'ব্ল্যাক মিরর': পর্বে পর্বে রোমাঞ্চ

>ব্ল্যাক মিরর: পঞ্চম মৌসুম’: ৫ জুন মুক্তি পেয়েছে ‘ব্ল্যাক মিরর’–এর পঞ্চম মৌসুম। তিনটি পর্ব নিয়ে তৈরি এবারের কিস্তি হতাশ করেনি ভক্তদের। প্রতিটি পর্বের ভিত বা মূল বার্তা একই থাকলেও চার্লি ব্রুকারের পরিচালনা বরাবরের মতোই দর্শককে আকৃষ্ট করেছে।

রাস্তা দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎ ধাক্কা খেলেন একজনের সঙ্গে। লোকটা যেন জেনেই আপনাকে ধাক্কা দিয়েছে। কিন্তু কিছু না বলে হাসিমুখে চলে গেলেন আপনি। পকেট থেকে মোবাইলটা বের করতেই পাওয়া গেল লোকটির সামাজিক প্রোফাইল। তার রেটিং ৪.২৫। এত রেটিংয়ের একজন মানুষ কীভাবে ধাক্কা দিতে পারে! ভাবতে ভাবতেই তাকে আপনি পাঁচ রেটিং দিয়ে দিলেন। কারণ আপনি যে পৃথিবীতে বাস করেন, সেখানে একজন মানুষ কেমন, তা রেটিং দিয়েই বিচার করা হয়। ধরুন, আপনি প্লেনের টিকিট কাটবেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আপনার রেটিং যদি ৪.২–এর কম হয়, তবে আপনি ভালো প্লেনে চড়তে পারবেন না। আবার আপনার রেটিং চারের কম হলে আপনার কাছে কেউ বাড়ি বিক্রি করবে না। জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপে আপনার রেটিং দেখবে সবাই। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের রেটিংয়ের পেছনে দৌড়াতে দৌড়াতে আপনি একসময় নিজেকে ভুলে যাবেন। হয়ে যাবেন অন্য কোনো মানুষ। 

বলছিলাম ‘ব্ল্যাক মিরর’ সিরিজের তৃতীয় মৌসুমের প্রথম পর্ব ‘নোজডাইভ’-এর কথা। এমনই সব অসাধারণ গল্প নিয়ে সাজানো সাইফাই সিরিজ ‘ব্ল্যাক মিরর’। প্রতিটি পর্বই একেকটি গল্প। যেসব গল্পের সঙ্গে আপনি মিল পাবেন বাস্তবতার। পাঁচ মিশালি স্বাদের এই সিরিজের প্রতিটি পর্ব আপনাকে রোমাঞ্চিত করবে। 

২০১১ ও ২০১৩–এর ফেব্রুয়ারিতে সিরিজটির প্রথম দুই মৌসুম ব্রিটিশ টেলিভিশন নেটওয়ার্ক ‘চ্যানেল ফোর’–এ প্রচারিত হয়। তৃতীয় মৌসুম থেকে তা কিনে নেয় নেটফ্লিক্স। এখন পর্যন্ত পাঁচ কিস্তিতে সিরিজটির ২২টি পর্ব মুক্তি পেয়েছে। 

প্রথম পর্ব: স্ট্রাইকিং ভাইপারস

দুই বন্ধু—ড্যানি ও কার্ল। সন্তান ও স্ত্রীকে নিয়ে ড্যানির খুবই সাদামাটা জীবন। অনেক দিন পর ড্যানির জন্মদিনে অতিথি হয়ে আসে কলেজবন্ধু কার্ল। এরপর কলেজজীবনের ভিডিও গেমের আপডেটেড ভিআর (ভার্চ্যুয়াল রিয়েলিটি) ভার্সন খেলা থেকেই মূল ঘটনার শুরু হয়। গেমের নাম স্ট্রাইকিং ভাইপার্স। গেমটি মূলত দুজন স্ট্রিট ফাইটারের মধ্যে। গেমের মধ্যে ‘ল্যান্স’ নামে একটি পুরুষ চরিত্রকে বেছে নেয় ড্যানি ও ‘রক্সেট’ নামের একটি মেয়ে চরিত্রকে বেছে নেয় কার্ল। ভিডিও গেমের চিপ মাথায় লাগানোর সঙ্গে সঙ্গে ড্যানি ও কার্ল প্রবেশ করে ল্যান্স ও রক্সেটের শরীরে। গেমের চরিত্র ব্যথা পেলে ব্যথা পায় আসল খেলোয়াড়েরা। একইভাবে গেমের চরিত্র যা অনুভব করে, গেমারও তা–ই অনুভব করতে শুরু করে। সেখান থেকেই মূল সমস্যার সৃষ্টি। গেমের নারী ও পুরুষ চরিত্রের মধ্যে সৃষ্টি হয় শারীরিক সম্পর্কের এবং সেই সম্পর্কের প্রভাব পড়ে ড্যানি আর কার্লের বাস্তব জীবনেও। পর্বটির মূল চরিত্রে অভিনয় করেছেন মার্ভেল সিনেমাটিক ইউনিভার্সের ‘ফ্যালকন’–খ্যাত অভিনেতা অ্যান্থনি ম্যাকি ও ইয়াহয়া-আব্দুল-মাতিন। 

দ্বিতীয় পর্ব: স্মিথেরিনস

ট্যাক্সি ড্রাইভার ক্রিস সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের প্রতিষ্ঠান স্মিথেরিনসের এক ইন্টার্নকে অপহরণ করে। তবে কোনো দুর্ধর্ষ উদ্দেশ্যে নয়, ক্রিস শুধু চায় স্মিথেরিনের প্রধান বিলি বাওয়ারের সঙ্গে কথা বলতে। অনেক ঝামেলার পর ক্রিসের কথা হয় বিলির সঙ্গে। ক্রিস জানায়, নিজের জীবনের করুণ পরিণতি, কীভাবে স্মিথেরিন কেড়ে নিয়েছিল তার সবকিছু। পর্বটি দেখার পর বেচারা ক্রিসের জন্য আপনার খারাপ লাগবে, এটাই স্বাভাবিক। তবে সঙ্গে সঙ্গে বর্তমানে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারকারী হিসেবে একটি ভালো বার্তাও পাবেন আপনি। 

তৃতীয় পর্ব: র​্যাচেল, জ্যাক অ্যান্ড অ্যাশলে টু

র​্যাচেল ও জ্যাক—দুই বোন। মা মারা যাওয়ার পর বাবাকে নিয়েই থাকে তারা। র​্যাচেলের জন্মদিনে বাবা উপহার দেয় ‘অ্যাশলে টু’ নামের এক পুতুল। পুতুলটি মূলত অ্যাশলে নামের এক পপ তারকার আদলে তৈরি। সেই গায়িকার চরিত্রের সম্পূর্ণ মস্তিষ্কই হুবহু নকল করে বসানো পুতুলের ভেতর। এই পর্বে অ্যাশলে চরিত্রে অভিনয় করেছেন জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী মাইলি সাইরাস। এতে মাইলির কণ্ঠে গাওয়া ‘হেড লাইক আ হোল’–এর ‘নাইন ইঞ্চ নেইলস’ গানটি দর্শকমহলে প্রশংসা কুড়িয়েছে বেশ। 

মূলত অ্যাশলেকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়ে তার জায়গায় পুতুলরূপী এই নকল অ্যাশলেকে বসানোর চেষ্টা করে তার ম্যানেজার ও আত্মীয় ক্যাথারিন। পরে অ্যাশলেকে উদ্ধারে ভক্ত র​্যাচেল আর জ্যাকের সম্মিলিত অভিযান নিয়ে এই পর্ব। শেষমেশ অ্যাশলের পরিণতি কী হয়েছিল, তা জানতে আপনাকে দেখতে হবে এপিসোডটি।