সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের বাজেট, রাজপথে নামবেন সংস্কৃতিকর্মীরা

প্রতিবাদ সভায় বক্তব্য দিচ্ছেন কামাল বায়েজিদ। (বাঁ থেকে) নাসির উদ্দীন ইউসুফ, লিয়াকত আলী লাকী, আতাউর রহমান, গোলাম কুদ্দুছ ও মামুনুর রশীদ। ছবি: সংগৃহীত
প্রতিবাদ সভায় বক্তব্য দিচ্ছেন কামাল বায়েজিদ। (বাঁ থেকে) নাসির উদ্দীন ইউসুফ, লিয়াকত আলী লাকী, আতাউর রহমান, গোলাম কুদ্দুছ ও মামুনুর রশীদ। ছবি: সংগৃহীত

বাজেট ঘোষণার পর থেকে সংস্কৃতিকর্মীদের অনেকে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও দেখা গেছে সংস্কৃতিকর্মীদের ক্ষুব্ধ স্ট্যাটাস। অপ্রতুল বাজেট বরাদ্দের প্রতিবাদে বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশন দেশব্যাপী প্রতিবাদ সমাবেশের আয়োজন করে। সংস্কৃতিকর্মীদের দীর্ঘদিনের চাওয়া বাজেটে প্রতিফলন না হওয়ায় তাঁরা রাজপথে নামতে পারেন বলেও ঘোষণা দেন। ঢাকার কেন্দ্রীয় প্রতিবাদ সভায় বক্তব্য দেন নাট্যব্যক্তিত্ব আতাউর রহমান, নাসির উদ্দীন ইউসুফ, মামুনুর রশীদ, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ, বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক ও বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের সভাপতি লিয়াকত আলী লাকী, সাধারণ সম্পাদক কামাল বায়েজিদ, সহসাধারণ সম্পাদক চন্দন রেজা প্রমুখ।

সরকারের প্রতি জোটের পক্ষে সংস্কৃতি খাতে বরাদ্দ বৃদ্ধির পাশাপাশি ১১ দফা দাবি বাস্তবায়নের আহ্বান জানানো হয়। গত শনিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সংগঠনটির টিএসসির কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে এসব দাবি জানানো হয়। দাবি মানা না হলে সংস্কৃতিকর্মীদের নিয়ে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনে নামবে জোট। সংস্কৃতিকর্মীরা মনে করছেন, সরকার চাইলে এখনো সংস্কৃতির বাজেট স্বপ্রণোদিত হয়ে সংশোধন করতে পারে। তাঁদের অনেকের মতে, এই সরকারকে সংস্কৃতিবান্ধব সরকার বলা হয়, কিন্তু বাজেট ঘোষণায় সেই প্রতিফলন হয়নি।

গত বছর এ মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবিত বাজেট ছিল ৫১০ কোটি টাকা, সংশোধিত বাজেট ছিল ৬২৫ কোটি টাকা। এবার ৫৭৫ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে।

সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ গতকাল রোববার সন্ধ্যায় প্রথম আলোকে বলেন, ‘চার বছর ধরে আমরা সংস্কৃতির বাজেট ১ শতাংশ করার দাবি করে আসছি। সংস্কৃতির ১ শতাংশ বাজেট কোন খাতে ব্যয় হবে, তা নিয়ে ১১ দফা দাবির মাধ্যমে জানিয়েছি।’ ১১ দফায় আছে উপজেলা পর্যায়ে শিল্পকলা একাডেমি গঠন, স্থানীয় ক্লাবগুলোকে সাংস্কৃতিক সংগঠনে পরিণত করা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সংস্কৃতিচর্চাকে বার্ষিক পাঠ্যক্রমসূচির আওতায় আনা, তরুণ প্রজন্মকে সম্পৃক্ত করে প্রতি উপজেলায় ‘আর্ট গ্যালারি’ নির্মাণ, সৃজনশীল চলচ্চিত্র প্রদর্শনীর জন্য উপজেলা পর্যায়ে ডিজিটাল প্রেক্ষাগৃহ নির্মাণ, সার্বক্ষণিক সাংগঠনিক সংস্কৃতিচর্চায় নিয়োজিত সংস্কৃতিকর্মী ও শিল্পীদের মাসিক সম্মানী প্রদান ইত্যাদি।

রামেন্দু মজুমদার বলেন, সরকার চাইছে সংস্কৃতির শক্তি দিয়ে জঙ্গিবাদ নির্মূলের পাশাপাশি সম্প্রীতির বাংলাদেশ গড়তে। অথচ বাজেটে সংস্কৃতি খাতের বরাদ্দ আগের বছরের চেয়ে আরও ৫০ কোটি টাকা কমেছে।

নাট্যজন নাসির উদ্দীন ইউসুফ বলেন, ‘যে দেশের মূল হচ্ছে সংস্কৃতি, সেই দেশের সংস্কৃতি খাতের বাজেট বরাদ্দে সংস্কৃতিকর্মীদের দাবি মানা হচ্ছে না। এটা জাতীয় সংস্কৃতির বিকাশের অন্তরায় হয় দাঁড়াবে।’

নাট্যজন মামুনুর রশীদ বলেন, ‘ভাষা আন্দোলন, ৬৯ এর গণ-অভ্যুত্থান, মুক্তিযুদ্ধ, স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন—সব জায়গায় অগ্রগামী ছিল সংস্কৃতিকর্মীরা। তাদের দাবি ও অধিকার বারবার উপেক্ষিত হচ্ছে।’

আজাদ আবুল কালাম বলেন, ‘একটা দেশ বলতে যা বোঝা যায় তার ছবিটা হচ্ছে সংস্কৃতি। বিশ্ববাজারেও সবচেয়ে বেশি ব্র্যান্ডিং হয় ওই দেশের সংস্কৃতি। সরকার সংস্কৃতিসেবীদের কোনো দায়িত্ব নিতে চায় না। অন্য খাতের মতো শিল্প–সংস্কৃতি নিয়েও বড় পরিকল্পনা নেওয়া সরকারের জরুরি। বরাদ্দ কমলে শিল্পের মানও কমবে।’

নৃত্যশিল্পী লায়লা হাসান মনে করেন, সারা দেশের সংস্কৃতি শিক্ষাকেন্দ্রগুলোর অবস্থা খুবই জরাজীর্ণ, এসবের অনুদান বাড়াতে হবে। ঢাকার বাইরের সংস্কৃতিকেন্দ্রগুলো যেভাবে চলছে, তা যেন দেখার কেউ নেই। শিল্পীদের একটা ভাতার ব্যবস্থা করতে পারে। প্রশিক্ষণ ও গবেষণা তো একেবারে নেই বললেই চলে।