বিলেতের মাঠে বাংলাদেশি তারকারা

প্রথম মাঠে বসে ক্রিকেট খেলা দেখার অভিজ্ঞতা হলো রুনা লায়লার। তাঁর সঙ্গে ছিলেন মেয়ে আর জামাতা
প্রথম মাঠে বসে ক্রিকেট খেলা দেখার অভিজ্ঞতা হলো রুনা লায়লার। তাঁর সঙ্গে ছিলেন মেয়ে আর জামাতা

লন্ডনে আছেন আর মাঠে বসে বাংলাদেশ দলের বিশ্বকাপ খেলা দেখবেন না, তা কী করে হয়! তাই তো কন্যা, জামাতাকে নিয়ে বাংলাদেশ আর পাকিস্তানের মধ্যকার ক্রিকেট খেলা মাঠে বসেই উপভোগ করলেন বাংলাদেশের কিংবদন্তি গায়িকা রুনা লায়লা। শুধু তা-ই নয়, বিলেতের এই মাঠে সেদিন উপস্থিত ছিলেন আরও কয়েকজন তারকা। ছিলেন জয়া আহসান, ফজলুর রহমান বাবু, আশনা হাবিব ভাবনা, সাঈদ বাবু। বিলেতের খেলার মাঠে দেখা গেছে চিত্রনায়ক ফেরদৌস, পরিচালক শাফায়েত মনসুর রানা, অভিনয়শিল্পী অপর্ণা ঘোষকেও। নিজ দলের খেলা মাঠে বসে উপভোগ করতে তাঁরা পর্যায়ক্রমে বিলেতের মাঠে উপস্থিত ছিলেন।

বিশ্বকাপ ক্রিকেটের উদ্বোধনী আসরে বাংলাদেশ দলের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করেন জয়া আহসান। আইসিসির আমন্ত্রণে বাংলাদেশ থেকে তিনি আমন্ত্রিত হন এবং প্রথম দিনের খেলা মাঠে বসে উপভোগ করেন। ছবির কাজের ব্যস্ততার কারণে উদ্বোধনী খেলা দেখেই জয়াকে কলকাতায় ফিরে যেতে হয়।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাগনি টিউলিপ সিদ্দিকীর সঙ্গে রুনা লায়লা, তাঁর মেয়ে ও জামাতা
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাগনি টিউলিপ সিদ্দিকীর সঙ্গে রুনা লায়লা, তাঁর মেয়ে ও জামাতা

এবারই প্রথম মাঠে বসে খেলা দেখার অভিজ্ঞতা হয়েছে রুনা লায়লার। মাসখানেক আগে একমাত্র মেয়ে আর দুই নাতনির সঙ্গে সময় কাটাতে তিনি লন্ডনে যান। একই সময় নিজ দেশ বিশ্বকাপ ক্রিকেট খেলছে, সুযোগ খুঁজছিলেন একদিন মাঠে বসে বসে খেলা উপভোগ করবেন। ব্যাটে-বলে মিলে যায় ৫ জুলাই। সেদিন লর্ডসের মাঠে কন্যা, জামাতাসহ হাজির হন। খেলা উপভোগের পাশাপাশি তাঁর সঙ্গে দেখা হয় বাংলাদেশ দলের সাবেক অধিনায়ক ও বিসিবির ক্রিকেট পরিচালনা প্রধান আকরাম খান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাগনি টিউলিপ সিদ্দিকীসহ আরও অনেকের।

এদিকে মাঠে যখন খেলা চলছিল, তখন কানে ভেসে আসছিল রুনা লায়লার গাওয়া সেই বিখ্যাত গান ‘দমাদম মাস্ত কালান্দার’। বিষয়টি রুনা লায়লার জন্য ছিল চমৎকার অনুভূতি। ফেসবুকে একটি ভিডিও শেয়ার করে লিখেছেন, ‘বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের খেলা চলাকালে ব্রিটিশ জ্যাজ গানের দল “দমাদম মাস্ত কালান্দার” গানটি পরিবেশন করছে।’

লর্ডসে সাবেক অধিনায়ক ও বিসিবির ক্রিকেট পরিচালনা প্রধান আকরাম খানের সঙ্গে রুনা লায়লা, তাঁর মেয়ে ও জামাতা
লর্ডসে সাবেক অধিনায়ক ও বিসিবির ক্রিকেট পরিচালনা প্রধান আকরাম খানের সঙ্গে রুনা লায়লা, তাঁর মেয়ে ও জামাতা

রুনা লায়লার মেয়ে সংগীতশিল্পী তানি লায়লা তাঁর অনুভূতি জানিয়ে লিখেছেন, ‘সংগীত একটি সর্বজনীন ভাষা, যার কোনো সীমানা বা রং নেই। একটি ব্রিটিশ জ্যাজ গানের দল আম্মুর গান লর্ডসের মাঠে বাজাচ্ছে! তোমরা যারা সংগীতকে মূল্য দিতে চাও না অথবা সংগীতের শক্তি সম্পর্কে ধারণা নেই, তারা আরেকবার ভেবে দেখো। সবচেয়ে চমৎকার ব্যাপার ছিল, মায়ের গানটির সঙ্গে বাংলাদেশ ও পাকিস্তানি সমর্থকেরা একসঙ্গে নাচানাচি করছিল। আমরা ভীষণ গর্বিত।’

বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যকার খেলা দেখতে স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে লন্ডনে যান ফজলুর রহমান বাবু। তিনি বলেন, ‘সুযোগ খুঁজছিলাম আমার দেশের বিশ্বকাপ ক্রিকেট ম্যাচ মাঠে বসে দেখার। সেই সুযোগ মিলে যাওয়ায় ভালো লেগেছে। বিশ্বকাপ খেলা মাঠে বসে দেখার অনুভূতিই অন্য রকম। এত বাঙালি, মনেই হয়নি দেশের বাইরে কোথাও আছি।’

বিশ্বকাপ ক্রিকেটের খেলার দেখার ফাঁকে সাঈদ বাবু
বিশ্বকাপ ক্রিকেটের খেলার দেখার ফাঁকে সাঈদ বাবু

দেশের মাঠে অনেকবার বাংলাদেশ দলের খেলা দেখার অভিজ্ঞতা আছে তরুণ অভিনয়শিল্পী ভাবনার। এবারই প্রথম দেশের বাইরে খেলা দেখতে গেছেন। জানালেন, দেশের বাইরে খেলা দেখতে গিয়ে অন্য রকম দেশপ্রেম অনুভূত হয়েছে। বললেন, ‘স্ট্যানফোর্ড স্টেশনে নেমে মনে হয়েছিল, আমি তো দেশের বাইরে না। চারদিকে বাংলাদেশের জার্সি পরা মানুষ। মনে হচ্ছিল, এটা তো বাংলাদেশে!’

ট্রেনে চড়ে লর্ডসের মাঠে যান ভাবনা। মাঠে ঢোকার পরের অনুভূতি বললেন এভাবে, ‘মাঠে ঢোকার পর যখন জাতীয় সংগীতের সঙ্গে কণ্ঠ মেলাচ্ছি, তখন কান্না পেয়েছে। তবে বাংলাদেশ হারবে, এটা ভাবিনি। মন খারাপ হয়েছিল। এই খেলা দেখার জন্যই ঈদের আগে সব নাটকের শুটিং বাদ দিয়ে লন্ডনে এসেছি। এটাই তো ভালোবাসা। এই আমাদের দেশপ্রেম।’

বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের খেলা দেখেছেন জয়া আহসান, ফজলুর রহমান বাবু ও ভাবনা
বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের খেলা দেখেছেন জয়া আহসান, ফজলুর রহমান বাবু ও ভাবনা

দুই সন্তান আর স্ত্রীকে নিয়ে লন্ডনে বেড়াতে গিয়ে বাংলাদেশ দলের জয়ের সাক্ষী হন ফেরদৌস। যুক্তরাজ্যের সাউদাম্পটনে বাংলাদেশ ও আফগানিস্তানের খেলা পরিবারের সবাইকে নিয়ে গ্যালারিতে বসে উপভোগ করেছেন। বাংলাদেশ দলের জয়ের সাক্ষী ফেরদৌস বলেন, ‘এ এক অসাধারণ অনুভূতি। যাঁরা দেখেছেন, শুধু তাঁরা উপলব্ধি করতে পারেন। ভাবিনি লন্ডনে এসে বিশ্বকাপ ক্রিকেট খেলা মাঠে বসে দেখব। যখন দেখতে গেলাম, প্রত্যাশিত খেলা না হওয়ায় খারাপ লাগছিল। তবে আমার মধ্যে অদ্ভুত আত্মবিশ্বাস কাজ করেছিল, বাংলাদেশ জয় বের করে আনবেই। সাকিব আল হাসান যেভাবে উইকেট নেওয়া শুরু করল, তখনই নিশ্চিত হয়ে যাই, জয় আমাদের সুনিশ্চিত।’

ফেরদৌস আরও বলেন, ‘পুরো মাঠে হাজার হাজার বাঙালি। চারদিকে লাল-সবুজ পতাকা উড়ছে। এবারের ভ্রমণটা কখনো ভুলব না। ভীষণ আনন্দ নিয়ে মাঠ ছেড়েছি।’