টেলিভিশন নাটক, প্রেমিক-প্রেমিকা ছাড়া আর কেউ নেই

এবারের ঈদুল ফিতরে দেখানো হয় নিশো ও মেহ্‌জাবীন অভিনীত পারফেক্ট হাজবেন্ড নাটকটি
এবারের ঈদুল ফিতরে দেখানো হয় নিশো ও মেহ্‌জাবীন অভিনীত পারফেক্ট হাজবেন্ড নাটকটি

তৌসিফ ও ফারিয়া সেখানে স্বামী-স্ত্রী। তাদের বাড়িতে বেড়াতে আসেন ভাই-ভাবি। ঘণ্টাখানেকের কিছু কম সময় ধরে এ চার চরিত্রকে নিয়ে নাটক বুক ভরা ভালোবাসা। পরিচালক মুহম্মদ মোস্তফা কামাল রাজ, কাহিনি সংসারের টানাপোড়েন।

শিল্পপতির চরিত্রে নাঈম ও সাংবাদিক তিশার প্রেম থেকে বিয়ের গল্প নিয়ে নাটক ঘরে বাইরে। পত্রিকার সম্পাদক ছাড়া বাকি চরিত্রগুলো পর্দায় আসছেন সর্বসাকল্যে কয়েক মিনিটের জন্য। নাটকের গল্প বাঁধতে চরিত্রগুলোর উপস্থিতি আদতে কোনো অবদান রাখছে না। পরিচালনা করেছেন আবু হায়াত মাহমুদ।

মেহ্জাবীনের দুজন প্রেমিক। একজন লম্পট, অন্যজন দরিদ্র। লম্পটের কাছ থেকে প্রেমিকাকে কৌশলে কেড়ে নেওয়ার গল্পে তৈরি নাটকটি পরিচালনা করেছেন মিজানুর রহমান আরিয়ান, শেষটা সুন্দর।

এভাবে ক্রমেই প্রেমিক-প্রেমিকা কিংবা স্বামী-স্ত্রীনির্ভর হয়ে পড়ছে ঢাকার টিভি নাটক। যেন প্রেমিক-প্রেমিকা ছাড়া সমাজে আর কেউ নেই। গল্পে নেই নতুনত্ব। এভাবে বৈচিত্র্যপূর্ণ সামাজিক নানা চরিত্র থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন দর্শকেরা। পর্দায় পারিবারিক ও সামাজিক সংকটের দেখা নেই। বৈচিত্র্যের দেখা পেতে বাংলাদেশের একটা বড়সংখ্যক দর্শক গিয়ে থিতু হন পশ্চিমবঙ্গের বাংলা চ্যানেলে। সেখানকার গল্পে নানা রকম চরিত্র, অভাবনীয় গল্প, বর্ণিল উপস্থাপনা। সেসব নাটকের চরিত্রগুলোর নাম এপার বাংলার মানুষের মুখে মুখে—রাশি, রানি রাশমণি...

ঢাকার নাটকে ছিঁচকাঁদুনে প্রেম, রসহীন কৌতুক, অপ্রয়োজনীয় স্মার্টনেসের বাইরে কম গল্পই খুঁজে পাওয়া যাবে। অনেক ক্ষেত্রে নাটক দেখে দর্শক বলতেই পারবেন না যে, তাদের দেখা নাটকটির কাহিনি কী? তবে এসবের মধ্যেও যে ভিন্ন ধরনের নাটক হচ্ছে না, তা নয়। হানিফ সংকেতের ভুল ভাঙাতে ভুল করা সে রকম একটি নাটক। সেখানে পূর্ণাঙ্গ পরিবার ও অতিসচেতন একজন বাবাকে নিয়ে গল্প। তবে বেশির ভাগ পরিচালকের নাটকে কেন চরিত্র কমে যাচ্ছে? এ প্রসঙ্গে পরিচালক আবু হায়াত মাহমুদ বললেন, ‘নাটকের সস্তা একটি বিন্যাসে আটকে আছি আমরা, যেখানে আসলে কোনো গল্প খুঁজে পাওয়া যায় না। নাটকের প্রাণ গল্পের বদলে আমরা বরং অন্যদিকে মন দিচ্ছি। নতুন ধরনের ভাবনা বা গবেষণার অভাব আমাদের। ফরমায়েশি কাজ করতে করতে আমাদের আর নতুন কিছু করা হচ্ছে না, এমনকি আগের দিনের সেই পারিবারিক গল্পের নাটক বানানো হচ্ছে না।’

জ্যেষ্ঠ অভিনেতা শহিদুজ্জামান সেলিম মনে করেন, নাটকের বাজেট-সংকট চরিত্র কমে যাওয়ার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কারণ। তিনি বলেন, ‘আমরা চাই অভিনয়শিল্পীদের কাজ ও সম্মানীর সমবণ্টন হোক, বাজেট বাড়ুক। দশ বছর আগে নাটকের যে বাজেট ছিল, সেই তুলনায় এখন বাজেট অনেক কম। সেই সময়কার বাজেট পেলেও এখন মানসম্মত নাটক নির্মাণ সম্ভব। আমাদের শিল্পী ও কলাকুশলীরা এখন আগের চেয়ে অনেক দক্ষ হয়ে উঠেছেন।’

তবে অনেকেই মনে করেন, নাটকের বাজেটই বড় সমস্যা নয়। অনেক ক্ষেত্রে যথেষ্ট বাজেট পেয়েও খুব ভালো কাজ করা যাচ্ছে, তেমনটি সব সময় ঘটে না। বাংলাভিশনের অনুষ্ঠান বিভাগের প্রধান তারেক আখন্দ বলেন, ‘অনেক বড় বাজেটের নাটকেও দেখা যায় চরিত্র খুব কম। এটা পরিচালকের ওপর নির্ভর করে। ক্ষেত্রবিশেষে চ্যানেলেরও কিছু দায় থাকে। অনেক সময় দর্শক চাহিদার কথা ভেবে আমরা শিল্পী নির্বাচনে পরিচালককে পরামর্শ দিয়ে থাকি।’

তবে সবক্ষেত্রে যে নাটকের গল্পহীনতা, বাজেট-স্বল্পতা বা পরিচালকদের দোষারোপ করা যায়, তা নয়। দর্শকরুচি নিয়েও একছত্র বলা চলে। নিশো ও মেহ্জাবীন অভিনীত নঈম ইমতিয়াজ নেয়ামূল পরিচালিত পারফেক্ট হাজবেন্ড নাটকটি দেখে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন ২ হাজার ৩০০ দর্শক। নাটকটি দেখা হয়েছে ১৫ লাখ ৩২ হাজারবারের বেশি। তবে দর্শকদের অনেকেই ইউটিউব মন্তব্যে তাঁদের হতাশা প্রকাশ করেছেন।