সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রীর 'প্রথম প্রেমের প্রথম ছোঁয়ার আনন্দ'
‘আমি আজ দারুণ খুশি। কারণ, সরকারি উদ্যোগে এবারই প্রথমবারের মতো আমরা একটি নাট্যোৎসবের আয়োজন করতে পেরেছি। এটি প্রথম প্রেমের প্রথম ছোঁয়ার মতো, প্রথম সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার মতো আনন্দের।’ একটি অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করতে এসে এমন ভাবেই নিজের অনুভূতির কথা বললেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ।
আজ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় জাতীয় নাট্যশালায় তাঁর এমন খুশি হওয়ার একমাত্র কারণ, প্রথমবার আয়োজিত বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক নাট্যোৎসব। এ উৎসবের উদ্বোধন করতে এসে সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ বলেন, ‘গেল অর্থবছরের শেষ দিকে আন্তর্জাতিক নাট্য উৎসবের প্রস্তাব পাই। কিন্তু তখন আর অনুদান দেওয়ার মতো কোনো বরাদ্দ ছিল না। যে অর্থ অবশিষ্ট ছিল, সেটা খরচের এখতিয়ার শুধু সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ছিল। তখন আমরা সিদ্ধান্ত নিই নিজেরাই আয়োজন করব। এমন ঘটনা এবারই প্রথম ঘটছে।’ এখন থেকে এক বছর অন্তর সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আয়োজনে আন্তর্জাতিক নাট্যোৎসবের আয়োজন করার আশা করেন প্রতিমন্ত্রী।
পঞ্চাশের দ্বারপ্রান্তে স্বাধীন বাংলাদেশ। সত্তরের দশকে একদল স্বাপ্নিক ও মেধাবী যুবকের হাত ধরে এ দেশে শুরু হয় মঞ্চনাটকের পথচলা। মঞ্চনাটককে অনেকেই চিহ্নিত করেন মুক্তিযুদ্ধের একটি ফসল হিসেবে। এত বছরে দেশে বেড়েছে মঞ্চ নাটকের প্রসার। কিন্তু দীর্ঘ এ সময়ে সরকারি আয়োজনে অনুষ্ঠিত হয়নি কোন নাট্যোৎসবের। এ নিয়ে নাট্যকর্মীদের একটা আক্ষেপ ছিল। সেই আক্ষেপ ঘুচল। আজ বৃহস্পতিবার সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আয়োজনে শুরু হয়েছে সপ্তাহব্যাপী বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক নাট্যোৎসব। শিল্পকলা একাডেমি ও ইন্টারন্যাশনাল থিয়েটার ইনস্টিটিউট-আইটিআই বাংলাদেশ কেন্দ্রের বাস্তবায়নে এবং গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের সহযোগিতায় এ নাট্যোৎসব অনুষ্ঠিত হচ্ছে শিল্পকলা একাডেমিতে। স্বাগতিক বাংলাদেশের পাশাপাশি এ উৎসবে অংশ নিচ্ছে ফ্রান্স, রাশিয়া, চীন, ভিয়েতনাম, ভারত ও নেপালের নাট্যদল।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় উৎসবের উদ্বোধন করেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন আইটিআই বিশ্ব কেন্দ্রের সাম্মানিক সভাপতি রামেন্দু মজুমদার, শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক ও গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশানের চেয়ারম্যান লিয়াকত আলী লাকী এবং ভারতের খ্যাতিমান নাট্য নির্দেশক রতন থিয়াম। সংস্কৃতি সচিব মো: আবু হেনা মোস্তফা কামালের সভাপতিত্বে স্বাগত বক্তব্য দেন আইটিআই বাংলাদেশ কেন্দ্রের সভাপতি নাসির উদ্দীন ইউসুফ।
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, অনেকেই বলেন, বর্তমান সরকারের সংস্কৃতির প্রতি বিশেষ নজর ও আনুগত্য রয়েছে। সংস্কৃতি ক্ষেত্রে আমাদের অনেক অর্জন রয়েছে এবং একই সঙ্গে আমাদের করণীয় বিষয়াদি রয়েছে। এগুলো নির্ধারণপূর্বক সঠিক পরিকল্পনামাফিক কাজ করে গেলে এ ক্ষেত্রে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জন সম্ভব হবে।
নাসির উদ্দীন ইউসুফ বলেন, এর আগে আইটিআই বাংলাদেশ কেন্দ্র, গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশন বহু আন্তর্জাতিক উৎসব করলেও, এটিই সরকারি উদ্যোগে প্রথম নাট্যোৎসব। যার জন্য এ দিনটি আমাদের জন্য বিশেষ আনন্দের। নাটকের পাশাপাশি এ উৎসবে রয়েছে মাস্টার ক্লাস, সেমিনার ও কর্মশালা।
উদ্বোধনী আনুষ্ঠানিকতা শেষে ছিল রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কালজয়ী গীতিনাট্য ‘মায়ার খেলা’। সংগীতের সঙ্গে মুদ্রা ও অভিব্যক্তির সমন্বিত নাচ এবং কথোপকথনের আশ্রয়ে উঠে আসে প্রেম ও ভালোবাসা বহুমুখী দ্বান্দ্বিকতা, তীব্র কামনা ও হৃদয়ের ব্যথা এবং আকাঙ্ক্ষা। বাংলাদেশের ধৃতি নর্তনালয়ের পরিবেশনাটির নির্দেশনায় ছিলেন ওয়ার্দা রিহাব। ‘মায়ার খেলা’ নৃত্যনাট্যের সংগীত পরিচালনা করছেন নির্ঝর চৌধুরী ও আবদুল মুনিম তরফদার।
কাল শুক্রবার ফ্রান্সের থিয়েটার দ্য ভিদে লুসান এবং ইয়ং ভিক লন্ডনের ‘ও মাই সুইট ল্যান্ড’ ও ভারতের কোরাস রেপার্টারি থিয়েটার ‘ম্যাকবেথ’ মঞ্চস্থ হবে। কাল শনিবার বাংলাদেশের অন্বেষা থিয়েটার ‘জয়তুন বিবির পালা’, রোববার চিনের জোহো থিয়েটার ‘এফ সিকে’, সোমবার নেপালের মান্ডালা থিয়েটার ‘ঝিয়ালঞ্চা’, মঙ্গলবার ভিয়েতনামের লে নক থিয়েটার ‘কিম তু’ এবং বুধবার সমাপনী দিনে রাশিয়ার নিকোলাই জাইকভ থিয়েটার ‘লাইট পাপেট শো’ মঞ্চস্থ করবে। প্রতিটি নাটকই শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার মূল মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হবে।
এর পাশাপাশি রোববার বিকেলে শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার সেমিনার কক্ষে ‘আন্তর্জাতিক, জাতীয় ও ব্রাত্যজননীন থিয়েটারের পারস্পরিক বিনিময়’ শীর্ষক সেমিনার অনুষ্ঠিত হবে।