বলিউডের সেরা পাঁচ শিক্ষক

শুধু নায়ক, নায়িকা বা ভিলেন না, শিক্ষকেরাও বলিউডের ছবিকে তুলেছে এক অন্য মাত্রায়। তাই বড় বড় তারকা আর বিশ্বসুন্দরীরা যতবার বড় পর্দায় চক হাতে তুলেছেন, সেই তালিকা কেবল দীর্ঘ হয়েছে। সেই তালিকার সর্বশেষ সংযোজন হতে যাচ্ছেন হৃতিক রোশন। ১২ জুলাই গণিতের শিক্ষক আনন্দ কুমারের ভূমিকায় বলিউড দেখবে বড় পর্দার কৃষকে। তার আগে দেখে নেওয়া যাক, এখন পর্যন্ত বলিউডে যাঁরা শিক্ষক হয়েছেন, তাঁদের ভেতর এমন পাঁচজনকে, যাঁদের চাইলেও ভোলা সম্ভব না। যাঁরা শিক্ষক হয়ে অমরত্ব পেয়েছেন বলিউডের জগতে।
‘মোহাব্বতে’ ছবিতে অমিতাভ বচ্চন ও শাহরুখ খান
‘মোহাব্বতে’ ছবিতে অমিতাভ বচ্চন ও শাহরুখ খান


‘মোহাব্বতে’ ছবিতে শাহরুখ খান 

‘মোহাব্বতে’ (২০০০) বলিউডের সফলতম ছবিগুলোর একটি। ১৯ কোটি রুপি খরচ করে বানানো ৩ ঘণ্টা ৩৬ মিনিটের এই দীর্ঘ ছবি বক্স অফিসে তুলে আনে ৯০ কোটি রুপি। এটি উদয় চোপড়ার প্রথম ছবি। আর এই ছবিতে যে চরিত্রটি বড় পর্দায় অমরত্ব পেয়েছে, তার নাম রাজ আরিয়ান মালহোত্রা। তিনি কলেজের গানের শিক্ষক। তিনি তাঁর ছাত্রদের সেই কাজ করতে শেখান, যেটি অন্যান্য শিক্ষক আর অভিভাবকদের কাছে এককথায় নিষিদ্ধ! গানের শিক্ষক শাহরুখ এখানে সুরে সুরে তাঁর ছাত্রদের প্রেমে পড়তে শেখান। আর এটা মোটেই পছন্দ না কলেজের কড়া ডিন অমিতাভ বচ্চন ওরফে নারায়ণ শঙ্কর সাহেবের। এই ছবিতে ভায়োলিন হাতে শাহরুখ খান একটা আইকনিক ইমেজ হিসেবে আবির্ভূত হন বলিউডের দুনিয়ায়।

‘তারে জমিন পর’ ছবিতে দারশিল সাফারি ও আমির খান
‘তারে জমিন পর’ ছবিতে দারশিল সাফারি ও আমির খান


‘তারে জমিন পর’ ছবিতে আমির খান
‘তরে জমিন পর’ আমির খানের সেই ছবি, যার প্রযোজক, পরিচালক ও অভিনেতা সবই আমির খান। জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার ও ফিল্মফেয়ার পাওয়া ছবিটি ২০০৯ সালে অস্কারে সেরা বিদেশি ভাষার ছবি হিসেবে মনোনয়ন পায়। ছবিটি মূলত ঈশান নামে ডিসলেক্সিয়ায় আক্রান্ত একটি শিশুর, যার পরীক্ষার ফল ঘুরে বেড়ায় কুকুরের মুখে। ছবিটি সেই ছাত্র আর শিক্ষকের একটা চমৎকার সম্পর্কের, যেখানে শিক্ষক সেই শিষ্যকে আবিষ্কার করে, আবিষ্কার করে তার ছবি আঁকার অপূর্ব দক্ষতা। এই ছবি মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে বলে ধারণা করা হয়। আর সেটি সম্ভব হয়েছে শিক্ষক ‘রাম শঙ্কর নিকুম্ভ’ আমির খানের গুণে।

ছবিটি সমালোচক ও দর্শক সবার মন জয় করে। ১২ কোটি রুপি খরচ করে বানানো এই ছবি বক্স অফিসে ৯০ কোটি রুপি তুলে আনে।

‘ম্যায় হু না’ ছবিতে সুস্মিতা সেন
‘ম্যায় হু না’ ছবিতে সুস্মিতা সেন


‘ম্যায় হু না’ ছবিতে সুস্মিতা সেন
রসায়নের শিক্ষক সুস্মিতা সেনকে ‘ম্যায় হু না’ ছবিতে দেখা যায় শিফনের শাড়ি পড়ে হাঁটতে। আর সব সময় হাওয়া এসে যেন মেঘেদের দেশে উড়িয়ে নিতে চায় মোহময়ী শিক্ষক চাঁদনিকে। সম্প্রতি রাজীব মাসান্দকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে সুস্মিতা সেন জানিয়েছেন, শুটিংয়ের সময় তাঁর শাড়ি প্রায় অর্ধশত সেফটি পিন দিয়ে আটকে রাখতে হত, কারণ চারপাশে ফ্যান চলত। চাঁদনি এমন একজন ফিল্মি শিক্ষক যার শাড়ি, চুল সব সময় উড়তে হবে। আর এ জন্যই শুধু ছাত্র আর দর্শকই না, ছাত্ররূপী কমান্ডো অফিসার রামও তাঁর প্রেমে হাবুডুবু খেয়েছে। আর এই রাম হলেন স্বয়ং শাহরুখ খান। সেই রসায়ন শিক্ষকের সঙ্গে শাহরুখের রসায়ন দর্শক মনে রেখেছে, মনে রাখবে।

‘ব্ল্যাক’ ছবিতে অমিতাভ বচ্চন ও রানী মুখার্জি
‘ব্ল্যাক’ ছবিতে অমিতাভ বচ্চন ও রানী মুখার্জি


‘ব্ল্যাক’ ছবিতে অমিতাভ বচ্চন
২০০৫ সালের সবচেয়ে অর্থ উপার্জনকারী ছবি ‘ব্ল্যাক’। সঞ্জয় লীলা বানসালি পরিচালিত এই ছবিতে অমিতাভ বচ্চন এখানে দেবরাজ সাহাই। রানী মুখার্জির নাম থাকে মিশেল ম্যাকনেলি, যে অন্ধ ও বধির। অমিতাভ বচ্চন নিজেও এখানে অন্ধ, বোবা এক মদ্যপ শিক্ষক, যে নিজেকে জাদুকর বলে দাবি করে। রানী মুখার্জির চরিত্রটি হেলেন কিলারের জীবন থেকে অনুপ্রাণিত। সে বিচিত্র উপায়ে উগ্র মেজাজের রানীর জীবনে আশার আলো হয়ে আসে। অসীম ধৈর্যের পরিচয় দিয়ে সে রানীকে কথা বলা থেকে শুরু করে জীবনকে অনুভব করতে শেখায়। ২০ বছর পর স্নাতক হওয়ার পর রানী শেষ বয়সে আলঝেইমারে আক্রান্ত সেই শিক্ষকের কাছে যায়। তারা একসঙ্গে বৃষ্টিতে ভেজে আর রানী প্রথম শেখা শব্দ বলে, ‘ওয়াটার’। ছবিটি অস্কারে পাঠানো হয়। এই ছবিতে শিক্ষক হয়েই অমিতাভ বচ্চন তাঁর জীবনের দ্বিতীয় জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান।

এটি ২০০৫ সালের সবচেয়ে বেশি অর্থ উপার্জনকারী চলচ্চিত্র। ছবিটি বক্স অফিসে প্রায় ২৫০ কোটি রুপি তুলে আনে।

‘থ্রি ইডিয়টস’ ছবিতে বোমান ইরানি
‘থ্রি ইডিয়টস’ ছবিতে বোমান ইরানি


‘থ্রি ইডিয়টস’ ছবিতে বোমান ইরানি
বড় পর্দার সেরা শিক্ষকদের কথা লেখা হচ্ছে আর ‘থ্রি ইডিয়টস’ ছবির বোমান ইরানি বাদ যাবে, তা কি হয়? ‘ভাইরাস’ নামের আড়ালে ঢেকে যায় তাঁর আসল নাম ভীরু। কেননা, ছাত্ররা তাঁকে পেছনে এই নামেই ডাকে। তিনি দেশসেরা ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের প্রিন্সিপাল। যিনি দুই হাতে সমান গতিতে লিখতে পারেন এবং ছেলের মৃত্যুর দিনেও প্রতিদিনের নিয়মে কলেজে ক্লাস নেন। রাঞ্চো, ফারহান ও রাজু চরিত্রে আমির খান, আর মাধবন ও শরমান যোশির ‘থ্রি মাস্কেটিয়ার্স’-এর মতো বন্ধুত্বের সঙ্গে এই শিক্ষককেও দর্শক মনে রাখবেন। অনেকে মনে করেন, গুণী অভিনেতা বোমানের সেরা অভিনয় এটাই।

তা ছাড়া মনে রাখার মতো শিক্ষকদের তালিকায় ‘কুছ কুছ হোতা হ্যায়’ ছবির অর্চনা পুরান সিংয়ের নামও রাখতে হবে। শর্ট স্কার্ট, চকচকে রঙ্গের টপ আর ব্লেজার পরা এই ‘হট’ শিক্ষকের ফ্যাশন পরবর্তী সময়ে তরুণীদের পোশাকে নতুন ট্রেন্ড সৃষ্টি করে।