আজ খনার ৭০তম প্রদর্শনী

খনা নাটকের একটি দৃশ্য। ফাইল ছবি
খনা নাটকের একটি দৃশ্য। ফাইল ছবি

‘যদি বর্ষে মাঘের শেষ, ধন্যি রাজা পুণ্যি দেশ’ অথবা ‘যদি থাকে বন্ধুরে মন, গাঙ সাঁতরাইতে কতক্ষণ’—এসব কথা আগে শোনা যেত দাদি-নানির কাছে। পাঠ্যবইয়ের চেয়ে লোকমুখেই বেশি, বিশেষ করে গ্রামের মানুষের মুখে। তথ্যপ্রযুক্তির প্রসারের বহু আগের কথা; কবে রোদ হবে, কবে বৃষ্টি হবে, কখন ফসল বুনলে গোলা ভরবে বা কখন অনাহারে কাটবে দিন, তা গ্রামে প্রৌঢ় মানুষজন বলে দিতেন। কারণ তাঁরা জানতেন খনার বচন।

সিংহলের রাজকন্যা খনা, যার আরেক নাম লীলাবতী। তিনি জ্যোতির্বিদ্যায় পারদর্শী এক বিদুষী নারী। খনার সেই উপকথাকে নাট্যরূপ দিয়ে নাট্যদল বটতলা প্রথম মঞ্চে আনে ২০১০ সালের ৯ মার্চ। বহুদিন ধরে ঢাকা ও ঢাকার বাইরে বিভিন্ন স্থানে এ নাট্যদল মঞ্চস্থ করে আসছে নাটক ‘খনা’। ইতিমধ্যে কাহিনি ও নাট্য আঙ্গিকের জন্য বেশ দর্শকপ্রিয়তাও অর্জন করেছে নাটকটি। হয়েছে ৬৯টি প্রদর্শনী। আজ বাংলাদেশ শিল্পকলার জাতীয় নাট্যশালার পরীক্ষণ থিয়েটারে নাটকটির ৭০তম প্রদর্শনী হবে। নাটকটি লিখেছেন সামিনা লুৎফা নিত্রা। নির্দেশনা দিয়েছেন মোহাম্মদ আলী হায়দার। বটতলার তৃতীয় প্রযোজনা এটি।

আজ খনা নাটকের ৭০তম প্রদর্শনী হবে। ফাইল ছবি
আজ খনা নাটকের ৭০তম প্রদর্শনী হবে। ফাইল ছবি

আগেই বলা হয়েছে ‘খনা’ নাটকটি বিদুষী ‘খনা’ যার অন্য নাম লীলাবতী, তাঁকে কেন্দ্র করে। তাঁর গল্পটা অনেক পুরোনো, কিংবদন্তির ঘেরাটোপে বন্দী। তবু যেটুকুর তল খুঁজে পাওয়া যায়, তাতে বোধ হয় যে তিনি এক বিদুষী জ্যোতিষী, স্বামী মিহিরও একই বৃত্তিধারী। শ্বশুর যশস্বী জ্যোতিষী বরাহ মিহির। পুত্রজায়ার যশ, খ্যাতি ও বিদ্যার প্রভাব দর্শনে বরাহের হীনমন্যতা ও ঈর্ষা। শ্বশুরের নির্দেশে লীলাবতীর জিহ্বা কর্তন ও তাঁর ‘খনা’ হয়ে ওঠার গল্প পেরিয়েছে প্রজন্মের সীমানা। খনার বচনের মাঝে টিকে থাকা শত বছর আগের জল, মাটি, ফসল আর মানুষের গন্ধ মাখা জ্ঞান আর সত্যটুকু কি সত্যি লীলাবতীর? নাকি এ সত্য-তথ্য সবই এ ভূ-খণ্ডের বৃষ্টি, পলি আর জল হাওয়ার সঙ্গে মিশে থাকা যুগান্তরের সামষ্টিক জ্ঞানের সংকলন? লীলাবতী শুধুই কি একজন নারী বলে তাঁর পরিণতি নির্মম? খনার সত্য শুধু থেকে যায় কৃষকের মুখে। তবু প্রশ্ন থাকে, খনার সত্যই কি একক সত্য? নাকি আজকে নির্ভুল যা, কাল তা হতে পারে অসত্য? শুধু সত্যের পক্ষে দাঁড়ানোর যে মৃত্যু নেশা তাঁর সে নেশা কি একরোখা জেদ? খনা নিজেই নিজেকে করেন সম্মুখীন প্রশ্নের। নাটকে এসব প্রশ্নই উঠেছে বারবার।

খনায় নাটকে অভিনয় করছেন সামিনা লুৎফা নিত্রা, ইমরান খান মুন্না, কাজী রোকসানা রুমা, ইভান রিয়াজ, তৌফিক হাসান, শেউতি শা’গুফতা, মিজানুর রহমান, সুমিত তেওয়ারি রানা, ম. সাঈদ, পঙ্কজ মজুমদার, হামিদুল ইসলাম হিল্লোল, হ‌ুমায়ূন আজম রেওয়াজ, নাফিউল ইসলাম, হাফিজা আক্তার ঝুমা।