইট বাজারজাতকরণের স্বত্ব প্রদান করেছে মূল প্রযোজক। ফলে, চুক্তির শর্তের ব্যত্যয় ঘটিয়ে চলচ্চিত্রটি নিজস্ব ইউটিউব চ্যানেলে সম্প্রচার করে বিবাদী কপিরাইট আইনের লঙ্ঘন করেছেন বলে মন্তব্য করেন কপিরাইট রেজিস্ট্রার। কপিরাইট আইনের ১৯(৫) ধারার উল্লেখ রয়েছে, যদি কোনো স্বত্ব নিয়োগের মেয়াদ উল্লেখ না থাকে, তাহলে উক্ত স্বত্ব নিয়োগের তারিখ পরবর্তী পাঁচ বছরের জন্য কার্যকর থাকবে। জি-সিরিজ ও ইমপ্রেস টেলিফিল্মের চুক্তিনামাতে কোনো মেয়াদের উল্লেখ ছিল না। চুক্তিনামাটি ২০১০ সালের ৬ আগস্ট করা হয়। ফলে, চুক্তিনামার মেয়াদ পাঁচ বছর অতিক্রান্ত হওয়ায় বাংলাদেশ কপিরাইট আইন অনুযায়ী এর আর কোনো কার্যকারিতা নেই।

২০১০ সালের পয়লা বৈশাখে প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায় বাঁধন ও সজল অভিনীত চলচ্চিত্র ‘নিঝুম অরণ্যে’। মুক্তিযুদ্ধ সময়ের গল্প নিয়ে ছবিটি নির্মাণ করেন মুশফিকুর রহমান গুলজার। ছবিতে আরও অভিনয় করেছেন ইলিয়াস কাঞ্চন, চম্পা, আবুল হায়াত প্রমুখ।