অভিনয় শিল্পী সংঘের নির্বাচন নিয়ে সংশয়

অভিনয় শিল্পী সংঘের লোগো
অভিনয় শিল্পী সংঘের লোগো

শেষ মুহূর্তে এসে অভিনয় শিল্পী সংঘের নির্বাচন নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। আগামীকাল শুক্রবার সংগঠনটির দ্বিবার্ষিক নির্বাচন হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু আজ বৃহস্পতিবার উচ্চ আদালত নির্বাচনের ওপর অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন। একই সঙ্গে নির্বাচনে কেন স্থায়ী নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হবে না, সে বিষয়ে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছেন আদালত। তবে নির্বাচন কমিশন ও কয়েজন প্রার্থী জানালেন, নির্বাচন যথাসময়েই অনুষ্ঠিত হবে।

গতকাল বুধবার শেখ মো. এহসানুর রহমান, আবদুল্লাহ রানা ও নূর মুহাম্মদ রাজ্য বাদী হয়ে কিছু অভিযোগ এনে অভিনয় শিল্পী সংঘের নির্বাচন স্থগিতের জন্য দ্বিতীয় সহকারী আদালতে আবেদন করেন। সেই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ওই দিনই নির্বাচন স্থগিতের নির্দেশ দেন আদালত। সিনিয়র সহকারী জজ মোহাম্মাদ শাফি এই আদেশ দিয়েছেন। সেই সঙ্গে তিন নির্বাচন কমিশনার খায়রুল আলম সবুজ, বৃন্দাবন দাশ ও মাসুম আজিজ এবং অভিনয় শিল্পী সংঘের সর্বশেষ সভাপতি শহীদুল আলম সাচ্চুসহ ৮ জন বিবাদীকে ১৯ জুন থেকে ৭ দিনের মধ্যে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে।

তবে এমন কোনো নোটিশ পাননি বলে জানালেন অভিনয় শিল্পী সংঘের সদ্য বিদায়ী সাধারণ সম্পাদক আহসান হাবিব নাসিম। তিনি বলেন, ‘আমরা এমন কোনো কিছুই জানি না। নির্বাচন কমিশনের কাছ থেকেও কোনো ঘোষণা পাইনি। কোনো কাগজও পাইনি আদালতের। আমরা জানি নির্বাচন কাল হবে।’

এবার সভাপতি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন শহীদুজ্জামান সেলিম। আজ বৃহস্পতিবার তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘শুনেছি সংগঠনের সদস্য নয়, এমন কয়েকজন সদস্য এই আবেদন করেছে। এর আগেও তাদের কারণে নির্বাচন তিন মাস পিছিয়ে যায়। সংগঠনকে ক্ষতিগ্রস্ত করার জন্যই তারা বারবার এমন কাজ করছে।’

অভিনয় শিল্পী সংঘের নির্বাচনের নির্বাচন কমিশনার মাসুম আজিজ বলেন, ‘আমরা নির্বাচন কমিশনের কোনো সদস্যই আদালতের কোনো আদেশ হাতে পাইনি। আগামীকাল শুক্রবার নির্বাচন হবে।’

অভিনয় শিল্পী সংঘের নির্বাচনে সভাপতি পদে লড়ছেন তিনজন
অভিনয় শিল্পী সংঘের নির্বাচনে সভাপতি পদে লড়ছেন তিনজন

অভিযোগকারী শেখ মো. এহসানুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা কিছু অভিযোগ জানিয়ে আইনজীবীর মাধ্যমে আদালতে শরণাপন্ন হয়েছি। সমাজসেবা অধিদপ্তরের অনুমোদিত সংঘের যে গঠনতন্ত্র, এখানে তা এড়িয়ে যাওয়া হচ্ছে। আমরা অধিদপ্তরে একাধিকবার চিঠি দিয়েছি। বিগত কমিটির সঙ্গে আলোচনা করেছি। কিন্তু কোনো সমাধান হয়নি।’

গঠনতন্ত্র প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘তফসিলে বলা হয়েছে, ১৫-এর ৬ ধারা অনুযায়ী নির্বাচন ঘোষণা করা হয়েছে। এতে উল্লেখ আছে, একটি সাধারণ সভার মধ্যমে অন্তর্বর্তীকালীন ও নির্বাচনকালীন কমিটি গঠন হবে। অথচ সাধারণ সভা ছাড়াই আগের কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক কমিটি গঠন করেছেন। এ ছাড়া তারা সমাজসেবা অধিদপ্তরের প্রচুর অসত্য তথ্য দিয়েছেন। তাঁরা তহবিলের ব্যাপারে বলেছেন, তিন লাখ ২৪ হাজার টাকা আছে। কিন্তু আমাদের মতে, তহবিলে ৫০ লাখ টাকার বেশি থাকার কথা। তাঁরা বলেছেন, অভিনয় শিল্পী সংঘ গঠিত হয়েছে ২০১৮ সালে। কিন্তু এর কার্যক্রম শুরু হয়েছে ১৯৯৮ সালে। তাঁরা গোপনে অধিদপ্তর থেকে কমিটির মেয়াদ ২০২০ পর্যন্ত বাড়িয়ে নেন। এগুলো যখন আমরা সামনে এনেছি, তাঁরা বলেছেন, অজ্ঞতাবশত হয়েছে। কিন্তু এগুলো সবই অনিয়ম।’

ঘোষণা অনুযায়ী আগামীকাল শুক্রবার অভিনয় শিল্পী সংঘের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রাজধানীর সেগুনবাগিচায় বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমিতে। এবার নির্বাচনে ২১টি পদের জন্য ৫১ জন প্রার্থী লড়াই করবেন। একজন ইতিমধ্যে নির্বাচিত হয়ে গেছেন। নির্বাচনে যাঁরা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে যাচ্ছেন, তাঁদের তালিকা প্রকাশ করেছে অভিনয় শিল্পী সংঘের বর্তমান কমিটি। অভিনয় শিল্পী সংঘ থেকে জানানো হয়েছে, এবার অভিনয় শিল্পী সংঘের ভোটার ৬০৬ জন।

অভিনয় শিল্পী সংঘের নির্বাচনে সাধারণ সম্পাদক পদে লড়ছেন দুজন
অভিনয় শিল্পী সংঘের নির্বাচনে সাধারণ সম্পাদক পদে লড়ছেন দুজন

কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী না থাকায় সাংগঠনিক সম্পাদক পদে লুৎফর রহমান জর্জ বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। এবার নির্বাচনে সভাপতি পদে লড়ছেন তুষার খান (আশিকুল ইসলাম খান), মিজানুর রহমান (শামীম ভিস্তী) ও শহীদুজ্জামান সেলিম। সহসভাপতি পদে তিনটি আসনের জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন আজাদ আবুল কালাম, আহসানুল হক মিনু, ইউজিন ভিনসেন্ট গোমেজ, ইকবাল লাবু, তানিয়া আহমেদ ও দিলু মজুমদার। সাধারণ সম্পাদক পদে লড়ছেন আহসান হাবিব নাসিম ও আবদুল হান্নান।

যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের দুটি পদের জন্য লড়ছেন আশরাফ কবীর, আনিসুর রহমান মিলন, এ কে এম আমিনুল হক আমিন, রওনক হাসান (এম এম কামরুল হাসান) ও সুমনা সোমা। অর্থ সম্পাদক হিসেবে একটি পদের বিপরীতে লড়ছেন মুহাম্মদ নূর এ আলম এবং মাঈন উদ্দিন আহমেদ। দপ্তর সম্পাদক পদের প্রার্থীরা হলেন উর্মিলা শ্রাবন্তী কর, আরমান পারভেজ মুরাদ, গোলাম মাহমুদ, শেখ মেরাজুল ইসলাম।

অনুষ্ঠান সম্পাদকের একটি আসনের জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন জিনাত সানু স্বাগতা, পাভেল ইসলাম ও রাশেদ মামুন অপু। আইন ও কল্যাণ সম্পাদকের একটি পদে লড়ছেন ম ম শিউলী, শামীমা ইসলাম তুষ্টি, শিরিন আলম। প্রচার ও প্রকাশনা পদে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন প্রাণ রায়, শফিউল আলম বাবু ও শহিদ আলমগীর। তথ্য ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক পদে লড়তে যাচ্ছেন সিরাজুল ইসলাম ও সুজাত শিমুল।

কার্যনির্বাহী সদস্যের ৭টি পদের বিপরীতে প্রার্থী ১৮ জন। তাঁরা হলেন সেলিম মাহবুব, বন্যা মির্জা, শামস সুমন, শামসুন নাহার শিরীন (সূচনা সিকদার), আবদুর রাজ্জাক, সনি রহমান, নিথর মাহবুব, জাহিদুল ইসলাম চৌধুরী, ওয়াসিম হাওলাদার, মুনিরা বেগম মেমী, মাহাদী হাসান পিয়াল, তানভীর মাসুদ, নাদিয়া আহমেদ, রেজাউল করিম সরকার, নুরুন নাহার বেগম, তারেক মাহমুদ, জাকিয়া বারী মম ও রাজিব সালেহিন।