তারকা বাবাকে নিয়ে তারকা সন্তানেরা

আজ বাবা দিবস। এ দিবস উপলক্ষে কয়েকজন শিল্পীর সঙ্গে কথা হয়, যাঁদের বাবারাও তারকা। শিল্পী বাবার কাছ থেকে কীভাবে অনুপ্রেরণা পান সন্তানেরা? সংগীত, নাটক, চলচ্চিত্র জগতের কয়েকজন শিল্পী বললেন বাবার কাছ থেকে পাওয়া সাংস্কৃতিক মূল্যবোধ ও শিক্ষা কীভাবে আলোকিত করেছে তাঁদের।
সম্রাট ও রাজ্জাক
সম্রাট ও রাজ্জাক

বাবার কারণেই আমরা এগিয়ে ছিলাম
সম্রাট, অভিনেতা
বাবা রাজ্জাক, অভিনেতা
ছোটবেলা থেকে বাবাকে দেখতাম অভিনয় নিয়ে ব্যস্ত থাকতেন। তাঁর লাইফস্টাইল দেখে আমরা তিন ভাই শিখতে লাগলাম। বাবার একটাই চাওয়া ছিল, আমরা যেন কোনোভাবে পড়াশোনা নিয়ে অবহেলা না করি। পড়াশোনা ছাড়া বাবা অন্য কোনো কিছুতে চাপ দিতেন না। পড়াশোনা না করা, স্কুল ফাঁকি দেওয়া, ফলাফল খারাপ করা, বাবা এসব একদমই পছন্দ করতেন না। বড় হওয়ার পর চলচ্চিত্র ও নাটকে আমাদের আগ্রহ দেখে বাবা উৎসাহ দেন। বলা যায় হাতে-কলমে শিখিয়েছেন তিনি। আমাদের বাসায় বাবার সম্পাদনাকক্ষ ছিল। পড়ালেখা শেষে বাবা আমাদের সেখানকার কাজগুলো দেখাতেন, শেখাতেন। প্রোডাকশনের কাজ করাতেন, সহকারী পরিচালকের সঙ্গে রাখতেন। বাবার কারণেই আমরা সাংস্কৃতিক দিক থেকে বন্ধু বা পরিচিতদের থেকে এগিয়ে ছিলাম।

আলমগীর ও আঁখি আলমগীর
আলমগীর ও আঁখি আলমগীর

যেটুকু নিজে কষ্ট করে করবে, শুধু সেটাই তোমার
আঁখি আলমগীর, গায়িকা
বাবা আলমগীর, অভিনেতা
শৈশবে পড়াশোনার ব্যাপারে আব্বু কঠোর ছিলেন। গানের ব্যাপারে খুব উৎসাহ দিতেন। বলতেন, ‘গান শেখো নিজের জন্য।’ পেশাদার অভিনয়শিল্পী বা গায়িকা বানানোর আলাদা কোনো পরিকল্পনা তাঁর ছিল না। তাঁর খুব ইচ্ছে ছিল আমি যেন আইনজীবী হই।
আব্বু বলতেন, ভালো মানুষ হলে দেখবে সবই শিখতে পারবে। আব্বুর কাছ থেকে যা কিছু শিখেছি, দেখে শিখেছি। আশপাশের কে তাঁর চেয়ে বেশি কাজ করছে, সেটা নিয়ে আব্বু মোটেও ভাবতেন না। নিজের কাজ করে যেতেন। এটা আমি পেয়েছি তাঁর কাছ থেকে। শিখেছি, পছন্দ না হলে পেশাদারি বজায় রেখে কীভাবে কোনো কাজের প্রস্তাব এড়িয়ে যেতে হয়। বাবা সব সময় বলেন, ‘জীবনের সবকিছু নিজেকেই অর্জন করতে হবে। যেটুকু নিজে কষ্ট করে করবে, শুধু সেটাই তোমার।’

ফারহিন খান জয়িতা ও খালেদ খান
ফারহিন খান জয়িতা ও খালেদ খান

গাইবার চেষ্টা করবে না, গান বলার চেষ্টা করবে
ফারহিন খান জয়িতা, রবীন্দ্রসংগীতশিল্পী
বাবা খালেদ খান যুবরাজ, অভিনয় ও বাচিক শিল্পী
আমার যা কিছু ভালো, মনে হয় সবটাই বাবার কারণে। গান শোনার অভ্যাস, ভালো বই পড়া, নাটক-সিনেমা দেখা সবকিছুতেই বাবার প্রভাব রয়েছে। অবসর সময়ে বাবা আমাকে ‘গীতবিতান’ ও ‘সঞ্চয়িতা’ থেকে গান ও কবিতা আবৃত্তি করা শেখাতেন, যেন আমি নিজে থেকেই গান আর কবিতার অর্থ উপলব্ধি করতে পারি। ছোটবেলা থেকে বাবা আমাকে একটা কথা বলে এসেছেন, সেটা হচ্ছে, ‘গান গাইবার চেষ্টা করবে না, গানটা বলার চেষ্টা করবে।’ এখনো গান করার সময় এই কথা মাথায় রেখে গান করতে চেষ্টা করি। কারণ গানের বাণী খুব গুরুত্বপূর্ণ। সুর এবং বাণী দুটিই মাথায় রেখে গাইলে গান পরিপূর্ণতা লাভ করে। সেই চেষ্টায় আমি কতটা সফল, জানি না। যখন গান গাই, তখন ভাবি, বাবা থাকলে কী বলত। বাবা কি খুশি হতো গান শুনে?

তারিক আনাম খান ও আরিক আনাম খান
তারিক আনাম খান ও আরিক আনাম খান

বাবার কাছ থেকে কিছু না কিছু শিখেই যাচ্ছি
আরিক আনাম খান, নাট্যকর্মী
বাবা তারিক আনাম খান, অভিনেতা
বাড়িতে সুস্থ সংস্কৃতিচর্চার অভ্যাস গড়েছিলেন বাবা, যেমন ভালো ছবি দেখা। বাড়িতে বাবার সঙ্গেই আকিরা কুরোসাওয়া, আব্বাস কিয়ারোস্তামির ছবিসহ ক্ল্যাসিক সিনেমাগুলো দেখতাম। বাবার সঙ্গে বেশি কাজ করেছি মঞ্চনাটকে, শৈশবে তাঁর সঙ্গে একবার মঞ্চেও উঠেছিলাম। মহড়ায় বাবার নির্দেশনা দেখে তখন থেকেই নানা বিষয়ে তাঁর সঙ্গে তর্ক করতাম। যখন সংস্কৃতিচর্চার প্রতি আগ্রহ বাড়ে, তখন বাবার সঙ্গে বন্ধুত্বটা গাঢ় হয়। সবকিছু নিয়ে খোলামেলা কথা বলি। তিনিই আসলে আমার মেন্টর ছিলেন। বাবা সব সময় আমাকে বলেছেন, পরিশ্রমের কোনো বিকল্প নেই। সময়ের সঙ্গে নিজেকে পরিবর্তন করতে হবে। বাবার অভিনয় বোঝার ক্ষমতা অতুলনীয়। আমি তাঁর মতো করে অভিনয়টা বুঝতে চাই। সব সময় মনে হয়, বাবার কাছ থেকে কিছু না কিছু শিখেই যাচ্ছি।