কপিরাইট অধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে হরহামেশা

‘আমি তো ভালা না, ভালা লইয়াই থাইকো’ গানটির গীতিকার আর সুরকার নিয়ে তৈরি হয়েছিল জটিলতা
‘আমি তো ভালা না, ভালা লইয়াই থাইকো’ গানটির গীতিকার আর সুরকার নিয়ে তৈরি হয়েছিল জটিলতা

সচেতনতার অভাবে দেশের সংগীতাঙ্গনে কপিরাইট আইনের যথাযথ বাস্তবায়ন হচ্ছে না। শিল্পী বা মূল মালিকের অনুমতি ছাড়া গান আপলোড হচ্ছে ইউটিউবসহ বিভিন্ন মাধ্যমে। গীতিকার, সুরকার এবং শিল্পীর অধিকার বাস্তবায়ন হচ্ছে না। গান এমনকি গানের দল নিয়েও জটিলতা তৈরি হচ্ছে নানাভাবে। আবার কখনো কখনো বাণিজ্যিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন প্রকৃত প্রযোজক ও পরিবেশকেরা। অন্যদিকে নীতিমালার অভাবে মানহীন, কুরুচিপূর্ণ গানে এবং গানের ভিডিও ছবি প্রভাব নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে এই অঙ্গনে। এসব কারণে স্থানীয় অডিও শিল্প এখন হুমকির মুখে পড়েছে।

গেল বছরের আলোচিত গানগুলোর অন্যতম ‘আমি তো ভালা না, ভালা লইয়াই থাইকো’ গানটির গীতিকার আর সুরকার নিয়ে তৈরি হয়েছিল জটিলতা। শেষ পর্যন্ত কপিরাইট অফিসে নির্ধারণ হয়, গানের মূল গীতিকার সুরকার। ব্যান্ড দল শিরোনামহীন, মাইলসের মালিকানা নিয়েও তৈরি হয়েছিল জটিলতা। কপিরাইট অফিস সূত্রে জানা গেছে, সংগীতাঙ্গনের মাত্র ৯টি অভিযোগ কপিরাইট অফিসে করা হয়েছে। এর মধ্যে ৫টি অভিযোগের মীমাংসা হয়েছে, ৪টির শুনানি চলছে। একটি প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে তাঁর স্বাক্ষর নকল করে চুক্তিপত্র করার অভিযোগ তুলেছেন সংগীতশিল্পী ফরিদা পারভীন। দিলরুবা খান তাঁর অনুমোদন ছাড়া গান প্রচারের অভিযোগ করেছেন দুটি টেলিভিশন চ্যানেল এবং একটি প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে। ওয়ারফেজ ব্যান্ডের সাবেক কণ্ঠশিল্পী মিজানের বিরুদ্ধে বিনা অনুমতিতে ব্যান্ডের গানের পরিবেশনা–সংক্রান্ত অভিযোগ করা হয়েছে কপিরাইট অফিসে।

অনেক আগেই কপিরাইট আইনের প্রচলন থাকলেও ২০১৭ সাল থেকে অভিযোগ দেওয়া শুরু করেছেন শিল্পীরা। তবে বর্তমান পরিস্থিতি অনুযায়ী সংখ্যাটি একেবারেই কম মন্তব্য করে রেজিস্ট্রার অব কপিরাইটস জাফর রাজা চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ‘অধিকার নিশ্চিত করতে হলে সৃষ্টিশীল নতুন পণ্য নিবন্ধন করতে হবে। আমাদের দেশে এ বিষয়ে সচেতনতার বড় অভাব।’

যেভাবে নিবন্ধন করতে হয়
রেজিস্ট্রার অব কপিরাইটস জাফর রাজা চৌধুরী জানান, একটি গানের স্বত্বাধিকারী তিনজন—গীতিকার সুরকার এবং শিল্পী। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে তিনজনের সমন্বয়ের অভাবে যথাযথভাবে নিবন্ধন হয় না। এ ছাড়া স্বত্বাধিকারীরা যদি কোনো প্রযোজকের কাছে বিক্রি করেন তাঁদের সৃষ্টকর্মটি, সে ক্ষেত্রে অবশ্যই নির্ধারিত কাগজে লিখিত চুক্তি করতে হবে। কোনো গানের নিবন্ধন করাতে হলে অবশ্যই তা কপিরাইট কার্যালয়েই করাতে হবে। এ জন্য নির্ধারিত আবেদনপত্র পূরণ করে আবেদন করতে হয়। সঙ্গে লাগে প্রতিটির ক্ষেত্রে এক হাজার টাকার ট্রেজারি চালান। দুই কপি ছবি, পণ্যটি নিজের বলে হলফনামা, জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি আর যে সৃজনশীল পণ্যটি নিবন্ধন করা হবে, তার দুটি কপি এবং সে বিষয়ে সংক্ষিপ্ত বিবরণ। এই কাজ এখন সরাসরি আগারগাঁওয়ের কপিরাইট অফিসে (জাতীয় গণগ্রন্থাগারের তৃতীয় তলায়) না গিয়ে অনলাইনেও করা যায়।

ভাইরাল–জ্বরে আক্রান্ত সংগীতাঙ্গন
গানের বাজার এখন পুরোপুরি ডিজিটাল মাধ্যমের ওপর নির্ভরশীল। এ কারণে ‘যা ইচ্ছে তাই’–এর কবলে পড়েছে বলে মন্তব্য করেন সংশ্লিষ্ট কয়েকজন। তাঁদের মতে, বাজার এখন ‘ভাইরাল জ্বর’–এ আক্রান্ত। যার ফলে কেউ কেউ উদ্ভট, মানহীন, দুর্বল কথার গানের পাশাপাশি কুরুচিপূর্ণ মিউজিক ভিডিওর আশ্রয় নেন। এখন কোনো নির্দিষ্ট প্রতিষ্ঠান বা প্রযোজকের জন্য অপেক্ষা করতে হয় না গান প্রকাশের জন্য। দেখা যায়, অনেক ক্ষেত্রে গান তৈরিতে নিজ স্বাধীনতার সুযোগ নেন। সংগীতশিল্পী সৈয়দ আব্দুল হাদী বলেন, ‘চলচ্চিত্রের গানে এটি সম্ভব হয় না। কেননা সেখানে সেন্সর বোর্ডের অনুমোদন নিতে হয়। আমি মনে করি, নীতিমালা করে গানের বাজারেও চলচ্চিত্রের মতো সেন্সর বোর্ড গঠন করতে পারলে ভালো হতো। এতে কুরুচিপূর্ণ কিংবা নকল গানের প্রকাশ রোধ করা যাবে। তা করতে না পারলে পরবর্তী প্রজন্মের জন্য ভালো কিছু রেখে যাওয়া যাবে না।’