জিতলেন নানা, হারলেন তনুশ্রী

নানা পাটেকর ও তনুশ্রী দত্ত
নানা পাটেকর ও তনুশ্রী দত্ত

নানা পাটেকর বিরুদ্ধে তনুশ্রী দত্ত অভিযোগ করে বলেছিলেন, ১০ বছর আগে ২০০৮ সালে ‘হর্ন ওকে প্লিজ’ ছবির একটি আইটেম গানের শুটিংয়ের সময় আপত্তিকরভাবে তাঁর শরীরে হাত দেন নানা পাটেকর। গত বছর অক্টোবর মাসে ঘটনাটি সামনে আসে। এই ছবির সহকারী পরিচালক শাইনি শেঠি আর ছবির সেটে ওই সময় উপস্থিত ছিলেন সাংবাদিক জেনিস সেকিরা। তিনি বলেছেন, তনুশ্রী দত্তের অভিযোগ সত্য। তখন ঘটনাটি চেপে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন কোরিওগ্রাফার গণেশ আচার্য আর পরিচালক রাকেশ সারাঙ্গ। সেই পরামর্শ মানেননি তনুশ্রী দত্ত। শুটিং থেকে চলে যান। তিনি আরও অভিযোগ করেন, এর জন্য একদল লোককে দিয়ে তাঁর গাড়িতে হামলা চালানো হয়। তখন গাড়িতে তাঁর মা-বাবা ছিলেন।

২০১০ সালে নানা পাটেকরকে নিয়ে ডিম্পল কাপাডিয়ার একটি ভিডিও সাক্ষাৎকার ভাইরাল হয়। সেখানে দেখা যায়, নানা পাটেকরের ব্যাপারে ডিম্পল কাপাডিয়া বলেছেন, ‘নানার অনেক কিছুই আপত্তিজনক। মানুষ হিসেবে তিনি ভালো, দয়ালু এবং বন্ধু হিসেবে চমৎকার। কিন্তু তাঁর চরিত্রে কালিমা আছে। আমি তাঁর চরিত্রের অন্ধকার দিক দেখেছি। আমাদের সবার একটা অন্ধকার দিক আছে, যা সবাই সুন্দরভাবে নিরাপদে লুকিয়ে রাখি মনের ভেতরে।’

এরপরই শুরু হয় বিতর্ক আর বিবাদ। সেই যুদ্ধে লিপ্ত হয় বলিউড। ফারহান আখতার, প্রিয়াঙ্কা চোপড়া, সোনম কাপুর, টুইঙ্কেল খান্না, পরিণীতি চোপড়া, রিচা চাড্ডা, স্বরা ভাস্কর, রাভিনা টেন্ডন, আশা ভোসলেসহ আরও অনেকে তনুশ্রী দত্তের পাশে দাঁড়ান। তখন অনেকে বিবৃতি দিয়ে বা নানা পাটেকরের সঙ্গে তোলা ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করে বুঝিয়ে দেন, এই যুদ্ধে তাঁর অবস্থান কার পক্ষে।

মুম্বাইয়ের ওশিওয়ারা পুলিশ স্টেশনে ২০১৮ সালের অক্টোবরে লিখিত অভিযোগ করেন তনুশ্রী দত্ত। যদিও নানা পাটেকর বরাবরই এ অভিযোগ মিথ্যা বলে আসছেন। এমনকি অনুশ্রী দত্তকে মানহানির আইনি নোটিশও পাঠান। নানা পাটেকরের বিরুদ্ধে তনুশ্রীর করা যৌন হয়রানির সেই মামলার ফল মিলেছে গতকাল বৃহস্পতিবার। হেরে গেলেন তনুশ্রী দত্ত। পুলিশ নানা পাটেকরকে নির্দোষ ঘোষণা দিয়েছে। পুলিশের কাছ থেকে ‘ক্লিন’ চিরকুট পেয়েছেন বলিউডের শক্তিমান অভিনেতা নানা পাটেকর।

এই ঘটনায় হতবাক হননি তনুশ্রী দত্ত। এমন কিছু ঘটতে পারে, সেই আশঙ্কা ছিল তাঁর। সাবেক এই ‘মিস ইন্ডিয়া’র আইনজীবী জানিয়েছেন, তাঁরা এই রায় প্রত্যাখ্যান করেছেন। তাঁরা এখন উচ্চ আদালতে যাবেন।

আজ শুক্রবার পিটিআইকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তনুশ্রী দত্ত বলেন, ‘একটা দুর্নীতিগ্রস্ত পুলিশ প্রশাসনের কাছ থেকে আরও বেশি দুর্নীতগ্রস্ত নানা পাটেকর নির্দোষ বিবেচিত হলেন। যদিও এটা আলোর মতো সত্য, তিনি ইন্ডাস্ট্রিতে বেশ কিছু নারীর সঙ্গে যৌন হয়রানিমূলক আচরণ করেছেন। আমি অবাক হইনি। ভারতে জন্মে নারীদের এমন অবস্থার ভেতর দিয়ে যেতে হয়।’

এ সময় তনুশ্রী ধর্ষণ মামলায় অভিযুক্ত বলিউডের অভিনেতা অলোক নাথের ‘ক্লিন চিট’ পাওয়ার ঘটনা উল্লেখ করে বলেন, এভাবে তাঁদের নারীদের আবারও যৌন হেনস্তা করার অনুমোদন দেওয়া হচ্ছে।

৩৫ বছর বয়সী এই নারীর মতে, তিনি একা দূষিত, দুর্নীতিগ্রস্ত সিস্টেমের বিরুদ্ধে লড়াই করেছেন। তিনি আরও বলেন, ‘দিন শেষে আমি একটা আশার মোমবাতি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছি, কিন্তু কোথাও এতটুকু আগুনের দেখা নেই। আমি শুধু দোয়া করি, বাকি জীবনে আমাকে কখনো যেন এমন বিষাক্ত অনুভূতির ভেতর দিয়ে যেতে না হয়। আমি এই নোংরা, জঘন্য পুরুষতান্ত্রিকতা, অর্থ আর ক্ষমতার বিরুদ্ধে লড়াই করতে করতে ক্লান্ত। এভাবে নারীদের মুখ বন্ধ করা আর নিপীড়কদের অনুমোদন দেওয়া বন্ধ করতে হবে। আমি এখনো আশা করি, সত্যের জয় হবে, হবেই।’

অন্যদিকে নানা পাটেকরের আইনজীবী অনিকেত নিকাম বলেছেন, ‘মিথ্যাকে সত্য বানানোর অনেক চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু সত্যিটাই সামনে এসেছে। আমার মক্কেল নির্দোষ আর সেটা এখন প্রমাণিত।’

এই ঘটনায় বলিউড তারকাদের কারও মন্তব্য জানা না গেলেও সংবাদে নিচে অনেকে মন্তব্য করেছেন। তাঁদের অনেকের মতে, বলিউডে যদি ‘#মি টু’ আন্দোলন সফল হয়, তাহলে নাকি বলিউডের ব্যবসা টিকবে না। তাই যৌন হয়রানির কোনো বিচার হবে না। আবার অনেকে লিখেছেন, বলিউড যৌন হয়রানির আখড়া। বলিউডের অনেক নারী তারকা ‘#মি টু’র বিপক্ষে। আবার আরও বলা হচ্ছে, যৌন হয়রানি বিক্রি করেই টিকে আছে বলিউড। অন্যদিকে আবার একপক্ষকে নানা পাটেকরের ইমেজ পুনরুদ্ধারের বিষয়ে আগ্রহী হতে দেখা গেছে।