একুশজন জিতেছি, তবে কেউ হারেনি: শহীদুজ্জামান সেলিম

শহীদুজ্জামান সেলিম। অভিনয় শিল্পী সংঘের নির্বাচনে সভাপতি পদে জয়ী হয়েছেন।
শহীদুজ্জামান সেলিম। অভিনয় শিল্পী সংঘের নির্বাচনে সভাপতি পদে জয়ী হয়েছেন।

বেশ জমেছিল এবারের অভিনয় শিল্পী সংঘের নির্বাচন। গতকাল শুক্রবার সারা দিন রীতিমতো উৎসবমুখর পরিবেশে ভোট দেওয়া–নেওয়া চলেছে। এবারের শিল্পী সংঘের নির্বাচনে সভাপতি পদে তিনজন প্রার্থী লড়াই করেছিলেন। এর মধ্যে শুক্রবার রাতে ঘোষিত ফলাফলে দেখা গেছে, সভাপতি পদে ৩২৫ ভোট পেয়ে শহীদুজ্জামান সেলিম নির্বাচিত হয়েছেন। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে নির্বাচনে জয়ী প্রার্থীরা ২০১৯-২১ মেয়াদে অভিনয় শিল্পী সংঘের নেতৃত্ব দেবেন। তার আগে আজ শনিবার দুপুরে কথা হয় সভাপতি পদে জয়ী শিল্পী শহীদুজ্জামান সেলিমের সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মাসুম আলী।

প্রথম আলো: অভিনন্দন আপনাকে। শুক্রবার সারা দিনই শিল্পকলা একাডেমিতে ছিলেন। ক্লান্ত নিশ্চয়ই?

শহীদুজ্জামান সেলিম (সেলিম): ধন্যবাদ। আসলে এই নির্বাচনে মোট ৫১ জন প্রার্থী হয়েছি। সেখান থেকে আমরা জিতেছি ২১ জন। তবে হারেনি কেউই। আমি তো মনে করি এখানে যাঁরা অংশ নিয়েছেন, ভোট দিয়েছেন সবাই জিতেছেন। আমরা এক প্ল্যাটফর্মে থেকে নির্বাচন করেছি। আর হুম, ক্লান্ত একটু লাগছে বটে। আসলে সন্ধ্যায় নির্বাচনের ফলাফলের পর সব ক্লান্তি দূর হয়ে গেছে। তা ছাড়া এবারের নির্বাচনটাও বেশ সুষ্ঠু পরিবেশে হয়েছে। ফলাফলও দ্রুত পাওয়া গেছে।

নির্বাচনে জয়ী প্রার্থীরা
নির্বাচনে জয়ী প্রার্থীরা

প্রথম আলো: আগের দিন বেশ জটিলতা তৈরি হয়েছে। আদালতেরও নির্দেশ ছিল। এ অবস্থায় নির্বাচন করাটা ঝুঁকি হয়ে গেল না?

সেলিম: সত্যি কথা বলতে কি, আমরা ফেসবুকে দেখেছি এমন খবর। নির্বাচনে নিষেধাজ্ঞা...। কিন্তু আমাদের কাছে এ বিষয়ে আদালতের কোনো চিঠি আসেনি। নির্বাচন কমিশন ও সংঘের অফিসেও আসেনি। তো চিঠি না পাওয়া পর্যন্ত নির্বাচন কমিশনার নির্বাচন প্রক্রিয়া থামানোর কোনো কারণই ছিল না। আমাদের সদস্যরা উন্মুখ হয়েছিল ভোট দেওয়ার জন্য। আপনি দেখেন, কাল প্রতিকূল আবহাওয়ার মধ্যে রীতিমতো উৎসবে মেতেছিলেন আমাদের ভোটাররা। মোট ৫১৪টি ভোট পড়েছে। অনেকে ব্যস্ততার কারণে ভোট দিতে আসতে পারেননি বলে ফোনে দুঃখ প্রকাশ করেছেন। অনেকে আবার দেশের বাইরে আছেন। তাঁরা ভোট দিতে পারেননি।

প্রথম আলো: বাহ, এত সাড়া পেল নির্বাচন! তাহলে অভিযোগটা করেছিল কেন? আর এখন যদি আইনি কোনো জটিলতা তৈরি হয়, কী করবেন আপনারা?

১৯৮৩ সালে তিনি ঢাকা থিয়েটারে মঞ্চ অভিনেতা হিসেবে যোগ দেন শহীদুজ্জামান সেলিম
১৯৮৩ সালে তিনি ঢাকা থিয়েটারে মঞ্চ অভিনেতা হিসেবে যোগ দেন শহীদুজ্জামান সেলিম

সেলিম: ফেসবুক এবং সংবাদমাধ্যমে অভিযোগকারী হিসেবে যাঁদের নাম দেখেছি, তাঁরা কিন্তু আমাদের এই সংগঠনের চাঁদাও হালনাগাদ করেননি, ভোটারও নন। যুগে যুগে এমন হঠকারী লোকজন ছিল, এখনো আছে। সেই হঠকারী লোকজন শিল্পীদের মধ্যেও এখন দেখছি। এর আগে তাঁদের অসযোগিতার কারণে নির্বাচনটা পিছিয়ে গেছে। ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হওয়ার কথা ছিল, হতে পারেনি শুধু তাঁদের কারণে। শুরুতে তাঁদের বেশি পাত্তা দেওয়া হয়েছিল। আর এখন আমাদের সামনে আইনের কোনো বাধানিষেধ এলে অবশ্যই তা আইনের মাধ্যমেই সমাধান করব।

প্রথম আলো: আপনি প্রথমবার সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন। যতদূর জানি এই সংগঠনের সঙ্গে আপনার শুরু থেকেই অংশগ্রহণ ছিল। শুরুর দিকের কথা বলবেন।
সেলিম: শুরুতে আমি আজিজুল হাকিম, তৌকীর আহমেদ, জাহিদ হাসানসহ চারজন মিলে অভিনয় শিল্পী সংঘের স্বপ্ন দেখেছিলাম। আজ থেকে প্রায় ২০ বছর আগে ১০৬ জন সদস্য নিয়ে যাত্রা শুরু হয়েছিল এই সংগঠনের। মাঝে নানা কারণে বেশ লম্বা একটা সময় নিষ্ক্রিয় থাকার পর সর্বশেষ ২০১৭ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত হয় অভিনয় শিল্পী সংঘের দ্বিবার্ষিক নির্বাচন। ভাবতে ভালো লাগছে এখন এই সংগঠন কলেবর অনেক বড় হয়েছে। বর্তমানে এ সংগঠনের ভোটারই আছে ৬০৬ জন। সদস্য আরও বেশি হবে।

প্রথম আলো: আচ্ছা, এখন শপথ গ্রহণ করে দায়িত্ব নেওয়ার পর আপনার প্রথম পরিকল্পনা কী?

সেলিম: প্রথমেই আগের অসম্পূর্ণ কাজগুলো শেষ করব এবং শিল্পীদের স্বার্থরক্ষায় কাজ করব। শিল্পীদের নানা সমস্যা আছে। কাজের ক্ষেত্রে সমবণ্টন, পারিশ্রমিক নিশ্চিতকরণ বা কাজের সময় নির্ধারণ। কর্মঘণ্টা নির্ধারণ করাটা খুব জরুরি হয়ে পড়েছে। টেলিভিশনের দিক থেকে মানুষ মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। এই জায়গায় কাজ করতে চাই। দর্শকেরা যেন আবার এদিকে দৃষ্টি ফেরান তার জন্য যা যা করা প্রয়োজন, তা অন্যান্য সংগঠনের সঙ্গে বসে দ্রুত করতে চাই।

প্রথম আলো: তারপর?
সেলিম: সংগঠনের সদস্যদের আত্মমর্যাদার বিষয়টি পরিষ্কারভাবে তুলে ধরা প্রয়োজন। রাষ্ট্রীয়ভাবে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের কাছে চাইব, ‘শিল্পী’ যে একটা পেশা তার রাষ্ট্রীয় ও সাংবিধানিক স্বীকৃতি। গুণী ও বয়োজ্যেষ্ঠ শিল্পীদের ‘কালচারাল ইমপরটেন্ট পারসন’ ঘোষণা করতে হবে। এসব বিষয়ে সিরিয়াসলি কাজ করতে চাই আমি। যেমন ধরেন আজকে আমাদের কোনো সদস্য বা অভিনয়শিল্পী ব্যাংক থেকে লোন নিতে গেলে পেশা হিসেবে ‘অন্যান্য’ অপশনটি লিখতে হয়। তার মানে কী? মানে দাঁড়াল অভিনয়টা পেশা নয়, তাই না? ভাবতে কষ্ট লাগে। রাষ্ট্রীয়সহ নানা কাজে ‘শিল্পী’ যে পেশা, সেটা উল্লেখ থাকতে হবে। এখন আমরা অভিনয় যে একটা পেশা, সেটির স্বীকৃতি চাইব।

স্ত্রী রোজী সিদ্দিকীর সঙ্গে
স্ত্রী রোজী সিদ্দিকীর সঙ্গে

প্রথম আলো: নির্বাচনের আগে প্রথম আলোর সঙ্গে আলাপচারিতায় বলেছিলেন জাতীয় টেলিভিশন পুরস্কারের কথা।

সেলিম: হুম মনে আছে। এবং এ প্রসঙ্গে শিগগিরই সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলব। জাতীয় টেলিভিশন পুরস্কার চালুর জন্য আমরা কাজ করে যাব।। আমাদের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার আছে। তেমন আদলেই এটি করতে চাই।

প্রথম আলো: ভোট তো শেষ হলো। জিতেও গেলেন। শপথ কবে হচ্ছে?

সেলিম: এখনো সময়টা চূড়ান্ত হয়নি। এটা নির্বাচন কমিশনার সিদ্ধান্ত নেবেন। শিগগিরই সেটি চূড়ান্ত হবে। সে খবর নিশ্চয়ই আপনারাও পেয়ে যাবেন।

শহীদুজ্জামান সেলিম জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় যুক্ত হয়ে পড়েন নাট্য আন্দোলনের সঙ্গে। পরে ১৯৮৩ সালে তিনি ঢাকা থিয়েটারে মঞ্চ অভিনেতা হিসেবে যোগ দেন এবং এখনো এই দলের অধীনে অনিয়মিতভাবে মঞ্চে অভিনয় করে আসছেন। এই থিয়েটার দলের সঙ্গে তিনি বেশ কিছু মঞ্চ নাটকে অভিনয় এবং নির্দেশনা দেন। মঞ্চে অভিনয়ের মাধ্যমে শহীদুজ্জামান সেলিমের অভিনয়ে হাতেখড়ি হলেও পরবর্তীকালে তিনি ছোট পর্দায় এবং বড় পর্দায় কাজ করেছেন। ১৯৮৯ সালে বাংলাদেশ টেলিভিশনের জোনাকি জ্বলে নাটকে অভিনয়ের মধ্য দিয়ে তিনি ছোট পর্দায় অভিষেক ঘটান। এরপর টেলিভিশন নাটকে নির্দেশনা দিতে শুরু করেন। তাঁর পরিচালিত স্পর্শের বাইরে এবং রঙছুট ধারাবাহিক নাটক ছোট পর্দার দর্শক ও সমালোচকদের প্রশংসা অর্জন করেছে।