কমে গেছে খোলা মাঠের কনসার্ট

শিল্পী আছে, মাঠও আছে কিন্তু খোলা মাঠে কনসার্ট গেছে কমে।  ছবিটি জেমসের একটি কনসার্টের। ফাইল ছবি
শিল্পী আছে, মাঠও আছে কিন্তু খোলা মাঠে কনসার্ট গেছে কমে। ছবিটি জেমসের একটি কনসার্টের। ফাইল ছবি

খোলা মাঠের কনসার্ট এখনো হয়, তবে আগের তুলনায় কম। ভেন্যুসংকট, নিরাপত্তাজনিত সমস্যা, ক্ষেত্রবিশেষে পৃষ্ঠপোষকতার অভাবেও হয় না খোলা মাঠের কনসার্ট।

একটা সময় রাজধানী ঢাকায় কমলাপুর স্টেডিয়াম, আর্মি স্টেডিয়াম, বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়াম, মিরপুর শেরেবাংলা নগর স্টেডিয়াম, রাওয়া ক্লাব মাঠ, ধানমন্ডি মহিলা ক্রীড়া কমপ্লেক্স, মোহাম্মদপুর শারীরিক শিক্ষা কলেজ মাঠ, কলাবাগান মাঠে নিয়মিত ওপেন এয়ার কনসার্ট হতো। এসব মাঠের বেশির ভাগেই এখন আর কনসার্ট হয় না। রাওয়া ক্লাব মাঠের তো অস্তিত্বই নেই। ঢাকার বাইরেও একই অবস্থা।

১২ বছর বয়সী গানের দল শূন্যর ভোকাল ইমরুল করিম এমিল বলেন, ‘আমরা যখন পেশাদার গানের জগতে এলাম, তখন ওপেন এয়ার কনসার্ট কমতে থাকল। এখন ইনডোর অনুষ্ঠান বেশি হয়। ওপেন এয়ার কনসার্টে সবচেয়ে বড় সমস্যা শুনি ভেন্যুর। ভেন্যু পাওয়া গেলেও খরচ অনেক। এ ছাড়া নিরাপত্তাজনিত সমস্যার কারণে কনসার্ট করা সম্ভব হচ্ছে না।’ এমিল বলেন, ‘আমি মনে করি, আগেকার দিনে সম্পর্ক কিংবা আবেগটাকে গুরুত্ব দেওয়া হতো পৃষ্ঠপোষকতায়। এখন অনেক কিছু ভাবতে হয় প্রতিটি প্রতিষ্ঠানকে। পৃষ্ঠপোষক প্রতিষ্ঠানের ব্যবসায়িক লাভ কত হবে না হবে, এমন বিষয়ও কাজ করে।’

এমিলের কথার সঙ্গে মিল পাওয়া যায় ওয়ারফেজ ব্যান্ডের দলনেতা ও বাংলাদেশ ব্যান্ড মিউজিক অ্যাসোসিয়েশনের (বামবা) সাধারণ সম্পাদক মনিরুল আলম টিপুর। তিনি বলেন, ‘পৃষ্ঠপোষক প্রতিষ্ঠান কিংবা আয়োজক ওপেন এয়ার কনসার্ট করতে চায়। অপ্রতুল ভেন্যুর কারণে আয়োজকেরা সব প্রস্তুতি নিয়েও এগোতে পারেন না। নিরাপত্তাজনিত সমস্যার পাশাপাশি এও বলা হয়, সময়টা ওপেন এয়ার কনসার্টের উপযোগী নয়।’

আশির দশকের মাঝামাঝি বিশ্ব সংগীতাঙ্গন যখন মেটাল–জ্বরে কাঁপছে, তখন মেটাল হার্ড রকের উন্মাদনা স্পর্শ করে বাংলাদেশকেও। এর মধ্যে যাদের কথা প্রথমেই উচ্চারিত হয়, তাদের মধ্যে ওয়ারফেজ অন্যতম। ৩৫ বছরে পা রাখা এই গানের দলটি দেশের আনাচকানাচে অসংখ্য ওপেন এয়ার কনসার্ট করেছে। ওপেন এয়ার কনসার্ট কমে যাওয়ায় চিন্তিত দলটির দলনেতা টিপু। আক্ষেপ করে তিনি বলেন, ‘শিল্পীদের পক্ষ থেকে বলতে চাই, শুধু গানের জন্যই একটা কিংবা দুটি মঞ্চ সব সময়ের জন্য থাকা উচিত। যেখানে শুধু গান-বাজনা হবে। শ্রোতারা টিকিট কেটে গান শুনতে আসবেন। সংস্কৃতিচর্চা হবে। নাটকের জন্য গাইড হাউস, মহিলা সমিতি, শিল্পকলা, মহানগর নাট্যমঞ্চ আছে—আমাদের জন্য কিছুই নেই। আমরা যা করছি, একান্ত ভালো লাগা এবং একক প্রচেষ্টা থেকে।’

ব্যান্ডের বেশির ভাগ দলনেতা একবাক্যে স্বীকার করেছেন, ওপেন এয়ার কনসার্টের জন্য প্রথমেই প্রয়োজন মাঠের। সারা দেশে এসব মাঠের ভাড়াও আগের তুলনায় অনেক বেড়েছে। মাত্রাতিরিক্ত ভাড়ার কারণে বড় ধরনের ইভেন্ট ওপেন এয়ার কনসার্টে অর্থনৈতিক ঝুঁকি বেশি। মোটা অঙ্কের টাকা প্রয়োজন হওয়ায় ওপেন এয়ার কনসার্টগুলোর আয়োজন এখন কেবল বড় বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলোই করতে পারে। এখন কিন্তু আর আগের মতো সাধারণ মানের মঞ্চ বানিয়ে ওপেন এয়ার কনসার্ট হয় না। এখানেও অনেক ব্যয় হয়। খরচ অনেক বেড়ে গেছে।

আর্টসেল ব্যান্ডের অন্যতম সদস্য লিংকন বলেন, ‘আমরা চাই সারা দেশে খোলা মাঠে আগের মতো কনসার্ট করতে। কিন্তু সব সময় শুনি নিরাপত্তা সমস্যা।’

ওপেন এয়ার কনসার্টে অর্থনৈতিক তহবিল বড় বিষয় হয়ে দাঁড়ায় বলে মনে করছেন রেনেসাঁ ব্যান্ডের অন্যতম সদস্য নকীব খান। তিনি বলেন, ‘হাতে গোনা কয়েকটি প্রতিষ্ঠান ছাড়া এখন আর কেউ খোলা মাঠে কনসার্ট করে না। তাও আবার বিশেষ দিনে। সব ঠিক হলেও নিরাপত্তার কারণে নিরুৎসাহিত করা হয়।’

সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় গত বছর দেশের বিভাগীয় শহরগুলোতে বেশ কয়েকটি ওপেন এয়ার কনসার্ট অনুষ্ঠিত হয়। গান বাংলা চ্যানেলের আয়োজনে সেসব কনসার্টে দেশের শিল্পীদের সঙ্গে বিদেশি যন্ত্রশিল্পীরা বাজিয়েছেন।