বিষণ্নতা জয়ের মন্ত্র জানালেন দীপিকা

বিষণ্নতাকে জয় করা দীপিকা পাড়ুকোন।
বিষণ্নতাকে জয় করা দীপিকা পাড়ুকোন।

দীপিকা পাড়ুকোন যেন একটা উজ্জ্বল তারকার নাম। সে তারকা আলো ছড়াচ্ছে বলিউড থেকে সবখানে। ভারত ছাড়িয়ে তিনি এখন ‘গ্লোবাল আইকন’। এত বড় তারকা যখন নিউইয়র্কের এক সান্ধ্য ভাষণে কেবল বিষণ্নতা নিয়ে কথা বলেন, তখন বিষণ্নতাও যেন রাতারাতি তারকা বনে যায়!

হতাশা, বিষণ্নতা যে একটা মানসিক রোগ; সেটা মানুষ বিশ্বাস করতে শুরু করেছে দীপিকা পাড়ুকোনের কল্যাণে। এর আগে ‘ডিপ্রেশন’ শব্দটি কেবল ডিকশনারিতে আর মানসিক চিকিৎসকদের ডায়েরিতে ছিল। সাধারণ মানুষ ‘ডিপ্রেশনকে’ বড়লোকের বিলাসিতা হিসেবেই জানত। কিন্তু কে জানত, একদিন বলিউডের রাণী আক্রান্ত হবেন এই রোগে। শুধু তাই নয়, দীর্ঘ চিকিৎসা শেষে রোগমুক্তির পর বিষণ্নতা নিয়ে অনুপ্রেরণাদায়ক বক্তৃতাও দেবেন। আর পৃথিবী অবাক হয়ে জানবে, বলিউডের সবচেয়ে সফল নায়িকাকেও চেপে ধরে বিষণ্নতা। তিনিও আর দশটা মানুষের মতোই হতাশায় ভোগেন।

যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের ইয়ুথ এংজাইটি সেন্টার আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে দীপিকা পাড়ুকোন বলেছেন নিজের বিষণ্নতা জয়ের গল্প। ব্রিটিশ-মার্কিন সাংবাদিক ও ভোগ ম্যাগাজিনের প্রধান সম্পাদক আন্না উইন্টোরের নিমন্ত্রণে তিনি ওই অনুষ্ঠানে যোগ দেন। দীপিকা বলেন, পৃথিবীর ৩০ কোটি মানুষ বিষণ্নতায় ভুগছে। তাই যিনি বিষণ্নতায় ভুগছেন, তিনি মোটেই একা নন, যুদ্ধটাও কেবল তাঁর একার নয়।

দীপিকা-পাডুকোন
দীপিকা-পাডুকোন

বিষণ্নতার সর্বজনীন রূপ নিয়ে দীপিকা বলেন, ‘পৃথিবীর যেকোনো প্রান্তের যে কেউ, যেকোনো সময় বিষণ্নতায় আক্রান্ত হতে পারেন। আমার জন্য সবচেয়ে কঠিন ছিল সেই সময়গুলো, যখন আমি জানতাম না যে আমি বিষণ্নতায় আক্রান্ত। যেদিন আমি ক্লিনিক্যাল ডিপ্রেশন নামের রোগটার সঙ্গে পরিচিত হলাম, সেদিন থেকেই আমি ভালোবোধ করা শুরু করলাম।’

অর্থাৎ সবার আগে বিষণ্নতাকে রোগ হিসেবে চিহ্নিত করা জরুরি। দীপিকা জানান, তিনি এখন ভালো আছেন। এ সময় তিনি বিষণ্নতা থেকে মুক্তি পাওয়ার মূলমন্ত্রও শিখিয়ে দেন। বলেন, ধৈর্য ধরার বিকল্প নেই। ধৈর্য ধরে বিশ্বাস করতে হবে যে সব ঠিক হয়ে যাবে। দীপিকা এ সময় সুপারম্যানের উক্তি টানেন। বলেন, ‘যখন তুমি সবকিছুর ভেতর থেকে আশাকে বেছে নেবে, তখন সবকিছুই সম্ভব।’

দীপিকা পাডুকোন
দীপিকা পাডুকোন

দীপিকার এই অনুপ্রেরণাদায়ক বক্তব্যের ভিডিওতে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের মানুষ কমেন্ট করে জানিয়েছেন, এই বক্তব্য তাদের হৃদয় স্পর্শ করেছে। দীপিকাও একটা ইনস্টাগ্রাম পোস্টে আন্না উইন্টোরকে ধন্যবাদ জানিয়ে লেখেন, ‘গবেষণা ও অন্যান্য কাজ ছাড়াও দ্য ইয়ুথ এংজাইটি সেন্টার গত ছয় বছরে ৭৫ হাজারেরও বেশি কাউন্সেলিং সেশন পরিচালনা করেছে। যেটা গর্ব করার মতোই একটি সংখ্যা। আমি এই সংস্থার সার্বিক সাফল্য কামনা করি। আমার গল্প সবার সঙ্গে ভাগ করে নেওয়ার সুযোগ করে দেওয়ার জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ।’ এই পোস্টে তিনি একটা আফ্রিকান প্রবাদের কথাও লেখেন, ‘কেউ যদি দ্রুত পথ চলতে চায়, তাহলে সে যেন একা চলে। কিন্তু কেউ যদি অনেকটা দূর পৌঁছাতে চায়, তাহলে তাকে সবাইকে সঙ্গে নিয়ে পথ চলতে হবে।’ দীপিকা তাই সবাইকে সঙ্গে নিয়ে বিষণ্নতার যুদ্ধে জয়ী হতে বললেন।

তিনটি ফিল্মফেয়ার পুরস্কারজয়ী দীপিকা পাড়ুকোন জীবনে বহু পুরস্কার পেয়েছেন। টাইম সাময়িকী তাঁকে গত বছর বিশ্বের সবচেয়ে প্রভাবশালী ১০০ ব্যক্তিত্বের তালিকায় রেখেছিল। মনের অসুখকে কখনোই ছোট করে দেখেননি তিনি। একসময় ব্যাডমিন্টন খেলোয়াড় ছিলেন বলেই হয়তো জীবনের সাফল্য-ব্যর্থতাকে দীপিকা খেলোয়াড়সুলভ মানসিকতা দিয়ে সামলে নিতে জানেন। মানসিক সমস্যাবিষয়ক সচেতনতা গড়তে তিনি নিজেই একটা প্রতিষ্ঠান খুলেছেন, যার নাম ‘দ্য লিভ লাভ লাফ ফাউন্ডেশন’।

এদিকে দীপিকাকে দেখা যাবে মেঘনা গুলজার পরিচালিত ‘ছপাক’ ছবিতে। অ্যাসিড সন্ত্রাসের শিকার লক্ষ্মী আগারওয়ালের ওপর নির্মিত এই ছবিতে আরও থাকবেন বিক্রান্ত মাসেই। ছবিটি ২০২০ সালের ১০ জানুয়ারি মুক্তি পাবে। অন্যদিকে কবির খান পরিচালিত ‘এইটি থ্রি’ ছবিতে দীপিকাকে দেখা যাবে বড় পর্দার কপিল দেবরূপী রণবীর সিংয়ের স্ত্রীর ভূমিকায়। বড় পর্দায় ২০২০ সালের ১০ এপ্রিল তামিল, তেলেগু ও হিন্দি—এই তিন ভাষায় মুক্তি পাবে ছবিটি।