নাটকের বাজেট কমেই চলছে

জনপ্রিয়তার কারণেও বহু নাটকে অভিনয় করতে হয়েছে জাহিদ হাসানকে। নকল হতে সাবধান নাটকের একটি দৃশ্য। ছবি: সংগৃহীত
জনপ্রিয়তার কারণেও বহু নাটকে অভিনয় করতে হয়েছে জাহিদ হাসানকে। নকল হতে সাবধান নাটকের একটি দৃশ্য। ছবি: সংগৃহীত

আগে ধারাবাহিক নাটকে বা শুরুর দিকে প্যাকেজ নাটকের জন্য যে বাজেট রাখা হতো, তাতে বেশ স্বচ্ছন্দেই কাজ করতে পারতেন পরিচালকেরা। এখন সেই বাজেট নাকি স্বপ্ন। একেই ভালো নাটক না হওয়ার অন্যতম কারণ মনে করছেন পরিচালকেরা। কেউ বলছেন, ৪০ মিনিটের একটি ভালো মানের নাটক বানাতে কমপক্ষে ৬ লাখ টাকা খরচ হয়। কেউ বলছেন ৪ থেকে সাড়ে ৪ লাখেও চলে।

বাংলাদেশ টেলিভিশনের পাশাপাশি স্যাটেলাইট চ্যানেল হিসেবে যাত্রা শুরু করে এটিএন বাংলা। টেরিস্ট্রিয়াল চ্যানেল হিসেবে বাংলাদেশের বিনোদনে নতুন মাত্রা যোগ করে একুশে টেলিভিশন। পরে যুক্ত হয় চ্যানেল আই, এনটিভি, আরটিভি, বাংলাভিশন, বৈশাখী, মাছরাঙা, নাগরিকসহ বেশ কয়েকটি চ্যানেল। এগুলোর প্রায় সবটিতেই নাটক দেখানো হচ্ছে। শুরুর দিকে তারা ভালো বাজেটেই নাটকগুলো কিনে প্রচার করত। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, একপর্যায়ে অপেশাদার কিছু পরিচালক, প্রযোজক ও অভিনয়শিল্পীর কারণে চ্যানেলের নাটকের বাজেট কমতে থাকে। গত এক দশকের বেশি এ অবস্থা আরও শোচনীয় হয়ে ওঠে।

এক দশক আগেও প্রধান চরিত্রের জন্য অভিনয়শিল্পীরা পেতেন ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা। এখন কখনো সেটা গিয়ে ঠেকেছে লাখে। উত্তরার যে শুটিংবাড়ির ভাড়া আগে ছিল দিনে ২ হাজার টাকা, সেটা এখন ১০ হাজারে পৌঁছেছে। পরিবহন বাবদ খরচ হতো ৮০০ থেকে ১ হাজার ৮০০ টাকা; এখন তা প্রায় সাড়ে ৩ হাজার। রূপসজ্জাকার পেতেন ৮০০ থেকে ১ হাজার, যা এখন প্রায় আড়াই হাজার টাকা। শুটিংবাড়িতে মাথাপিছু খাবারের খরচ ছিল ৬০ থেকে ৮০ টাকা, এখন ২৩০ টাকা। ক্যামেরাম্যান, লাইটম্যান, অন্য সহযোগীরা ৩০০ থেকে ৪০০ টাকার বদলে নিচ্ছেন ৮০০ টাকা। মোটকথা, নাটক নির্মাণের প্রতিটি খাতে খরচ বাড়লেও বিক্রি করতে গেলে নাটকের দাম উঠতেই চায় না এখন।

ডিরেক্টরস গিল্ডের সভাপতি সালাহউদ্দিন লাভলু বলেন, ‘সব খরচ বেড়েছে, শুধু কমেছে নাটকের দাম। তাহলে ভালো নাটক কী করে হবে? ভালো নাটক করতে গেলে একজন ভালো চিত্রনাট্যকার লাগবে, যিনি দেশ-সমাজ-রাজনীতি-খেলাধুলা-শিল্প-সাহিত্য বোঝেন। এ রকম একজন লেখককে একক নাটকের জন্য সম্মানী দিতে হয় ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা।’

পরিচালক সালাহউদ্দিন লাভলু ১৯৯৭ সালে তাঁর পরিচালনায় কৈতব নাটকের জন্য পেয়েছিলেন সাড়ে পাঁচ লাখ টাকা। অথচ ২১ বছর পর বাজেট তার চেয়েও কমে গেছে। তিনি বললেন, ‘হাতে গোনা কিছু পরিচালকের বিষয় আলাদা। তাঁরা ভালো বাজেট পান। অন্য সব ক্ষেত্রে একজন পরিচালক নাটকপ্রতি দুই থেকে আড়াই লাখ টাকা পান; যা দিয়ে কোনোভাবেই ভালো নাটক বানানো সম্ভব নয়।’

২০০০ সালে লন্ডনে দুটি নাটকের শুটিং করেন অভিনয়শিল্পী ও পরিচালক জাহিদ হাসান। সেই সময় নাটক দুটির বাজেট ছিল সাড়ে তিন লাখ টাকা করে। তিনি বলেন, ‘এখন আগেই বাজেট জানিয়ে বলা হয়, এত টাকার মধ্যে নাটক বানাতে হবে। দিনের পর দিন সেটা কমছে।’ তিনি মনে করেন, নাটকের বাজেট যৌক্তিকভাবে বাড়াতে হবে। এখন একটি ভালো মানের নাটক বানাতে চার থেকে সাড়ে লাখ টাকা খরচ হয়।’

এনটিভির অনুষ্ঠানপ্রধান মোস্তফা কামাল সৈয়দ বলেন, ‘এখন চ্যানেল বেশি, বাজার সংকুচিত হয়ে গেছে। এসব কারণেও বাজেট কমছে। চ্যানেলকে বিজ্ঞাপনের ওপর চলতে হয়। তাই সংকট ঘনীভূত হচ্ছে।’

এ থেকে উত্তরণের উপায় জানতে চাইলে সালাহউদ্দিন লাভলু বলেন, ‘কিছু ক্ষেত্রে বিজ্ঞাপন তৃতীয় পক্ষের নিয়ন্ত্রণে চলে গেছে। এসব সংকট নিরসনে আন্তসংগঠনগুলোর এক হয়ে কাজ করতে হবে। সরকারকেও ভাবতে হবে।’