আমি রাজি ছিলাম না

>রীতিমতো চ্যালেঞ্জ ছিল শহীদ কাপুরের কাছে। কারণ, দক্ষিণ ভারতে অর্জুন রেড্ডি দারুণ হিট ছবি ছিল। তারই অনুকরণে তৈরি কবির সিংও আলোচনায় উঠে এল। আবার কিয়ারা আদভানির জন্যও কাজটা খুব সহজ ছিল না। কথা হলো হালের আলোচিত–সমালোচিত ছবি কবির সিং–এর নায়ক শহীদ ও নায়িকা কিয়ারার সঙ্গে। কথা বললেন প্রথম আলোর মুম্বাই প্রতিনিধি দেবারতি ভট্টাচার্য।
শহীদ কাপুর
শহীদ কাপুর

অর্জুন রেড্ডি ইতিমধ্যে দক্ষিণ ভারতের সফল ছবি। তাই কবির সিং করা আপনার জন্য কতটা চ্যালেঞ্জিং ছিল? 

শহীদ কাপুর: চ্যালেঞ্জ তো নিশ্চয়। তবে অর্জুন রেড্ডি দেখে আমার দারুণ লাগে। এই নয় যে ছবিতে শুধু দুর্ধর্ষতাই আছে। অর্জুন রেড্ডিতে আছে কমেডি, রোমান্স—সবকিছুই। তবে ছবির পরিচালক সন্দীপ ভঙ্গা আমাকে যখন এর রিমেকের কথা বলেন, আমি রাজি ছিলাম না। ও যখন জোর করে, তখন রাজি হয়ে যাই। মীরাও আমাকে ছবিটি করার পরামর্শ দেয়। 

তাহলে ক্যারিয়ারের ক্ষেত্রে মীরার পরামর্শকে গুরুত্ব দেন? 

শহীদ: জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে মীরার পরামর্শ আমার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। 

তাই কি ইদানীং আপনি নিজের ক্যারিয়ার নিয়ে অনেক বেশি সিরিয়াস? 

শহীদ: হা, হা (সশব্দে হেসে)। তাই নাকি! আগে সিরিয়াস ছিলাম না তাহলে। আসলে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে অনেক কিছু শিখেছি। এখন আমার মধ্যে স্থিরতা এসেছে। ধৈর্য বেড়েছে। চিত্রনাট্যকে জানতে, বুঝতে শিখেছি। আমি অনেক অভিনেতাকে দেখেছি ক্যারিয়ারের শুরুর দিকে কিছুটা টালমাটাল ছিলেন। আমার ক্যারিয়ারের প্রথম ১০টা বছরে প্রচুর চড়াই–উতরাই ছিল। আর এই সবকিছু আমাকে জীবনে অনেক কিছু শিখিয়েছে।

 আপনাকে ক্রমাগত জটিল সব চরিত্রে দেখা যাচ্ছে। ভাবমূর্তি খারাপের ভয় করে না? 

শহীদ: একদমই না। নায়ক মানেই সব সময় ভালো হতে হবে, তার মানে নেই। এখন ছবির ধারা বদলেছে। আর যদি ভাবমূর্তির ভয় থাকত, তাহলে দিলীপ কুমার ‘দেবদাস’ বা অমিতাভ বচ্চন ‘অ্যাংরি ইয়ংম্যান’ হতেন না। দর্শক শুধু নায়ককে দেখতে থিয়েটারে যান না। 

আপনার আগের ছবিগুলোর মধ্যে কিছু না কিছু বার্তা ছিল। ছবিতে কোনো বার্তা থাকতে হবে—একে কি খুব জরুরি বলে মনে করেন? 

শহীদ: আমার কাছে সিনেমা মানে বিনোদন। সবাই আনন্দ পেতে সিনেমা হলে যান। তাই ছবিতে জোর করে কোনো বার্তা দেওয়ার প্রয়োজন আছে বলে আমি মনে করি না। উড়তা পাঞ্জাব একটা সামাজিক ছবি ছিল। পাঞ্জাবে তরুণদের মাদকের প্রতি আসক্তি নিয়ে ছবিটা হয়েছিল। এর মধ্যে একটা বার্তা ছিল। কিন্তু কবির সিং নির্ভেজাল প্রেমের ছবি। একটা ছেলে বিরহে কত দূর যেতে পারে, সেটা দেখানো হয়েছে। এখানে সে রকম কোনো বার্তা নেই। তাই জোর করে বার্তা দেওয়ার প্রয়োজন নেই। 

আপনি এই কয়েক বছরে বৈচিত্র্যপূর্ণ নানান চরিত্রে অভিনয় করেছেন। এর জন্য কীভাবে নিজেকে প্রস্তুত করলেন? 

শহীদ: একজন অভিনেতা হিসেবে আমি মনে করি, একটা চরিত্রের বাহ্যিক অবয়বকে অনুসরণ করা ঠিক নয়। চরিত্রের আত্মাকে স্পর্শ করা উচিত। তাকে অনুভব করা প্রয়োজন। অনেক অভিনেতাকে বলতে শুনেছি, ‘চরিত্রের প্রয়োজনে আমি নিজেকে গৃহবন্দী করে রেখেছিলাম। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে অভিনয় করেছি।’ যখন কিছু বলার থাকে না, তখনই তাঁরা এসব কথা বলেন। একটা চরিত্রের গভীরে প্রবেশের জন্য মগজাস্ত্রের প্রয়োজন। 

 ‘কবির সিং’-এর মতো জটিল চরিত্র করার সময় ব্যক্তিজীবনে কি কোনো প্রভাব পড়েছে? 

শহীদ: ওরে বাবা! মীরা তাহলে আমাকে বাড়িতে ঢুকতেই দেবে না। আমি বাড়ি আসার সময় ‘কবির সিং’কে সেটে রেখে আসতাম। আমি একজন বাস্তবিক অভিনেতা। তাই ব্যক্তিজীবন এবং পেশাগত জীবন আলাদা করতে জানি। 

আপনাকে ইদানীং বেশি নেতিবাচক বৈশিষ্ট্যে ভরা চরিত্রে দেখা যায়। তার কুপ্রভাব কি আপনার সন্তানদের ওপর পড়তে পারে? 

শহীদ:  আমার তো এটাই কাজ। একদিকে আমি অভিনেতা, অন্যদিকে আমি মিশা-জায়ানের বাবা। আমার সন্তানেরা একটু বড় হলে বুঝবে তফাতটা। আমি চাই, মিশা-জায়ান পরিণত হয়ে উড়তা পাঞ্জাব ছবিটা দেখুক। সিনেমা মানে সব সময় ভালো দেখাবে, তার কোনো মানে নেই। সিনেমা তো সমাজেরই আয়না। আমি যদি সন্তানের সামনে মদ্যপান করতাম, এদিকে পর্দাতে ভালো মানুষের চরিত্রে অভিনয় করতাম, সেটা কি ঠিক কাজ হতো?