বাজেটে কমেছে সংস্কৃতিতে বরাদ্দ

মহাজনের নাও নাটকের দৃশ্য। কেবল পারফরম্যান্স আর্ট নয়, সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের বিস্তৃত পরিসরে জাতীয় বাজেটে যথেষ্ট বরাদ্দ অত্যাবশ্যক।  ফাইল ছবি
মহাজনের নাও নাটকের দৃশ্য। কেবল পারফরম্যান্স আর্ট নয়, সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের বিস্তৃত পরিসরে জাতীয় বাজেটে যথেষ্ট বরাদ্দ অত্যাবশ্যক। ফাইল ছবি

গত অর্থবছরের তুলনায় এবার জাতীয় বাজেটের পরিমাণ বেড়েছে। বাজেট ঘোষণার আগে সংস্কৃতি অঙ্গনের প্রতিনিধিদের দাবি ছিল, সংস্কৃতি খাতে বরাদ্দ যেন বাড়ানো হয়। ঘোষণার পর দেখা গেল, সেটা না বেড়ে উল্টো কমেছে। সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের বাজেটে বরাদ্দ কমেছে ৮ শতাংশ। এ নিয়ে হতাশ, ক্ষুব্ধ সংস্কৃতি অঙ্গনের প্রতিনিধিরা।

গত বৃহস্পতিবার বাজেট ঘোষণার পর থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ বিভিন্ন মাধ্যমে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছেন সংস্কৃতিকর্মীরা। আজ শনিবার বিকেল পাঁচটায় দেশব্যাপী প্রতিবাদ সভা ডেকেছে বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশন। ঢাকা মহানগরে শিল্পকলা একাডেমির প্রবেশপথের মুখে বসবে এ সভা। একই সময়ে সারা দেশে প্রতিবাদ সভা করবে ফেডারেশনের সব শাখা। এ নিয়ে আজ সকালে সংবাদ সম্মেলন ডেকেছে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট। সেখানে নিজেদের ক্ষোভ প্রকাশ করবেন বলে জানিয়েছেন সংগঠনটির নেতারা।

গত বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেট পেশ করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এবারের বাজেটের আকার ধরা হয়েছে ৫ লাখ ২৩ হাজার ১৯০ কোটি টাকা, যা জিডিপির ১৮ দশমিক ১ শতাংশ। এর মধ্যে সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের জন্য বাজেট প্রস্তাব করা হয়েছে ৫৭৫ কোটি টাকা। এই বাজেট দেশের সংস্কৃতিচর্চার জন্য মোটেও সন্তোষজনক নয় বলে মন্তব্য করেছেন দেশের বরেণ্য সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বরা। গত বছর এ মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবিত বাজেট ছিল ৫১০ কোটি টাকা, সংশোধিত বাজেট ছিল ৬২৫ কোটি টাকা।

ইন্টারন্যাশনাল থিয়েটার ইনস্টিটিউটের সাম্মানিক সভাপতি রামেন্দু মজুমদার এবারের প্রস্তাবিত বাজেটকে হতাশাজনক মন্তব্য করে বলেন, একটি সুস্থ সমাজ বিনির্মাণে, অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়তে, জঙ্গিবাদ ও মাদকের ভয়াবহতা দূরীকরণের লক্ষ্যে সংস্কৃতি খাতে বাজেটে বরাদ্দ বাড়ানো অত্যাবশ্যক ছিল। কিন্তু বাজেটপ্রণেতারা সে পথে না হেঁটে, হেঁটেছে ভিন্ন পথে। তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি, এ ক্ষেত্রে মন্ত্রণালয়েরও অক্ষমতা আছে। যুক্তি দেখিয়ে বেশি বরাদ্দ চাওয়ার মতো শক্তি তাদের আছে বলে মনে হয় না। বাজেটে বরাদ্দ করা টাকাও তারা ঠিকমতো খরচ করতে পারে না।’

নাট্যব্যক্তিত্ব মামুনুর রশীদ বলেন, ‘সংস্কৃতি খাতে আমরা কখনোই কাঙ্ক্ষিত বাজেট পাইনি। সংস্কৃতি বরাবরই উপেক্ষিত ছিল। সার্বিকভাবে বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতির সামগ্রিক বিকাশের লক্ষ্যে যে ধরনের কর্মযজ্ঞ প্রয়োজন, সেটার বরাদ্দ নিয়ে সরকারকে ভাবতে হবে।’

সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ বলেন, ‘এই খাতকে মোটেও গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে না। তারা মনে করে, এরা শুধু গানবাজনা করে বেড়ায়। এ আর এমন কী?’ সংস্কৃতির বাজেট নিয়ে হতাশার কথা জানিয়ে এই সংগঠক বলেন, ‘একটি বাজেটে তো সরকারের নীতি ও আদর্শের প্রতিফলন ঘটে। সরকার একদিকে বলছে, আমরা অসাম্প্রদায়িক চেতনায় উদ্বুদ্ধ সংস্কৃতিবান্ধব জাতি, মানুষে মানুষে মৈত্রীর বন্ধন গড়ে তুলতে চাই। কিন্তু বাস্তবতা হলো, বাজেটে সরকারের সেই সব কথার প্রতিফলন ঘটল না।’

বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের মহাসচিব কামাল বায়েজিদ বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের সরকারের কাছে সংস্কৃতির জন্য এত কম বরাদ্দ প্রত্যাশিত নয়। স্বাধীনতার সুফল ছিনিয়ে নেওয়া সুবিধাভোগী তথাকথিত ধনিক শ্রেণিকে খুশি করা এই উন্নয়ন মানুষের কল্যাণ বয়ে আনবে না।’

সংস্কৃতিকর্মীরা মনে করেন, গ্রাম থেকে শহর পর্যন্ত সাংস্কৃতিক জাগরণের প্রণোদনা হিসেবে এই বাজেট অপ্রতুল। তাঁদের প্রস্তাব ছিল, জাতীয় বাজেটের ন্যূনতম ১ শতাংশ সংস্কৃতি খাতে বরাদ্দ দেওয়া হোক। সেটা না হলে সাংস্কৃতিক জাগরণ সম্ভব হবে না। তাঁরা আশা করছেন, এখনো সেই সুযোগ আছে। তাঁদের বিশ্বাস, শিগগিরই প্রস্তাবিত বাজেট সংশোধন করে সংস্কৃতি খাতে বরাদ্দ বাড়াবে সরকার।