৩০ বছরে 'ডেড পোয়েটস সোসাইটি'

ডেড পোয়েটস সোসাইটি ছবির দৃশ্য
ডেড পোয়েটস সোসাইটি ছবির দৃশ্য

শিক্ষক চরিত্রে রবিন উইলিয়ামসের হৃদয়কাড়া অভিনয়শৈলী আর টম শ্যুলম্যানের অন্তরঙ্গ চিত্রনাট্য—ডেড পোয়েটস সোসাইটি (১৯৮৯) চলচ্চিত্রের ইতিহাসে এক বিস্ময়কর সাফল্য। পিটার ওয়্যার পরিচালিত জনপ্রিয় বোর্ডিং স্কুল ড্রামা ২ জুন অতিক্রম করল মুক্তির ৩০ বছর। সাহিত্যের শিক্ষার্থী কিংবা সাহিত্য অনুরাগীদের কাছে ধ্রুপদি শিক্ষক চরিত্র জন কিটিংয়ের রয়েছে আলাদা কদর। শিক্ষামূলক ও প্রেরণাদায়ক এই ড্রামা/কমেডি ১৯৯০ সালের ৬২তম একাডেমি পুরস্কারের আসরে জিতে নেয় মৌলিক চিত্রনাট্যের জন্য অস্কার। চলুন জেনে নিই ৩ লাখ ৬৮ হাজার ভোটে ৮ দশমিক ১ রেটিং পেয়ে আইএমডিবির (ইন্টারনেট মুভি ডেটাবেজ) সেরা ২৫০ চলচ্চিত্রের তালিকায় জায়গা করে নেওয়া ডেড পোয়েটস সোসাইটির জানা ও অজানা ১০ তথ্য—

িচত্রনাট্যকার টম শ্যুলম্যান মন্টগোমারি বেল একাডেমিতে (যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশভিল, টেনেসিতে) অধ্যয়নের অভিজ্ঞতাকে পুঁজি করেই চিত্রনাট্য রচনা করেন। জন কিটিং চরিত্রটি তাঁর সেই সময়কার শিক্ষক প্রফেসর স্যামুয়েল এফ পিকারিং জুনিয়রের আদলে সৃষ্টি। এ ছাড়া টম শ্যুলম্যানকে প্রায়ই তাঁর প্রাক্তন সহপাঠীরা ফোন করে জানতে চাইতেন, চলচ্চিত্রের চরিত্রগুলো তাঁদের স্কুলজীবনের প্রতিচ্ছবি কি না।

টেলিভিশন ও স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রের জন্য নিয়মিত চিত্রনাট্য লিখলেও ডেড পোয়েটস সোসাইটি পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রের উদ্দেশ্যে লেখা তাঁর প্রথম চিত্রনাট্য। এই প্রথম কাজ দিয়েই উডি অ্যালেন, স্পাইক লি, স্টিভেন সোডেরবার্গ, নোরা এফরনের মতো দুঁদে চিত্রনাট্যকারদের ছাপিয়ে ১৯৯০ সালে ৬২তম একাডেমি পুরস্কারের আসরে শ্রেষ্ঠ মৌলিক চিত্রনাট্যের জন্য অস্কার জিতে নেন টম।

উপন্যাস থেকে দেদার সিনেমা হয়েছে, হচ্ছে আর হবেও। তবে ডেড পোয়েটস সোসাইটির ক্ষেত্রে ব্যাপারটি উল্টো। মৌলিক চিত্রনাট্য থেকে চলচ্চিত্র নির্মিত হওয়ার পর ন্যান্সি ক্লাইনবাম একই শিরোনামে উপন্যাস রচনা করেন। অর্থাৎ প্রথমে মৌলিক চিত্রনাট্য, তারপর চলচ্চিত্র, অবশেষে উপন্যাস—উল্টো পথেই শ্যুলম্যানের কাজের বিবর্তন ঘটেছে।

১৯৮৯ সালে গ্রিন কার্ড চলচ্চিত্রের গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র অনুপস্থিত থাকায় ডিজনি স্টুডিও শুটিংয়ের অবসরে পিটার ওয়্যারকে অন্য আরেকটি চলচ্চিত্র পরিচালনার পরামর্শ দেয়। অনাকাঙ্ক্ষিত বিরতিতে টম শ্যুলম্যানের প্রথম খসড়াটি পড়েই ডেড পোয়েটস সোসাইটি পরিচালনায় রাজি হয়ে যান পিটার।

শুটিং শুরু হওয়ার দুই সপ্তাহ আগে থেকেই তরুণ শিক্ষার্থীদের ভূমিকায় অভিনয় করা শিল্পীদের একসঙ্গে থাকার নির্দেশ দেন নির্মাতা পিটার ওয়্যার। পঞ্চাশের দশকের বিশ্বাসযোগ্য চিত্র ফুটিয়ে তোলার উদ্দেশ্যে চলচ্চিত্রের কুশীলবদের চুলের ধরন, কবিতা লেখার চর্চা থেকে শুরু করে তৎকালীন জীবনধারার বিশ্বাসযোগ্য চিত্রায়ণের জন্য গবেষণা, মঞ্চ অভিনয়ের আয়োজন—কোনো কিছুই বাদ রাখেননি পরিচালক। চলচ্চিত্রের এই মহাযজ্ঞের প্রভাবে পরবর্তীকালে সাক্ষাৎকারে অভিনেতারা জানান, ‘শুটিং শুরু হওয়ার পর থেকে মনে হতে শুরু করে, আমরা যেন স্কুলজীবনে ফিরে গিয়েছি।’

পেশাদার মূল অভিনেতারা ছাড়া চলচ্চিত্রে শিক্ষার্থীর ভূমিকায় অভিনয় করা প্রত্যেকেই ছিলেন সত্যিকারের স্কুলপড়ুয়া!

ডেড পোয়েটস সোসাইটিতে রবিন উইলিয়ামস
ডেড পোয়েটস সোসাইটিতে রবিন উইলিয়ামস

কখনো বক্স অফিসের শীর্ষস্থান দখল না করলেও যুক্তরাষ্ট্রে ৯ কোটি ৫৮ লাখ ডলার এবং বিশ্বজুড়ে ২৩ কোটি ৫০ লাখ ডলারের বেশি আয় করে ডেড পোয়েটস সোসাইটি। ১৯৮৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রের বক্স অফিসে সর্বোচ্চ আয় করা চলচ্চিত্রের তালিকায় দশম ও যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে পঞ্চম স্থান অর্জন করে। বিষয়বস্তু ও ব্যবসা—দুই ক্ষেত্রেই এমন মানিকজোড় বিরল!



বিল মারে, ডাস্টিন হফম্যান, লিয়াম নেসন, মেল গিবসন, এলেস বাল্ডউইন, মিকি রোর্ক—হলিউডের ডাকসাইটে অভিনেতাদের ছাপিয়ে এই চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য নির্বাচিত হন রবিন উইলিয়ামস।



জন কিটিং চরিত্রে রবিন উইলিয়ামসের অভিনয়শৈলী তাঁকে ব্যাপক পরিচিতি এনে দেয়। নির্মাতা পিটার ওয়্যারের সান্নিধ্য আর ডেড পোয়েটস সোসাইটির অভিজ্ঞতাকে রবিন উইলিয়ামস তাঁর জীবনের অন্যতম সেরা অর্জন বলে বিবেচনা করতেন।

১০

ওয়াল্ট হুইটম্যানের ‘ও ক্যাপ্টেন! মাই ক্যাপ্টেন!’ কবিতার বিখ্যাত লাইনটি ডেড পোয়েটস সোসাইটি চলচ্চিত্রে ব্যবহার করা হয়। এই লাইনের সঙ্গে জড়িয়ে আছেন রবিন উইলিয়ামস। ২০১৪ সালে তিনি পরলোকগমন করলে সাধারণ মানুষ থেকে বিভিন্ন সংবাদপত্র কবিতার ওই অংশটুকু ব্যবহার করে তাঁর প্রতি শেষশ্রদ্ধা জ্ঞাপন করে।