স্টুডিও থিয়েটারে 'রং লেগেছে'

‘রং লেগেছে’ নাটকের একটি দৃশ্য। ছবি: প্রথম আলো
‘রং লেগেছে’ নাটকের একটি দৃশ্য। ছবি: প্রথম আলো

দুপুর থেকে ইলশেগুঁড়ি বৃষ্টি। বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যায়ও আকাশের মন ভার, মেঘে ঢাকা। এর মধ্যে শিল্পকলা একাডেমির স্টুডিও থিয়েটার মিলনায়তনে ছিল নাট্যানুরাগী দর্শকের দারুণ উপস্থিতি। বৃষ্টি মাথায় নিয়ে তাঁরা এসেছেন। এখানে নাট্যদল পালাকার এনেছে রোমান্টিক কমেডি প্রযোজনা ‘রং লেগেছে’। শুক্রবার বিকেলে নাটকটির প্রথম এবং সন্ধ্যায় দ্বিতীয় প্রদর্শনী হয়।

১৮৯০ সালের ২৪ ডিসেম্বর কলকাতার মঞ্চে ‘পৌরাণিক পঞ্চ রং’ শিরোনামে নাটকটি প্রথম মঞ্চস্থ করে কমেডি নাট্যদল দ্য রয়েল বেঙ্গল থিয়েটার। সেই মঞ্চায়নের ঘটনাটির ১৩০ বছর পর নতুন রূপে নাটকটি মঞ্চে এনেছে পালাকার। নাটকটির নাট্য নবায়নের পাশাপাশি পরিকল্পনা ও নির্দেশনায় রয়েছে আমিনুর রহমান মুকুল। কাল শনিবার বিকেল ৫টায় এবং সন্ধ্যা ৭টায় নাট্যশালার স্টুডিও থিয়েটার হলে নাটকটির তৃতীয় ও চতুর্থ মঞ্চায়ন হবে।

শুক্রবার বিকেলে নাটকের উদ্বোধনীতে উপস্থিত ছিলেন শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী ও নাট্যজন আতাউর রহমান। প্রযোজনাটি প্রসঙ্গে আমিনুর রহমান মুকুল বলেন, পালাকার দীর্ঘদিন ধরে নতুন সদস্যদের দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য স্টুডিওভিত্তিক নাট্য নির্মাণের প্রক্রিয়া চালু রেখেছে। সেই ধারাবাহিকতায় এবারের নির্বাচিত নাট্যধারা রোমান্টিক কমেডি। তিনি আরও বলেন, ‘প্রায় শতবর্ষ আগের পাণ্ডুলিপিটি হাতে পেয়ে আমি কাজ শুরু করি। ধীরে ধীরে এই নির্মাণ প্রক্রিয়ায় নতুনদের পাশাপাশি দলের অভিজ্ঞ নাট্যকর্মীও যুক্ত হন। ২০০ বছর আগে কলকাতার থিয়েটারে যেসব নাটক জনপ্রিয়তার দাপটে বারবার অভিনীত হয়েছে, তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি ছিল ইউরোপীয় ধারার রোমান্টিক কমেডি। ওই সময়ে মলিয়ের ও শেকসপিয়ারের অনুবাদ নাটক অসংখ্যবার মঞ্চস্থ হয়েছে। সেই সঙ্গে একই ধারার মৌলিক নাটক সৃষ্টির প্রবণতাও আমরা লক্ষ্য করেছি, যার উৎকৃষ্ট উদাহরণ এই স্টুডিও প্রযোজনা “রং লেগেছে”।’

‘রং লেগেছে’ নাটকটি মঞ্চে এনেছে পালাকার নাট্যদল। ছবি: প্রথম আলো
‘রং লেগেছে’ নাটকটি মঞ্চে এনেছে পালাকার নাট্যদল। ছবি: প্রথম আলো

আমিনুর রহমান মুকুল জানান, এই প্রযোজনায় মূল পাণ্ডুলিপিতে যতগুলো চরিত্রসংখ্যা ছিল, প্রযোজনাগত কারণে তা কিছুটা কমানো হয়েছে। ফলে স্বভাবতই পাণ্ডুলিপিতেও কিছু পরিবর্তন আনা হয়েছে। পাণ্ডুলিপির মূল ভাব ঠিক রেখে কিছু কিছু ক্ষেত্রে এর সুরও কিছুটা পরিবর্তিত হয়েছে।

নাটকের কাহিনিতে ইন্দ্রের নির্দেশে মদন আর বসন্তদেব বেশ ধারণ করে পৃথিবীতে আবির্ভূত হন। তাদের উদ্দেশ্য হচ্ছে, সিংহলের সেনাপতি রণবীর সিংহ ও তার স্ত্রী মেঘমালার প্রেমের গভীরতা মাপা। রণবীরের ছদ্মবেশ নিল মদনদেব, আর রণবীরের চাকর শশীর ছদ্মবেশ নিল বসন্ত। তারা সিংহল সেনাপতির বাড়িতে এসে মেঘমালার সঙ্গে ভাব করতে চাইল। বাদ সাধল মেঘমালার দুই দাসী চাঁপা ও কাতি। তাদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে যখন দুই দেবতার প্রাণ যায় যায় অবস্থা, তখনই যুদ্ধ শেষে ফেরত এল রণবীর ও শশী। স্বাভাবিকভাবেই দুই রণবীর ও দুই শশীকে নিয়ে মেয়েদের মাঝে উঠল গুঞ্জন। একদিকে চলে এল রণবীর ও শশীকে চেনার পালা, অন্যদিকে আছে মেঘমালা ও রণবীরের প্রেমের গভীরতা নির্ধারণ।

প্রযোজনাটির বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন বাবর খাদেমী, আসাদুজ্জামান শুভ, কাজী ফয়সল, শাহাদাত সাব্বির, রিয়াজ হোসেন, রিয়াজ হোসেন, ফাহমিদা মল্লিক, তামান্না ইয়াসমিন, শাহনাজ আঁখি, মিশকাতুর রহমান, শাহাদাত সাব্বির প্রমুখ।