নওয়াজুদ্দিনের কাছে সবার আগে ভাই

‘সেক্রেড গেমস ২’-এর পোস্টারে সাইফ আলী খান ও নওয়াজুদ্দিন সিদ্দিকী।
‘সেক্রেড গেমস ২’-এর পোস্টারে সাইফ আলী খান ও নওয়াজুদ্দিন সিদ্দিকী।

১৬ বছর ধরে পলাতক মুম্বাইয়ের অপরাধ জগতের প্রধান গণেশ গাইতোন্ডে। কোনো এক সুন্দর সকাল এলোমেলো হয়ে যায় তাঁর অযাচিত ফোনে। গাইতোন্ড ফোন করেন মুম্বাইয়ের পুলিশ কর্মকর্তা সরতাজ সিংকে। সৎ ও সাহসী এই কর্মকর্তাকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেন তিনি। বলেন, ২৫ দিনের ভেতর মুম্বাইয়ে হামলা চালানো হবে। কেউ বাঁচবে না, শুধু একজন ছাড়া। এই চোর-পুলিশের খেলায় শেষ পর্যন্ত কে জেতে, কীভাবে জেতে; তা জানতে দর্শক হুমড়ি খেয়ে পড়ে নেটফ্লিক্সের ‘সেক্রেড গেমস’ নামের ওয়েব সিরিজের ওপর।

এই ওয়েব সিরিজের গল্পে কংগ্রেসের শাসন আমলে মুম্বাইয়ের অপরাধ জগৎকে দেখানো হয়েছে। পাশাপাশি রয়েছে ইন্দিরা গান্ধীর জরুরি অবস্থা জারি। রয়েছে বোফোর্স কেলেঙ্কারি আর ১৯৮৫ সালের আলোচিত শাহ বানু মামলা। এসব ঘটনায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধী কীভাবে জড়িয়ে গিয়েছিলেন, রয়েছে তাও। আরও আছে লালকৃষ্ণ আদভানির রথযাত্রা, বাবরি মসজিদ ধ্বংস, মুম্বাইয়ে বোমা বিস্ফোরণসহ বিভিন্ন ঘটনা।

‘সেক্রেড গেমস’-এ মুম্বাইয়ের ডন গণেশ গাইতোন্ডের চরিত্রে অভিনয় করেছেন নওয়াজউদ্দিন সিদ্দিকী। এই ওয়েব সিরিজের বিরুদ্ধে অভিযোগ, এখানে রাজীব গান্ধীকে নিয়ে গাইতোন্ড অশালীন মন্তব্য করেছেন। ১৯৮৫ সালের আলোচিত শাহ বানু মামলা ও রাম মন্দিরের দরজা খোলার মতো সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য রাজীব গান্ধীকে লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করেন গণেশ গাইতোন্ড।

নওয়াজুদ্দিনের সঙ্গে জুটি বেঁধে অভিনয় করা হলো না মৌনি রায়ের।
নওয়াজুদ্দিনের সঙ্গে জুটি বেঁধে অভিনয় করা হলো না মৌনি রায়ের।

‘সেক্রেড গেমস’-এর প্রথম পর্বের শেষে দেখানো হয়, আটকে রাখা যায়নি গ্যাংস্টার গণেশ গাইতোন্ডেকে। ক্ষমতার দাপটে লোহার গারদ গলে পালিয়েছেন তিনি। তারপর দ্বিতীয় সিজনে তাঁকে দেখা যাবে কেনিয়ায়, উদ্বাস্তু থেকে মাফিয়া হবেন সেখানেও। কিন্তু সাইফ আলী খানের শরীরে ভর করে ইন্সপেক্টর সরতাজ সিং পৌঁছে যাবেন কেনিয়াতেও। তারপর কী হবে?

শুরু থেকেই এই ওয়েব সিরিজ নিয়ে বিতর্ক ছিল। যতই নতুন বিতর্ক পুরোনো বিতর্ককে ছাপিয়ে গেছে, সেই সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে এই ওয়েব সিরিজের জনপ্রিয়তা। গত বছরের ৬ জুলাই বিশ্বের ১৯১টি দেশে ২০টিরও বেশি ভাষার সাবটাইটেলে মুক্তি পায় ‘সেক্রেড গেমস’। প্রথম পর্বে ৮টি অ্যাপিসোড আছে। এই ৮টি অ্যাপিসোড যিনি দেখেছেন, দ্বিতীয় পর্বের জন্য তাঁর অপেক্ষা আর তর সইছে না। কিন্তু তাদের জন্য দুঃসংবাদ। ‘সেক্রেড গেমস-২’ কবে মুক্তি পাবে, তা জানেন না কেউই।

দুই ভাই শামাস নওয়াব সিদ্দিকী ও নওয়াজুদ্দিন সিদ্দিকী।
দুই ভাই শামাস নওয়াব সিদ্দিকী ও নওয়াজুদ্দিন সিদ্দিকী।

হ্যাঁ, ‘সেক্রেড গেমস’-এর দ্বিতীয় সিজনের মুক্তি আপাতত মুলতবি ঘোষণা করা হয়েছে। আর এর পেছনেও রয়েছেন ভিলেন গণেশ গাইতোন্ডেরূপী নওয়াজুদ্দিন সিদ্দিকী। নেটফ্লিক্স এই দ্বিতীয় সিজনের ঘোষণাও দিয়েছিল। এই নৌকায় পঙ্কজ ত্রিপাঠী, রণবীর শোরে, কালকি কোয়েচলিনকে তোলায় তা ভক্তদের আগ্রহ আর উদ্দীপনাকে অন্য মাত্রায় পৌঁছে দিয়েছিল। কেনিয়ায় এই সিরিজের দ্বিতীয় সিজনের শুটিং চলছিল। সব ঠিকই ছিল। কিন্তু বিনা মেঘে বজ্রপাতের মতো খবর এল, ‘সেক্রেড গেমস-২’-এর অভিনেতা নওয়াজুদ্দিন সিদ্দিকী ‘বোলে চুড়িয়া’ ছবির শুটিংয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন।

‘বোলে চুড়িয়া' ছবিটি নিঃস্বন্দেহে নওয়াজুদ্দিন সিদ্দিকীর জন্য বিশেষ একটা ছবি। কেননা এই ছবি দিয়েই বলিউডে খাতা খুলতে যাচ্ছেন নওয়াজের বড় ভাই শামাস নওয়াব সিদ্দিকী। মুম্বাইয়ে এই বড় ভাই আর তাঁর পরিবারের সঙ্গেই থাকেন নওয়াজুদ্দিন সিদ্দিকী। তবে শামাস ছোট ভাইয়ের মতো অভিনয় দিয়ে নয়, বরং পরিচালনা দিয়ে পা রাখছেন বলিউডে। আর বড় ভাই পরিচালিত প্রথম ছবির মুখ্য চরিত্রে আছেন নওয়াজুদ্দিন সিদ্দিকী। তা তো থাকবেনই, ভাইয়ের জন্য ভাই। ‘সেক্রেড গেমস’-এর পরিচালক অনুরাগ কশ্যপকেও নাকি দেখা যাবে ‘বোলে চুড়িয়া’ ছবির একটা গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে।

কথা ছিল ‘বোলে চুড়িয়া’ ছবিতে প্রথমবারের মতো জুটি বেঁধে অভিনয় করবেন নওয়াজুদ্দিন সিদ্দিকী আর মৌনি রায়। কিন্তু কোনে কারণ ছাড়াই মৌনি রায় গত ৩০ মে ছবির নির্মাতাদের সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, এই ছবি করবেন না তিনি। ফলে নির্মাতাদের কাছ থেকে ‘চরম অপেশাদার’ তকমা জুটেছে মৌনি রায়ের কপালে। কিন্তু ‘পাগল প্রেমিক’ নওয়াজুদ্দিনের বিপরীতে মৌনি রায়ের শূন্যস্থান কে পূরণ করবেন, তা জানা যায়নি এখনো।