আজ সন্ধ্যায় শিল্পকলায় 'কঞ্জুস'

‘কঞ্জুস’ নাটকের দৃশ্য
‘কঞ্জুস’ নাটকের দৃশ্য

সেই যে শুরু হলো ১৯৮৭ সালের ৮ মে, এখন পর্যন্ত মঞ্চ মাতিয়ে রেখেছে নাটকটি। লোকনাট্য দলের অনবদ্য এই নাটকের ৭১৮তম মঞ্চায়ন হবে আজ রোববার সন্ধ্যায়, বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির পরীক্ষণ থিয়েটার হলে।

৩২ বছর ধরে নাটকটি মঞ্চায়ন করছে লোক নাট্যদল। অবশ্য কঞ্জুস নাটকের ইতিহাস আরও পুরোনো। ১৯৮২ সালে ভারতের ন্যাশনাল স্কুল অব ড্রামা (এনএসডি) থেকে কয়েকজন নাট্যকর্মী পড়াশোনা শেষ করে দেশে ফেরেন। তাঁরা প্রতিষ্ঠা করেন ‘নাট্যদল’ নামের মঞ্চনাটকের দল। সঙ্গে আরও কয়েকজন। এর মধ্যে আছেন সৈয়দ জামিল আহমেদ, তারিক আনাম খান, ভাস্বর বন্দ্যোপাধ্যায়, গোলাম সারোয়ার, লিয়াকত আলী লাকী, কামাল উদ্দিন নীলু প্রমুখ। তারিক আনাম খান ফরাসি নাট্যকার মলিয়েরের ‘দ্য মাইজার’ অবলম্বনে অনুবাদ করেন ‘কঞ্জুস’ নাটকটি। ১৯৮৩ সালের প্রথম দিকে নাটকটি মঞ্চে আনা হয়। শুরু থেকেই নাটকটি নিয়ে দর্শকের সাড়া পাওয়া গেছে। সেই থেকে ‘কঞ্জুস’ নাটকটির নিয়মিত প্রদর্শনী চলছে।

কামাল উদ্দিন নীলু নির্দেশিত নাটকের পুরোটাই বাংলাদেশি আমেজে। সংলাপ বলা হয় পুরান ঢাকার আঞ্চলিক ভাষায়। ১০টি প্রদর্শনী হওয়ার পর ১৯৮৭ সালে নাটকটি সম্প্রচারিত হয় বিটিভিতে। তারপর নাট্যদল আর নাটকটি মঞ্চস্থ করেনি। পরে নতুন আঙ্গিকে নাটকটি মঞ্চে আনে লোক নাট্যদল। নির্দেশনা দেন লিয়াকত আলী লাকী।

লোক নাট্যদলের প্রধান লিয়াকত আলী বললেন, ‘মলিয়ের জীবদ্দশায় সমালোচকদের দ্বারা নানাভাবে সমালোচিত হন। কিন্তু তাঁর নাটক দেশে দেশে মানুষের মধ্যে কত যে শক্তি সঞ্চয় করেছে, তা “কঞ্জুস” নাটকটি দিয়েই বোঝা যায়।’

বরাবরই প্রশংসা পেয়েছে ‘কঞ্জুস’। এগিয়ে থেকেছে প্রদর্শনীর ক্ষেত্রে। ইন্টারন্যাশনাল থিয়েটার ইনস্টিটিউটের সাম্মানিক বিশ্ব সভাপতি রামেন্দু মজুমদার বলেন, ‘প্রযোজনাটি গল্প, সংলাপ আর অভিনয় মিলিয়ে দারুণ উপভোগ্য। বাংলাদেশে কমেডি আর “কঞ্জুস” সমার্থক হয়ে গেছে।’

‘কঞ্জুস’ নাটকের দৃশ্য
‘কঞ্জুস’ নাটকের দৃশ্য

নাটকটির শততম প্রদর্শনী হয় ১৯৯৩ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি, ৪০০তম প্রদর্শনী হয় ২০০১ সালের ২১ সেপ্টেম্বর, ২০০৬ সালের ২৯ ডিসেম্বর নাটকটির ৫০০তম প্রদর্শনী হয়।

শুধু জনপ্রিয়তা আর দর্শক নয়, দেশে ও বিদেশে অনেক পুরস্কার অর্জন করেছে ‘কঞ্জুস’। ১৯৯৩ সালে দিল্লিতে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক অলিম্পিকে অন্যতম সেরা প্রযোজনার পুরস্কার দেওয়া হয় নাটকটিকে। যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডায় একাধিক বিভাগে পুরস্কৃত হয়েছে। ইউরোপের মোনাকোয় অনুষ্ঠিত ‘বিশ্ব থিয়েটার উৎসব ২০১৩’–তে অংশগ্রহণ করে প্রশংসিত হয়। যুক্তরাজ্যের ব্র্যাডি সেন্টারেও ‘কঞ্জুস’-এর উপস্থাপনা দর্শকনন্দিত হয়।

‘কঞ্জুস’ পুরান ঢাকার বাসিন্দাদের জীবন ও সংস্কৃতির ভিত্তিতে রূপান্তরিত, যাঁরা উর্দু ও বাংলা ভাষার মিশ্রণে এক বিশেষ ধারায় কথা বলেন। তাঁদের জীবনধারার আবহ তৈরি করার জন্য এই নাটকে পুরোনো দিনের জনপ্রিয় সব হিন্দি গান ব্যবহার করা হয়েছে। আজ ‘কঞ্জুস’ নাটকের বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করবেন আজিজুর রহমান, জিয়াউদ্দিন শিপন, রুবেল শংকর, মাসুদ সুমন, আবু বকর বকশি, ঈশিতা চাকি, খাদিজা মোস্তারি, শাহরিয়া কামাল, প্রিয়াঙ্কা বিশ্বাস, স্বদেশ রঞ্জন দাশগুপ্ত ও জুলফিকার আলী।