কোন পাঁচটি গান জীবনে প্রভাব ফেলেছে?

রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা, ফেরদৌস আরা, শারমীন সুলতানা সুমী, কোনাল, মিনার, বিউটি
রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা, ফেরদৌস আরা, শারমীন সুলতানা সুমী, কোনাল, মিনার, বিউটি
>

আজ বিশ্বসংগীত দিবস। দিনটি উপলক্ষে দেশের সংগীতাঙ্গনের কয়েকজন শিল্পীর কাছে আমরা জানতে চেয়েছি, তাঁদের জীবনে কোন পাঁচটি গান সবচেয়ে বেশি প্রভাব বিস্তার করেছে।

রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা
‘মোরা সত্যের পরে মন আজি করিব সমর্পণ’—এই গান মানুষের জীবন পাল্টে দেওয়ার গান। এই গান রাজনৈতিক মন্ত্র না, আত্মশুদ্ধির মন্ত্র। এই গানে সত্য সুন্দর আর মঙ্গলের কথা বলা হয়েছে। এবং সেটার জন্য ‘যদি দৈন্য বহিতে হয়, দণ্ড সহিতে হয় তবু মিথ্যা বাক্য নয়, মিথ্যা কর্ম নয়’—এই মন্ত্র আমাকে সাংঘাতিকভাবে যেকোনো প্রতিকূল পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে সাহায্য করে। এর বাইরে ‘আনন্দধারা বহিছে ভুবনে’, ‘উই শ্যাল
ওভারকাম’, ‘কংগ্রাচুলেশন অ্যান্ড সেলিব্রেশন’, স্কুলে শুনতাম জন ডেনভারের ‘কান্ট্রি রোড টেক মি হোম’। প্রথম গানটা আমার জীবনের মন্ত্র। কার্পেন্টার্সের গানও শুনতাম।

ফেরদৌস আরা
‘আমায় নহে গো ভালোবাসো শুধু, ভালোবাসো মোর গান’—এই গানটি আমাকে খুবই প্রভাবিত করে। আমার কেন যেন মনে হয়, এই গানের প্রথম লাইনের মধ্যে যেন আমারই কথাগুলো বলা হয়েছে। দুটো ধারা, সুরের বা আঙ্গিকের দিক থেকে একটা। আরেকটি কথার দিক থেকে সবাইকে ছুঁয়ে যায়। ‘জনম জনম গেল আশা পথ চাহি’—এই গানটি আমাকে প্রভাবিত করে তাঁর সুরের বিস্তার নিয়ে। সমস্ত মনজুড়ে সব মানুষকে ছুঁয়ে চায়। এর বাইরে ‘লাইলী তোমার এসেছে ফিরিয়া’, ‘অঞ্জলী লহ মোর সংগীতে’ এবং ‘শাওন রাতে যদি’। একদম শেষের গানটি প্রতিটা মানুষকে বিশেষ মুহূর্তে নিয়ে যায়।

শারমীন সুলতানা সুমী
‘আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি’, ‘চার দেয়ালের মধ্যে নানা দৃশ্যকে সাজিয়ে রাখি’, ‘এখন সকাল এখানে সকাল’, ‘তাজমহল’ আর্ক ব্যান্ডের এবং জন লেননের ‘ইমাজিন’। ছোটবেলায় যখন স্কুলের অ্যাসেম্বলিতে ‘আমার সোনার বাংলা’ শুনতাম, গাইতাম, কী কারণে মন আচ্ছন্ন হয়ে থাকত বুঝতাম না। বুকের ভেতর মায়া জমে থাকত। পরে বড় হয়ে বুঝতে শিখি এই গানের আবেদন আসলে কত গভীর, কত বিশদ। আজ পর্যন্ত যেখানে যে অবস্থায় এ গান শুনি, চোখের কোণে পানি জমে, নিজের জন্মভূমির জন্য বুকের ভেতর অদ্ভুত এক আলোড়ন তৈরি হয়, যে অনুভূতির সঙ্গে তুলনা মেলে না কিছুর। আর তাই এই গান আমার কাছে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ গান।

কোনাল
‘আমার সকল কাঁটা ধন্য করে ফুল ফুটবে’, জোয়ান বায়েজের ‘বাংলাদেশ’, লালনের ‘জাত গেল জাত গেল বলে’, মাইকেল জ্যাকসনের ‘হিল দ্য ওয়ার্ল্ড’ এবং রুনা লায়লার ‘শিল্পী আমি তোমাদেরই গান শোনাব’। প্রথম গানটা আমাকে সবচেয়ে বেশি অনুপ্রাণিত করে। গানের কথাগুলো আমাকে শক্তি দেয়। বাঁচার সাহস দেয়। সংগীত আমার সবচেয়ে বড় বন্ধু আর এই গানটা আমাকে আলোকিত করে।

মিনার
‘সব কটা জানালা খুলে দাও না’, এলআরবির ‘বাংলাদেশ’, বিটলসের ‘হেই ড্যুড’, পিংক ফ্লয়েডের ‘শাইন অন ইউ ক্রেজি ডায়মন্ড’ এবং এ আর রাহমানের ‘তুহি রে’। ‘সব কটা জানালা খুলে দাও না’—এই গানের কথা আলাদাভাবে বলতে চাই। এই গানের প্রভাব আমার জীবনে উল্লেখযোগ্য। এই গানের মধ্যে যে হাহাকার আছে, আকুলতা আছে, যে মায়া নিহিত—সেটা আমাকে নানাভাবে প্রভাবিত করে। এই গান আমি যতবার শুনি ততবারই মনে হয়, দেশের জন্য কিছু একটা। এটা একটা মাস্টারপিস গান।

বিউটি
‘সময় গেলে সাধন হবে না’, ‘ধনধান্য পুষ্প ভরা’, ‘আমার নহে গো’, ‘খাঁচার ভিতর অচিন পাখি’, ‘আমারও পরান যাহা চায়’। এর মধ্যে ‘সময় গেলে সাধন হবে না’ শোনার পর যেকোনো মানুষকেই গানটি ভাবাবে। একটা শক্তি, যে শক্তি দিয়ে আমরা যে মনুষ্যত্ববোধসম্পন্ন মানুষ, তা বোঝা যায়। আমাদের একটা পরিচয় এই গানের মধ্যে তুলে ধরা হয়েছে। প্রত্যেক মানুষ অসময়ে এমন কিছু করে ফেলে, যার পরিণাম ভালো হয় না। সেটাই বলা হয়েছে।